ইয়ংমেন্সের পুনর্জীবনে আলোর বন্যা
এত আলো! আহ্, কত দিন পর!
ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ক্লাবের আঙিনায় দাঁড়ালে এখন যে কারোরই এমন অনুভূতি হবে। হওয়ারই কথা। ক্লাবজুড়ে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। যা দেখে ভালো না লেগে পারেই না! বেশি ভালো লাগবে এই ভেবে, একসময়ের সাড়া-জাগানো দলটি ১০ বছর আগে পেশাদার লিগ চালুর পর এই প্রথম ফিরে এল শীর্ষ লিগে।
মূল স্রোতে ফিরতে ইয়ংমেন্সের পথ খোলা ছিল একটিই। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে সেরা দুইয়ে থাকা। গতবার যেখানে দলটি পড়ে গিয়েছিল অবনমন-শঙ্কায়, এবার সেরা দুইয়ে থাকার লক্ষ্যটাই মনে হয়েছে বাড়াবাড়ি। অথচ সেই দলটিই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে পরশু! এমন আনন্দের দিনে স্বাভাবিকভাবেই ইয়ংমেন্স ক্লাবে এখন আলোর বন্যা, নতুন আশার ঝলকানি। যা পেছনে টেনে নেবে সবাইকে, যখন ইয়ংমেন্স ক্লাব শীর্ষ ফুটবলে কখনো কখনো কাঁদিয়ে ছাড়ত বড় দলকেও।
এই ক্লাবের জল-হাওয়ায় বড় হয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন অনেকেই। তাঁদেরই একজন জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক মোহাম্মদ পনির। ১৯৮৮-৯১ সালে এই দলে খেলছেন, অধিনায়কও ছিলেন। ’৮৯-এ প্রথম বিভাগে নাম লিখিয়েই ইয়ংমেন্স চতুর্থ। সেই স্মরণীয় লিগে ইয়ংমেন্সকে তুলে ধরেন মিজান, উত্তম, পীযূস, নুরুল হক মানিক, পনির, মহিলা দলের বর্তমান কোচ গোলাম রব্বানি ছোটনরা।
এমন অর্জনের বছরে মোহামেডানকে হারানোর সুখস্মৃতিও আছে ইয়ংমেন্সের। পনির যা কখনো ভুলবেন না, ‘মালু ভাইয়ের মতো সংগঠক ছিলেন তখন, ছিলেন মেজর এনাম ভাই। তাঁদের হাত ধরেই ইয়ংমেন্সের এগিয়ে চলা। কিন্তু ক্লাব থেকে তাঁদের বিদায় গোটা দলটিকেই বিচ্ছিন্ন করে দেয় মূল স্রোত থেকে।’
জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার হাসান আল মামুনের স্মৃতিতেও ইয়ংমেন্স ক্লাব স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মনে পড়ে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমের কথা। আমিন রানা, সোহেল আল মাসুম, রবিন, আসকর বাবু, আসিফ, ধনুদের সঙ্গে তিনিও খেলেছেন তখন।
ইয়ংমেন্সের ঘুরে দাঁড়ানোর এমন দিনে হাসান আল মামুন দারুণ খুশি। তাঁর কথা, ‘শুভকামনা।’ সঙ্গে চাওয়া, ‘ওরা টিকে থাকুক।’ অতীতে ফিরে গিয়ে আরও বলেন, ‘৯৫ সালে আমি আবাহনীতে চলে যাই। সে বছর ইয়ংমেন্স হারিয়ে দেয় আবাহনীকে।’ তাঁর মনে পড়ে, ‘খেলোয়াড়দের জন্য রান্না করে পাঠাতেন মালু ভাইয়ের স্ত্রী। ক্লাব ফুটবলারদের টাকা তেমন দিতে পারত না। তবে খেলোয়াড়দের সুন্দরভাবে পরিচর্যা করত।’
ইয়ংমেন্স ক্লাবের বড় পরিচয় এটাই। খেলোয়াড় তৈরির কারখানা ছিল একসময়। সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে কবেই। ইয়ংমেন্স ক্লাব দখল হয়ে যায় মাঝখানে। তবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন এসে দলটাকে আবার শীর্ষে তুলে আনার চেষ্টা করেন। প্রথম লক্ষ্যটা পূরণ হয়েছে। তবে অনেকেই বলছেন, ইয়ংমেন্স আবার যেন হারিয়ে না যায়!
ক্লাব কর্মকর্তাদের কাছে হাসান আল মামুনের তাই দাবি, ‘শক্তিশালী একটা স্কোয়াড করে আবার ওরা সাড়া ফেলুক, এটাই চাই।’ তবে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান বাস্তবতায় উচ্চাভিলাষী না হয়ে টিকে থাকার ওপরই জোর দিচ্ছেন বেশি, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য থাকবে পেশাদার লিগ থেকে যেন নেমে না যাই। এই পর্যায়ে থাকতে যা কিছু করা দরকার, সবই করব আমরা।’
চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রিমিয়ারে দলটাকে তুলে এনে ইয়ংমেন্সের অধিনায়ক মোহাম্মদ ফারুক খুবই উচ্ছ্বসিত, ‘আমরা অনেক কষ্ট করেছি। সেটারই ফল পেয়ে ভালো লাগছে। আশা করি ইয়ংমেন্স সামনে আরও ভালো করবে।’