লিটনের কথাতেই ওপেনিংয়ে নাজমুল
নাজমুল হোসেনের ওয়ানডে অভিষেক ২০১৮ সালে, এশিয়া কাপে। প্রথম ম্যাচে চোটে পড়া তামিম ইকবালের জায়গায় খেলেছিলেন, ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন লিটন দাসের সঙ্গে। ওই টুর্নামেন্টে ৩ ম্যাচ খেলার পর এ সংস্করণ থেকে বাদ পড়া নাজমুল দলে ফেরেন ২০২০ সালে। ওই বছর ও পরের বছর মিলে খেলেন ৫টি ম্যাচ, এরপর বাদ আবার। সর্বশেষ একাদশে ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ সিরিজে। তবে গতকাল দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সবকটিতেই তিন নম্বরেই খেলেছেন তিনি।
সেই নাজমুলকেই দ্বিতীয় ম্যাচে পাঠানো হলো ওপেনিংয়ে। এমন সিদ্ধান্তের পেছনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই বাঁহাতি স্পিনারের ‘অবদান’ আছে, সেটি অনুমান করাই গিয়েছিল। ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে সেটিই নিশ্চিত করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে বললেন, নাজমুলকে তাঁর সঙ্গে ওপেনিংয়ে পাঠানোর পরিকল্পনাটা এসেছে মূলত লিটনের কাছ থেকে।
সেটি কীভাবে, তামিম ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘আমি বলব ওটা ছিল লিটনের অসাধারণ একটা সিদ্ধান্ত। ফিল্ডিংয়ের শেষের দিকে ও এসে আমাকে বলল, “ভাই যদি আপনারা দুইজন ওপেন করেন তাহলে কেমন হয়?” বাঁহাতি বোলাররা ওদের অস্ত্র ছিল, এজন্যই তার এটা বলা। আমি মনে করি ওর সিদ্ধান্তটা অসাধারণ ছিল।’
সে কৌশল কাজেও দিয়েছে বাংলাদেশের। শুরুতেই উইকেট হারায়নি তারা, তামিমের সঙ্গে নাজমুলের উদ্বোধনী জুটিতেই ওঠে ৪৮ রান। তামিম বলছেন, এ উইকেটে ৪৮ রানের জুটির মূল্যই অনেক, ‘বল অনেক ঘুরছিল, ফলে ডানহাতিদের জন্য কঠিন হতো। আমি আর শান্ত (নাজমুল) উইকেটে গিয়ে আলোচনা করছিলাম, রান কম হলেও ক্ষতি নেই। ওদের ওভারগুলো (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি স্পিনার) শেষ হয়ে গেলেও আমাদের হাতে ৩০ ওভারের মতো থাকবে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের ৪৮ রানের একটা ভালো জুটি হয়েছে। ৪৮ রান দেখতে কম লাগতে পারে, তবে এই উইকেটে ৪৮–ই ১০০ রানের তো।’
তামিম ম্যাচ শেষ করে এলেও নাজমুল অবশ্য ফেরেন আগেভাগেই। বেশ আলগা শট খেলেই আউট হন এ বাঁহাতি। এমনিতেও সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রেকর্ড গড়া এনামুল হককে বসিয়ে রেখে কেন এখনো কোনো ফিফটি না থাকা নাজমুলকেই খেলানো হচ্ছে, সে আলোচনাও আছে। অধিনায়ক তামিম অবশ্য আগের ম্যাচেই এ সিদ্ধান্তের পক্ষে নিজেদের যুক্তি দেখিয়েছেন। আবারও নাজমুলকেই ‘ডিফেন্ড’ করলেন তামিম, ‘শান্ত (নাজমুল) যতক্ষণ ব্যাটিং করেছে ভালো করেছে। এসব উইকেটে ব্যাটিং দেখে কিছু বিচার করা উচিত নয়। উইকেট খুবই কঠিন ছিল। মিরপুরের চেয়েও খারাপ উইকেট। এ উইকেটে কোন ডেলিভারিতে আউট হয়ে যাবেন, আপনি জানেন না। আসলে এখানে ১৫০ আর ২৫০-এর খেলা। (নাজমুল) যতক্ষণ ব্যাটিং করেছে ভালো করেছে।’
নাজমুলকে ওপেনিংয়ে পাঠানোর আগে, ম্যাচ শুরুর আগেই বাংলাদেশ নিয়েছে আরেকটি ‘কৌশলগত’ সিদ্ধান্ত। পেসার তাসকিন আহমেদের জায়গায় খেলানো হয়েছে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনকে। টসের সময়ই এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ম্যাচশেষে তামিম বললেন আরেকটু বিস্তারিত, ‘তাসকিনের বাদ পড়াটা খুবই দূর্ভাগ্যজনক। ও খুবই ভালো বোলিং করছে। কিন্তু কাল (পরশু) যখন উইকেট দেখতে এলাম, আমাদের মনে হয়েছে দলে হয়তো একজন বাড়তি স্পিনার দরকার। সঙ্গে একটা বাড়তি ব্যাটসম্যান থাকলেও ভালো হয়। এই উইকেটে পর পর দুটি উইকেট হারানো যাবে না। বল খুব বেশি স্পিন করছিল। এ জন্যই পরিবর্তন। পুরোটাই কৌশলগত।’
গত বছরের জুলাইয়ের পর আবার ওয়ানডে খেলতে নামা মোসাদ্দেককে দিয়েই বোলিং ওপেন করান তামিম। বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রুও এনে দেন তিনি। ২৫ ওভারের মধ্যেই নিজের ১০ ওভার শেষ করে ফেলেন, শেষ পর্যন্ত ৩৭ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। মোসাদ্দেককে খেলানো, পরে নাজমুলকে ওপেনিংয়ে পাঠানো—দুই কৌশলগত পরিবর্তনই কাজে দিয়েছে বাংলাদেশের।