সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই পাত্তা দিল না বাংলাদেশ
ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ৩৮১ রানের পাহাড় গড়েছে, আইরিশদের ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একই দিনে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাশরাফিরা কেমন করেন, সেটি নিয়ে একটু যেন সংশয় দেখা দিয়েছিল। ডাবলিনে আজ সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাত্তাই পেল না বাংলাদেশের কাছে। ক্যারিবীয়দের ৮ উইকেটে হারিয়ে মাশরাফিরা বুঝিয়ে দিলেন, মূল মঞ্চে তাঁরা অন্য রকম।
কট্রেলকে বাউন্ডারি মেরে যখন দলকে জয়ের প্রান্তে পৌঁছে দিলেন সাকিব আল হাসান , তাঁর অভিব্যক্তি বলছিল, ‘জয়—এ আর এমন কী!’ মুশফিক-সাকিবের ফিনিশিংয়ে বাংলাদেশ সহজেই ২৬১ রান টপকে গেছে ঠিকই, তবে বড় কৃতিত্ব অবশ্যই বাংলাদেশের দুই ওপেনারের।
ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকার। পার্থক্যটা হচ্ছে, সিলেটে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে তামিম-সৌম্য ১৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন দ্বিতীয় উইকেটে। আজ সেটি হয়েছে উদ্বোধনী জুটিতে। ত্রিদেশীয় সিরিজে আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনিং জুটি এনে দিয়েছিল ৮৯ রান। জবাবে ক্যারিবীয়দের চেয়ে ভালো শুরু এনে দেন তামিম-সৌম্য। ২৬২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দুজনের উদ্বোধনী জুটি যোগ করে ১৪৪ রান। আর তাতেই যেন পরিষ্কার হয়ে যায় ম্যাচের গতিপথ। তামিম-সৌম্য সেই যে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, সেটি হারায়নি বাংলাদেশ।
আয়ারল্যান্ডে রওনা দেওয়ার আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ২০৮* ও ১০৬—দুর্দান্ত দুটি ইনিংস খেলে গেছেন সৌম্য। সেই ছন্দটা টেনে নিয়েছেন ডাবলিনে। সৌম্যসুলভ পুল, কাট, পেরিস্কোপ একেকটা ফুল হয়ে ফুটেছে ডাবলিনের ক্লনটার্ফে। বাঁহাতি ওপেনার ফিফটিও করেছেন রাজকীয় ভঙিতে, জেসন হোল্ডারকে পুল মেরে। এই পুলেই অবশ্য মৃত্যু হয়েছে তাঁর দারুণ ইনিংসটির। রোস্টন চেজের শর্ট বলটা ডিপ মিডউইকেট দিয়ে পুল করে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন ৭৩ রানে।
সৌম্য যখন স্ট্রোকের পসরা সাজিয়েছেন, তামিম এগিয়েছেন ধীর লয়ে। ছটফটানিমুক্ত পরিণত মস্তিষ্কে যেভাবে এগোচ্ছিলেন, তামিমের সেঞ্চুরি পাওনাই ছিল। কিন্তু তিনিও সতীর্থ ওপেনারের মতো সেটি ফেলে এলেন। গ্যাব্রিয়েলের বলে আউট হলেন ৮০ রান করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সাফল্য এতটুকুই। দুই ওপেনার দলকে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে দেওয়ার পর অনায়াসে সমাপ্তিরেখা ছুঁয়েছে সাকিব-মুশফিকের অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেটে তোলা ৬৮ রানের জুটি। প্রস্তুতি ম্যাচে রান পেয়েছিলেন। আজ অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংস খেলে সাকিব যেন আরেকবার বোঝাতে চাইলেন, কোনো বিতর্ক তাঁকে স্পর্শ করে না। মাশরাফি বিন মুর্তজা কাল ঠিকই বলেছিলেন, ‘ওর জন্য এটা বিগ ডিল না, কত দিন প্র্যাকটিসে ছিল না, কত দিন ম্যাচ খেলেনি, এসবে ওর সমস্যা হয় না।’ সাকিবের কাজটা সহজ করে দিতে সঙ্গী মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৩২ রানে।
আগে ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ বড় স্কোর পেতেই পারত। যেভাবে এগোচ্ছিল তাতে রানের পাহাড় না হলেও বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য দেওয়া কঠিন কিছু ছিল না তাদের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। হতে দেননি আসলে মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৪১ ও ৪৩—এই দুই ওভারের ৫ বলের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা আটকে দিয়েছেন ভালোভাবেই। এ ধাক্কায় স্লগ ওভারটা আর ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫০ ওভারে ক্যারিবীয়দের স্কোর ৯ উইকেটে ২৬১ রানের বেশি হয়নি, যেটি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা টপকেছেন অনায়াসে।
আরও পড়ুন...