এক ফ্রাইলিংকেই চিটাগংয়ের কাছে হার ঢাকার
>ম্যাচের ভাগ্য হেলে পড়েছে কখনো ঢাকার দিকে আবার কখনো চিটাগংয়ের দিকে। ম্যাচটায় জয়ই দেখছিল ঢাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক রবি ফ্রাইলিংকের কাছেই হেরে গেল তারা। এই প্রোটিয়া ক্রিকেটারের শেষ ওভারের তিনটি ছক্কা ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৩ উইকেটের দারুণ এক জয়ে এনে দিয়েছে চিটাগংকে।
বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটস আর চিটাগং ভাইকিংসের ম্যাচটি 'আগুনে' হবে বলেই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ঢাকার মোট সংগ্রহ কিছুটা হলেও জল ঢেলে দিয়েছিল নিরপেক্ষ দর্শকদের আগ্রহে। কিন্তু লড়াইটা দুর্দান্ত হয়েছে। ম্যাচের পেন্ডুলামটা দুই দিকেই হেলেছে। একপর্যায়ে জয়টা নিশ্চিত করেই দেখছিল ঢাকা। কিন্তু তরুণ মোহর শেখের শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা মেরে চিটাগংকে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছেন তাদের 'ম্যাচ উইনার' দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার রবি ফ্রাইলিংক। ৩ উইকেটের এই জয়ে বিপিএলে পয়েন্টে ঢাকাকে ছুঁয়ে ফেলল চিটাগং।
১৪০ রানের লক্ষ্যমাত্রা সামনে নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরুতেই উইকেট হারায় চিটাগং। আন্দ্রে রাসেলের বলে শুভাগত হোমের দারুণ এক ক্যাচে ফিরে যান আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ। এরপর ক্যামেরন ডেলপোর্ট আর তরুণ ইয়াসির আলীর জুটি চিটাগংকে পথেই এনেছিলেন। ৩০ রানে ফেরেন ডেলপোর্ট, সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে। ইয়াসির ১৫ রান করে ফেরেন ওই সাকিবের বলেই। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম প্রথমে দাসুন শানাকা ও পরে মোসাদ্দেককে সঙ্গে নিয়ে লড়াইটাকে জারি রেখেছিলেন। কিন্তু মুশফিক ২২ রানের বেশি করতে পারেননি। রুবেলের বলে নারাইনের ক্যাচ হন চিটাগংয়ের তারকা ব্যাটসম্যান।
মোসাদ্দেক অবশ্য এক প্রান্ত আঁকড়ে রেখে লড়ে গেছেন। সাকিবের বলে নাঈম হাসান ফিরলে চিটাগংয়ের জন্য পথচলাটা কঠিনই হয়ে যায়। মোসাদ্দেক ৩৩ রান করে এমন একটা সময় রান আউট হয়ে যান, যখন দলের তাঁকে বেশি প্রয়োজন। এই সময়টায় হারটা প্রায় নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল চিটাগংয়ের। কিন্তু ফ্রাইলিংকের হিসাবটা ছিল ভিন্ন। মাত্র ১০ বলে ২৫ রান করে ঢাকাকে জয়-বঞ্চিত করেন এই প্রোটিয়া। তাঁর ইনিংসে ছিল মাত্র তিনটি ছক্কা। কিন্তু এই তিনটি ছক্কাই একেবারে আসল সময়ে। শেষ ওভারে চিটাগংয়ের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। মোহর শেখের প্রথম বলটিতে এক রান নিয়ে ফ্রাইলিংককে স্ট্রাইক দেন সানজামুল ইসলাম। এর পরের গল্পটা পুরোপুরি ফ্রাইলিংকের। দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকান ফ্রাইলিংক। তৃতীয় বলে দারুণ রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে ২ নিয়েই চতুর্থ বলে মারেন আরেক ছক্কা। জয়টা যখন পুরোপুরি চিটাগংয়ের আয়ত্তে ঠিক তখনই শেষটাও করেন বিশাল এক ছক্কায়।
সাকিব ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৬ রান খরচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। কেবল বাংলাদেশ জাতীয় দলই নয়, যেকোনো দলের জন্য, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাকিবের বোলিংটা কত প্রয়োজনীয়, সেটি আজ নতুন করেই দেখিয়ে দিলেন এই বাঁ হাতি। কেবল সাকিবই নন। ঢাকার বোলাররা আজ জান উজাড় করেই দিয়েছেন। সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল, রুবেল হোসেন এমনকি তরুণ মোহর শেখ—চিটাগংকে চাপে রেখেছিলেন সবাই। দলের ফিল্ডিংটাও হয়েছে বোলিংয়ের মতোই দুর্দান্ত। কিন্তু মোহরের শেষ ওভারটাই শেষ করে দিল ঢাকাকে।
খুব নামজাদা খেলোয়াড় নেই চিটাগংয়ের। ঢাকার তুলনায় তো নয়ই। কিন্তু সিলেট সিক্সার্স কিংবা রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে তুলনায় রীতিমতো ফিকে মনে হবে চিটাগংকে। কিন্তু সে দলটাই এবার দুর্দান্ত বিপিএলে। আসলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নামজাদা খেলোয়াড়ের চেয়েও যে ম্যাচ উইনার আর ইউটিলিটি ক্রিকেটারের বেশি প্রয়োজন, সেটি চিটাগং প্রমাণ করেছে। চিটাগংকে নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা এবার বাজি ধরতেই পারেন। তাদের যে আছে একজন ফ্রাইলিংক!