বিশ্বকাপ 'বুড়ো'রাও জেতে, কচিকাঁচারাও জেতে!

সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোহান কানহাই। ২০০৩ সালে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন বাংলাদেশের পেসার তালহা যুবায়ের। পরে অবশ্য ২০১১ বিশ্বকাপে কানাডার নিতিশ কুমার সেই রেকর্ডটি ভেঙে দেন। ফাইল ছবি
সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোহান কানহাই। ২০০৩ সালে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন বাংলাদেশের পেসার তালহা যুবায়ের। পরে অবশ্য ২০১১ বিশ্বকাপে কানাডার নিতিশ কুমার সেই রেকর্ডটি ভেঙে দেন। ফাইল ছবি
ক্রিকেট বিশ্বকাপ দুয়ারে দাঁড়িয়ে। চলছে রোমাঞ্চমাখা অপেক্ষা, চলছে স্মৃতিচারণাও। ফিরে দেখা বিশ্বকাপ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনের নতুন ধারাবাহিক। পঞ্চম পর্বে থাকছে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়সী ও কম বয়সী খেলোয়াড়দের রেকর্ডগাথা। লিখেছেন সঞ্জয় বসাক


ছয়বারের চেষ্টায় ৩৮ বছর বয়সে এসে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। নিজের শেষ বিশ্বকাপে এসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ কতখানি, ড্রেসিংরুমে দাঁড়িয়ে শচীনের উল্লাসেই সেটি ছিল স্পষ্ট। তবে শচীনের চেয়েও বেশি বয়সে বিশ্বকাপ জিতেছেন এমন ক্রিকেটারও আছেন। আবার চেহারা থেকে কৈশোরের ছাপ মুছে যাওয়ার আগেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, সেই নজিরও আছে। এর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ খেলা, সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা, রেকর্ড আছে আরও কতশত!


১৯৯৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যখন বরোদার মতিবাগ স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন নোলান ক্লার্ক, সেই মুহূর্তেই ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেদিন নেদারল্যান্ডসের এই ক্রিকেটারের বয়স কত ছিল জানেন? ৪৭ বছর ২৫৭ দিন! বিশ্বকাপে খেলা সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটারের রেকর্ডটি এই ডাচ ক্রিকেটারের দখলেই। এখানেই শেষ নয়, নোলান ক্লার্কের দখলে আছে আরও দুটি রেকর্ড। ওয়ানডে ক্রিকেট, এমনকি গোটা ক্রিকেট ইতিহাসেই সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষেক হওয়া খেলোয়াড় তিনি। নেদারল্যান্ডসের হয়ে পাঁচটি ওয়ানডে খেলেছেন এই বাঁহাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান।

সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোহাম্মদ তৌকিরের। ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলের অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামার দিন তৌকিরের বয়স ছিল ৪৩ বছর ৬০ দিন।

বিশ্বকাপ জেতা সবচেয়ে ‘বুড়ো’ অধিনায়ক যিনি, অনেকের চোখে তিনি ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম প্রভাবশালী অধিনায়ক। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন ইমরান। উৎসবের সেই দিনটিতে তাঁর বয়স ছিল ৩৯ বছর ৫ মাস ২০ দিন।

তবে ইমরানই সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ জেতা ক্রিকেটার নন। মাত্র ৬ দিনের জন্য রেকর্ডটি ভাঙতে পারেননি পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। রেকর্ডটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার রোহান কানহাইয়ের দখলে। প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের দিন রোহান কানহাইয়ের বয়স ছিল ৩৯ বছর ৫ মাস ২৬ দিন। ইমরান ও রোহানের মধ্যে একটি মিল অবশ্য আছে। শিরোপা জেতা ম্যাচ দুটিই ছিল তাঁদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী সেঞ্চুরিয়ানের নামটিও ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে খুবই পরিচিত। ২০১৫ বিশ্বকাপে হোবার্টে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার দিন শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশানের বয়স ছিল ৩৮ বছর ৪ মাস ২৮ দিন। সেই তুলনায় বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব যাঁর, তাঁর নামটা অপরিচিতই বটে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে লাহোরে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩৯ বছর ৪০ দিন বয়সে ২৯ রান খরচায় ৫ উইকেট পেয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শওকত দুকানওয়ালা।

বিশ্বকাপে কম বয়সে কৃতিত্ব দেখানো ক্রিকেটারদের প্রসঙ্গে আসা যাক। সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপের মঞ্চে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা ক্রিকেটার হলেন কানাডার নিতিশ কুমার। ২০১১ বিশ্বকাপে নাগপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ অভিষেকের দিন নিতিশের বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর ২৮৩ দিন!

সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ খেলার তালিকায় নাম আছে বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটারেরও। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে প্রথম মাঠে নামার দিন তালহা জুবায়েরের বয়স ছিল ১৭ বছর ৭০ দিন। নিতিশ কুমারের পর সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটার তালহা জুবায়েরই।

সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ জেতার সৌভাগ্য হয়েছে পাকিস্তানের আকিব জাভেদের। ১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতার সময় মাত্র ১৯ বছর বয়স ছিল দারুণ প্রতিভাবান এই পেসারের। মজার ব্যাপার হলো, সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ জেতার তালিকায় পরের দুজনও একই বিশ্বকাপে আকিব জাভেদেরই সতীর্থ ছিলেন। ২০ বছর বয়সী মঈন খান ও ২১ বছর বয়সী মুশতাক আহমেদও ইমরান খানের সেই দলের সদস্য ছিলেন।

সবচেয়ে কম বয়সে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ডটি জিম্বাবুয়ের প্রসপার উতসেয়ার। ২০০৭ বিশ্বকাপে দলকের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় উতসেয়ার বয়স ছিল ২১ বছর ১১ মাস ১৭ দিন।

আর সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার কৃতিত্বটি ভারতীয় কিংবদন্তি কপিল দেবের দখলে। ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ের দিন কপিলের বয়স ছিল ২৪ বছর ৫ মাস ১৯ দিন। কপিলের পর সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের তালিকায় পরের দুজনও কিংবদন্তি। ২০০৩ বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে তোলার দিন রিকি পন্টিংয়ের বয়স ছিল ২৮ বছর ৩ মাস ৪ দিন। আর ২০১১ সালে ভারতকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতানোর দিন মহেন্দ্র সিং ধোনির বয়স ছিল ২৯ বছর ৮ মাস ২৬ দিন।

আরও পড়ুন:
বিশ্বকাপের সবচেয়ে দুর্ভাগা ক্রিকেটার?
এমন হবে, ভাবতে পারেনি কেউ!
চার ম্যাচ খেলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন!
গাভাস্কার যেদিন নিজেই আউট হয়ে যেতে চেয়েছিলেন!