তিনিও আড়াল করেছেন যন্ত্রণা
>১৫০ বল খেলে ১৪৪ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। রানের হিসাবে তো বটেই, কিন্তু পরিসংখ্যান সব সময় যা বোঝাতে পারে না, সেই বীরত্বেও মুশফিকের ইনিংস সবার আগে
লড়াকু? সে তো সব সময়। শেষ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত হার না-মানা, তাও প্রমাণ করছেন বহুবার। আবার দলকে জয়ের মুখে তুলে জয়বঞ্চিত করার দায়ও আছে। কিন্তু একটা বিষয়ে কোনো বিতর্ক হয় না, দলের প্রতি আত্মনিবেদনে মুশফিকুর রহিমের জুড়ি মেলা ভার। এখনো সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করা ক্রিকেটারটির নাম মুশফিক। এমনকি দলের ঐচ্ছিক ছুটির দিনে ক্রিকেট সরঞ্জামের কফিন ঠেলে নেটে হাজির হওয়া একমাত্র ক্রিকেটারটির নামও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ইনিংসটি বাকি সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেল যেন। মুশফিক নিজেই হতাশ হয়ে পড়লে নিজের এই ইনিংসের ভিডিও দেখে বারবার খুঁজে নিতে পারবেন অনুপ্রেরণা। কী এক অবিশ্বাস্য ইনিংস খেললেন তিনি!
তামিম ইকবালের আত্মত্যাগের ছবিতে কিছুটা আড়ালে চলে যাচ্ছে তাঁর গল্পটাও। অথচ এই ম্যাচে মুশফিক নাও খেলতে পারেন, অন্তত কিছুটা হলেও সংশয় আছে, এমন ভাসা–ভাসা খবর পাওয়া যাচ্ছিল। পাঁজরে নাকি ব্যথা। কিন্তু মুশফিক শুধু মাঠে নামলেন না, নামতে হলো প্রথম ওভার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। আরব আমিরাতের অচেনা গরমে খেলতে হলো ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত। এর মধ্যে দল বেশ কয়বার ঝড়ে পড়েছে। কিন্তু একদিকে হাল ধরে রেখেছিলেন মুশফিক।
মাঠে নেমেই দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতে হলো। দল তখন এক অর্থে ৩ রানে হারিয়ে ফেলে তিন ব্যাটসম্যানকে। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রানের চাকা সচল রেখে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন। তিন বল বাকি থাকতে আউট হওয়ার আগে মুশফিকের নামের সঙ্গে যোগ হয়েছে ১৪৪ রান, যা তাঁর ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসও। শুধু তা–ই নয়, একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এশিয়া কাপে দুই সেঞ্চুরির মালিক হয়ে গেলেন তিনি।
কিন্তু আজকের সেঞ্চুরিটার মাহাত্ম্য যে অনেক বেশি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ ২৬১ আর মুশফিক ১৪৪। স্কোর বোর্ডেই তো বোঝা যাচ্ছে মুশফিকের ইনিংসের গুরুত্ব। মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে ১৩১ রানের জুটিটা না গড়লে তামিমের সেই বহু দিন মনে রাখার মতো স্মৃতি জন্ম দেওয়ার সুযোগই হয়তো হতো না। মুশফিক ছিল বলেই বাংলাদেশ নবম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তামিমকে আবার পাঠিয়েছে।
১৫০ বল খেলেছেন। প্রায় ৩০০ বলের ইনিংসে সঙ্গ দিতে হয়েছে। চার ঘণ্টার মতো ছিলেন উইকেটে। আরব আমিরাতের অসহ্য গরমে ঘেমে–নেয়ে একাকার। মানসিক চাপ তো ছিলই, শরীরও কুলিয়ে উঠছিল না একসময়। বারবার স্ট্রেচিং করছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল পেশিতে ধরছিল টান। এর সঙ্গে ছিল সকালের পাঁজরের ব্যথা। টিভির পর্দায় বারবার ভেসে উঠছিল তাঁর যন্ত্রণাকাতর মুখ। তবু হাল ছাড়েননি। একাই টেনে নিয়ে যাওয়ার মূল্য চুকাতে হয়েছে। পরে উইকেটকিপারের গ্লাভস পরে আর নামতে পারেননি। উইকেটের পেছনে দায়িত্বটা সামলেছেন লিটন দাস।
মুশফিক আসলে ম্যাচটাকে প্রথম ৫০ ওভারেই শেষ করে দিয়েছেন। তাই পরের ৫০ ওভারে তাঁর উপস্থিতি না থাকার পরও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার তাই উঠল মুশফিকের হাতেই।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ৫ সেঞ্চুরি | ||||
ব্যাটসম্যান | রান | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু | সাল |
মোহাম্মদ আশরাফুল | ১০৯ | আরব আমিরাত | লাহোর | ২০০৮ |
অলক কাপালি | ১১৫ | ভারত | করাচি | ২০০৮ |
মুশফিকুর রহিম | ১১৭ | ভারত | ফতুল্লা | ২০১৪ |
এনামুল হক | ১০০ | পাকিস্তান | মিরপুর | ২০১৪ |
মুশফিকুর রহিম | ১৪৪ | শ্রীলঙ্কা | দুবাই | ২০১৮ |
আরও পড়ুন...