কঠিন লক্ষ্যই তো দরকার বাংলাদেশের!

তামিমের সামনে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ। ছবি: লেখক
তামিমের সামনে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ। ছবি: লেখক
আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে জয়ের জন্য ৩০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করছে বাংলাদেশ।

জিততে হলে করতে হবে ৩০৮ রান। বাংলাদেশের জন্য ‘লক্ষ্যটা কঠিন, কঠিনেরেই ভালোবাসিলাম’ হওয়া উচিত। এবারের বিশ্বকাপ কবজির জোরের বিশ্বকাপ হবে বলেই সবার অনুমান। ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির একাদশই স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮১ রান তুলেছে প্রথমে ব্যাট করে। এদিকে বাংলাদেশকেও নিজেদের ব্যাটের জোর প্রমাণ দিতে হবে। প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড উলভস বা ‘এ’ দল ৮ উইকেটে করেছে ৩০৭ রান। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ৫৬ রান।

আইরিশ ‘এ’ দলের ওপেনার জেমস ম্যাককলাম রুবেলের বলে আউট হওয়ার আগে করেছেন ১০২ রান। ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ইনিংসের মতো এখানেও জোড়া সেঞ্চুরি হয়ে যাবেই বলে মনে হচ্ছিল সিমি সিং তাসকিন আহমেদের শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত। তাসকিন ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে ‘সফল’। রুবেল নিয়েছেন দুটি উইকেট। সাকিব, মিরাজ ও ফরহাদ রেজা একটি করে।

টসে হেরে বোলিংয়ে নামা বাংলাদেশকে আইরিশ ব্যাটসম্যানরা ভুগিয়েছে, নাকি মারাত্মক ঠান্ডা আবহাওয়া—বলা কঠিন । অবশ্য মাঠের আকারেরও একটা ভূমিকা আছে। দুদিকেই স্কয়ারের প্রান্তে মাঠ ছোট। ডাবলিন শহর থেকে অনেক দূরে, গ্রামের মাঝখানে বানানো হিলস ক্রিকেট ক্লাবের এ মাঠে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলে ছক্কা হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে এক দুবার বল পাশের বাড়ির সীমানাতেও গিয়ে পড়েছে। ভাগ্যিস এখানে বদমেজাজি বাড়িওয়ালা নেই!

বল হাতে নামেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। মাশরাফির বদলে টস করেছেন সাকিব আল হাসান। একটি উইকেট পেলেও রান বিবেচনায় সাকিবই দলের সেরা বোলার। ১০ ওভারে দিয়েছেন ৩০ রান। ইনিংসের একমাত্র মেডেন ওভারটিও তাঁর।

বাংলাদেশকে কনকনে ঠান্ডা আসলেই ভোগাচ্ছে। ব্যাটসম্যানরা যে গ্লাভস পরে খেলতে পারে, তা ভেবে বোলাররা আরও একবার ক্রিকেট খেলাটা ব্যাটসম্যানদের দিকে পক্ষপাতদুষ্ট কি না, সেই প্রশ্ন তুলতে পারে। ঠান্ডা বাতাস হাতের চামড়ার তিরের মতো বিঁধছে। এতটাই, অনুশীলনে ছুটে আসা বল লুফে নিতে গিয়ে সাকিবের হাতে গিয়ে লাগল। সাকিব ব্যথায় কঁকিয়েই উঠলেন। তবে ব্যথানাশক নয়; খুঁজলেন পেট্রোলিয়াম জেলি।

বোলিংয়ের পর সাকিবের জন্য সুযোগ থাকল ব্যাটিংয়েও কিছু করে দেখানোর। প্রতিবার তাঁকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে একটা ভালো দিক পাওয়া যায়। সাকিব মাঠে এমন কিছু করেন, বাকি সব থিতিয়ে আসে।

৪ উইকেটে ২৫৫ রান তোলার পরও সেই অর্থে আয়ারল্যান্ডের ইনিংসটা অনুমিত রেখায় যায়নি। রান তোলার তাড়ায় শেষ দিকে ব্যাটসম্যানরা ভুল শট খেলেছে। বাংলাদেশি বোলারদেরও ‘নাহ্‌, রানটা বেশি হয়ে যাচ্ছে, কিছু করা দরকার’ ভাবভঙ্গি দেখা গেছে ৪০ ওভার পেরোনোর পর। এমনিতে ঠান্ডা আর চোটের শঙ্কার কারণে খেলোয়াড়দের মধ্যে বাড়তি সতর্কতা ছিল। এর মধ্যেই যে কয়েকবার চার বাঁচাতে ফিল্ডাররা ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সরকারি ছুটির দিনে গ্যালারির এক প্রান্তে হাজির জনা পঞ্চাশেক দর্শক তাতেই খুশি।

৬ বোলার ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। প্রথম আঘাত হানা রুবেল ৯ ওভারে ৬৩ রান দিয়েছেন। আলোচনার জন্ম দিয়ে এই সিরিজে ফিরে আসা তাসকিনকে বাংলাদেশ পুরো সুযোগ দিয়েছে। তাসকিন ৩ উইকেট নিয়ে আত্মবিশ্বাস আরও একটু ফিরে পাবেন নিশ্চয়ই। তবে ১০ ওভারে দিয়েছেন ৬৬ রান। সঙ্গে ৬টি ওয়াইড বল বোঝাচ্ছে, তাসকিনের আরও একটু সময় সত্যিই দরকার।

তাসকিনের মতোই এই দলে যোগ হওয়া অতিরিক্ত চারের একজন ফরহাদ রেজা ১০ ওভারে দিয়েছেন ৬৬। ৪৪ রান দেওয়া মিরাজকে ৪ ওভার বল করানো হয়নি। সাব্বিরকে দিয়ে ৫ ওভার করানো বিশেষ পরিকল্পনার অংশ কি না, তার উত্তর সামনেই বোঝা যাবে। ৬ বোলারের মধ্যে কেবল সাব্বিরই উইকেটশূন্য, ওভারে ৭ রান করে দিয়ে পরিকল্পনাটিকে বিশেষ উৎসাহও জোগাতে পারেননি।