ওয়ার্নারকে দর্শক বানিয়ে আফিফই চিত্তাকর্ষক
মাথা হেঁট করে সাব্বির রহমান যখন সাজঘরে ফিরছিলেন, সিলেট সিক্সার্সের স্কোরটাকে আরও নতজানু লাগছিল। ফাঁকা গ্যালারির মতোই হাহাকার সিলেটের স্কোরবোর্ডে। ৬ রান তুলতেই নেই তিন উইকেট। তৃতীয় ওভারেই পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে নামতে হলো আফিফ হোসেনকে।
এমন পরিস্থিতিতেও আফিফ পুরো খোলসের ভেতরে ঢুকে রইলেন না। নিজের দ্বিতীয় স্কোরিং শটে ছক্কা হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তাঁর লক্ষ্যটা কী। পরের ওভারে সিকান্দার রাজাকে যে রিভার্স সুইপে চারটা মারলেন, চোখে লেগে থাকল অনেকক্ষণ। ২৮ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলার পথে এমন সুইপ শট খেললেন বেশ কয়বার। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় ফিফটিটি পেলেন না ৫ রানের দূরত্বে। তবে ১৯ বছর বয়সী এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার বাংলাদেশের ক্রিকেটের আগামীর জন্য একটু হলেও সুখবর তো শোনালেন।
চতুর্থ উইকেটে ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে ৭১ রানের জুটি, তাতে ওয়ার্নারের অবদান ২০, আফিফের ৪৫। ওয়ার্নারের পরে নেমেও ওয়ার্নারের দ্বিগুণ গতিতে রান তুলেছেন। আফিফকে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে দেখেই ওয়ার্নার চলে গেলেন দর্শকের ভূমিকায়। আফিফকেই পুরো স্বাধীনতা দিলেন নিজের মতো করে খেলতে। ৫টি চার ও তিন ছক্কায় আফিফ এদিন ওয়ার্নারের চেয়েও চিত্তাকর্ষক হয়ে থাকলেন।
শুরুর সেই বিপর্যয় থেকে দলকে উদ্ধার পেয়েছিল বলেই সিলেট ১৬৮ রানের পুঁজি পেল। ৫ রানের জয়টা সেই সংগ্রহের মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নিকোলাস পুরানকে ম্যাচ সেরার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ৩২ বলে ৫২ রানের ইনিংসটার জন্য। তবে আফিফও ছিলেন এর যোগ্য দাবিদার।
পুরস্কার না পেলেও সংবাদ সম্মেলনে এলেন এই তরুণ। তিন উইকেট পড়ার পরও কীভাবে এতটা সাহসী হলেন, সেই গল্প বলছিলেন, ‘ও রকম কোনো সিদ্ধান্ত (শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা) হয়নি। আমি চেয়েছি আমার নিজের খেলাটা খেলার। আমি সব সময় যেটা চেষ্টা করি। ওভাবেই খেলেছি। বল দেখে শট খেলেছি, ভালো বলে সিঙ্গেলস নেয়ার চেষ্টা করেছি, বাজে বলগুলো চেষ্টা করেছি বাউন্ডারি মারতে।’
ওই অবস্থায় উইকেটে অধিনায়ক ওয়ার্নারকে পাওয়াটাও কাজে দিয়ে বলে জানালেন, ‘ওয়ার্নারের সঙ্গে ব্যাটিং করতে পারাটা তো অবশ্যই খুব ভালো লাগার ছিল। এত বড় একজন ব্যাটসম্যান, তাঁর সঙ্গে ব্যাটিং করছি! এতে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গিয়েছিল। ও অনেক কিছু ছোটখাটো পরামর্শ দিচ্ছিল ব্যাটিংয়ের সময়ে। যেগুলো খুব কাজে লেগেছে।’
এই ম্যাচ দিয়ে সিলেটও জয়ের ধারায় এল। এটা আরও ভালো লাগছে আফিফের। এমন ভগ্নদশা থেকে জিততে পারাটা যে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে দলকে, ‘অবশ্যই আমাদের জন্য এটা অনেক কাজে দেবে । আমরা প্লাওয়ার প্লেতে ভালো অবস্থানে ছিলাম না। সেখান থেকে ভালোভাবে ফিরে এসেছি ম্যাচে। এটা অনেক ইতিবাচক একটা ব্যাপার, যেটা সামনের ম্যাচে কাজে দেবে।’
মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার হলেও বোলিংটাও বেশ পারেন আফিফ। বিপিএলে তো আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন বোলিং দিয়েই। এবার অবশ্য তেমন সুযোগ পাচ্ছেন না বোলিংয়ের। বাঁ হাতে ব্যাটিং আর ডান হাতে স্পিন করা দোহাতি আফিফ দুই ম্যাচে মাত্র দুই ওভার পেয়েছেন বল করার জন্য। ওয়ার্নার নিশ্চয়ই দলের এ তরুণকে আরও বেশি সুযোগ দিতে চাইবেন আজকের ম্যাচের পর।
আফিফ ম্যাচ সেরা হননি, তবে আজকের বিপিএলে দিনের সেরা হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়াই যায় আলাদা করে।