টি-টোয়েন্টিকে জটিল করে ফেলেছি
>টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের রসায়ন রবি ফ্রাইলিঙ্কের কাছে পানির মতোই সহজ। ব্যাট-বল হাতে নিয়েই বুঝে যান, কী করতে হবে।
স্লিমিং ট্যাবলেট খেয়ে একবার ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়েছিলেন। এরপর থেকে যেকোনো ওষুধেই রবি ফ্রাইলিঙ্কের একটু ভীতি কাজ করে। কাল তো কী একটা ট্যাবলেট জিবে দিয়েই মুখ বিকৃত করে ফেললেন! হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ায় এখন ওষুধ খাওয়া আর ফিটনেস ট্রেনিংই কাজ চিটাগং ভাইকিংসের দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডারের।
তারই একফাঁকে কাল সকালে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে কথা বললেন নিজের ক্রিকেট–জীবন আর ক্রিকেট-ভাবনা নিয়ে। দক্ষিণ আফিকার হয়ে মাত্র তিনটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেললেও এই সংস্করণের ক্রিকেট নিয়ে তাঁর আছে অসাধারণ এক দর্শন—কঠিন কাজটাকে সহজভাবে করো।
প্রশ্ন: হ্যামস্ট্রিং চোটের জন্য এক ম্যাচ খেলতে পারেননি। এখন কী অবস্থা?
রবি ফ্রাইলিঙ্ক: বল করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে চোটটা পেলাম। চেষ্টা করে যাচ্ছি দ্রুত মাঠে ফেরার। সৌভাগ্যক্রমে আগেই কিছু ম্যাচ জিতে থাকায় আমরা ভালো একটা জায়গায় আছি। আশা করছি এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ আমি মাঠে ফিরতে পারব।
প্রশ্ন: ভাইকিংসের শহর চট্টগ্রামে খেলতে পারলে নিশ্চয়ই ভালো লাগত?
ফ্রাইলিঙ্ক: তা তো বটেই। প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ২ ওভার বল করতে পেরেছি। খুব চেয়েছিলাম ওই ম্যাচেই মাঠে ফিরতে, ব্যাটিংয়ের সময় ব্যাট করতে। প্যাডও পরে বসে ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম ম্যাচটা আমাদের হাত থেকে ছুটে যাচ্ছে, তখন আর ঝুঁকি নিইনি। শুধু শুধু পা-টাকে আরও কষ্ট দিয়ে লাভ কী!
প্রশ্ন: বিপিএলে এসেই ভালো খেলা শুরু করলেন, ম্যাচ জেতাতে লাগলেন। অপরিচিত কন্ডিশনে কীভাবে এ রকম ‘ওয়ান ম্যান শো’ দেখালেন?
ফ্রাইলিঙ্ক: ‘ওয়ান ম্যান শো’ বলব না। আমি শুধু ম্যাচ শেষ করে আসতে চাই, এর বাইরে পুরো দলই ভালো কিছুর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। বাংলাদেশ আমার ভালো লেগেছে এবং ভাইকিংস পরিবারেও আমি দারুণ উপভোগ করছি।
প্রশ্ন: কিন্তু ভিন্ন কন্ডিশনে শুরুতেই এভাবে মানিয়ে নেওয়াটা তো ব্যতিক্রম...
ফ্রাইলিঙ্ক: হ্যাঁ, কন্ডিশন একটু ভিন্ন। তবে চট্টগ্রামের উইকেট বেশ ভালো। বোলিং করা কঠিন এখানে, বিশেষ করে ফ্লাড লাইটের নিচে যখন শিশির পড়ে। ঢাকার উইকেট একটু মন্থর। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও কিছু মাঠ আছে, যেখানে উইকেট মন্থর। সেখানেও সব উইকেট বাউন্সি নয়। সিলেটে আমি খেলিনি। তবে খেলা দেখে মনে হয়েছে, ওখানেও চট্টগ্রামের মতোই ব্যাটিং উইকেট ছিল।
প্রশ্ন: সাত ম্যাচে পাঁচ ইনিংস খেলে একবার মাত্র আউট। ১১৩ রান করে ৭২-ই চার-ছক্কায়। মাঠে নেমেই এ রকম ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করেন কীভাবে?
ফ্রাইলিঙ্ক: কাজটা সহজ নয়। অনুশীলনে এ নিয়ে কাজ করি। চাপের মধ্যে যতটা সম্ভব নির্ভার থাকার চেষ্টা করি। যত নির্ভার থাকা যায়, ততই কাজটা সহজ হয়ে ওঠে। চাপ নিয়ে নিলেই সর্বনাশ। শেষ দিকে ব্যাটিং, বোলিং যেটাই করতে হোক, আমি চেষ্টা করি মাথা ঠান্ডা রাখতে। আর উইকেট যখন ব্যাটিং করার জন্য কঠিন হবে, আপনাকে মৌলিক বিষয়গুলোর ওপরই ঠিক থাকতে হবে। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে করার চেষ্টা করতে হবে। আমি তো সব সময় বলি, আমরা ক্রিকেটাররাই টি-টোয়েন্টিটা জটিল করে ফেলেছি। দেখা গেল যখন মৌলিক কাজগুলো করলেই চলছে, তখনো আমরা চোখধাঁধানো কিছু করতে যাই। আমার নীতি হলো, যখন কাজটা কঠিন, তখন সেটি সহজভাবে করো। আমার সৌভাগ্য যে এটা কাজে লাগছে।
প্রশ্ন: অনেক বড় তারকা থাকা সত্ত্বেও টুর্নামেন্টের শুরুর সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন আপনি। নিশ্চয়ই খুব উপভোগ করেছেন বিষয়টা?
ফ্রাইলিঙ্ক: দেখুন, আমি কখনোই বড় নাম নিয়ে ভাবি না। আমার মনে হয় না তারাও এটা নিয়ে ভাবে যে তারা অনেক বড় খেলোয়াড়। আপনার কাজ দলের জন্য ভালো খেলা। আমার এটা হলেই চলে। আমি দলকে ভালো ফল করতে সাহায্য করি। সবাই-ই এই চেষ্টা করে। দলে সবাইকেই কোনো না কোনো ভূমিকা রাখতে হয়। তাদের মধ্যে হয়তো আমার নামটাই শিরোনামে চলে এসেছে।
প্রশ্ন: বয়স ৩৪ হয়ে গেছে, অথচ এখন পর্যন্ত আপনার কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বলতে মাত্র তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। কোনো আফসোস?
ফ্রাইলিঙ্ক: আফসোসের কিছু নেই। আমি সব সময় আমার সেরাটা দিয়ে সবকিছু করার চেষ্টা করেছি। এ রকম কিছু ভালো খেলোয়াড় সব সময়ই থাকে, যারা প্রতিপক্ষ বিবেচনা বা একই সময়ে থাকা অন্য খেলোয়াড়দের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বেশি খেলতে পারে না। দলে আসা বা না আসাটা আমার হাতে নেই। আমি শুধু নিজের কাজটাই ঠিকভাবে করতে পারি। যে কয়টা ম্যাচ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছি, তার জন্যই বরং আমি কৃতজ্ঞ। ওটা তো আর কেউ আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে পারবে না। এটা আমার অর্জন। যে দলের হয়েই খেলি, আমি সেরাটা দিতে চেষ্টা করি। সেটা ক্লাবের হয়ে হোক, বিপিএলেই হোক বা আমার দেশের হয়ে।
প্রশ্ন: মাঝে কলপাক চুক্তিতে ইংল্যান্ডে খেলতে গেলেন। ঠিক কী কারণে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন?
ফ্রাইলিঙ্ক: নিউক্যাসলের হয়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলাম ইংল্যান্ডে। পরে অন্য দলেও খেলেছি। আমার জন্য ওটা ছিল আরেকটি সুযোগ। তা ছাড়া ক্রিকেট খেলার জন্য যা করার তা তো করতেই হবে। আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সে রকম ছিল। আমার চুক্তিটা ছিল ওই মৌসুম এবং তার পরের মৌসুমের মাঝামাঝি পর্যন্ত। কিন্তু এক মৌসুম শেষ হতেই নিয়ম বদলে গেল। কলপাক চুক্তির জন্য একজন খেলোয়াড়কে কিছু না কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হবে। আমি সে নিয়মের মধ্যে পড়লাম না। সে জন্য দেশে ফিরে লায়নসে যোগ দিলাম।
প্রশ্ন: ল্যান্স ক্লুজনারের মতো একজন লোয়ার অর্ডার খুঁজে পাওয়ার আশাতেই আপনাকে দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি দলে নেওয়া হয়েছিল...
ফ্রাইলিঙ্ক: আসলে ল্যান্স ক্লুজনার তেমনই একজন, যাঁকে আমি সব সময় অনুসরণ করেছি। তাঁর খেলার ধরনের সঙ্গে আমার খেলার একটা যোগসূত্র খুঁজে পাই। সবাই-ই চায় ল্যান্সের মতো বল পেটাতে এবং তাঁর মতো করে খেলা শেষ করে আসতে। আমিও তা-ই চেয়ে এসেছি সব সময়। তিনিই আমার আদর্শ।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর কেউ আছেন, যাঁকে আপনি অনুসরণ করেন?
ফ্রাইলিঙ্ক: ফ্লিনটফ, অসাধারণ এক ক্রিকেটার। এ রকম ক্রিকেটারদের কথা যদি চিন্তা করেন, একজন অলরাউন্ডার হিসেবে অনুসরণ করার জন্য এ দুজনই তো সেরা!