বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ
রোমানকে রেখেই বার্লিন যাচ্ছেন দিয়া
আগামীকাল ভোরে বাংলাদেশ দল বার্লিন যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও রোমান সানাকে আন্তর্জাতিক আর্চারিতে খেলানোর অনুমতি মেলেনি।
আর্চারিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটি বৈশ্বিক সাফল্যের সঙ্গেই যুক্ত তাঁর নাম। ২০১৯ সালের ১৬ জুন নেদারল্যান্ডসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ ব্যক্তিগত বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতে টোকিও অলিম্পিকের টিকিট পেয়েছিলেন রোমান সানা। বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশের একমাত্র পদক। ২০২১ সালের ২৩ মে সুইজারল্যান্ডে বিশ্বকাপ আর্চারিতেও দিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে জুটি বেঁধে রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টে রুপা জিতে ইতিহাস গড়েন রোমান।
তাঁর মতো খেলোয়াড়কে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নিয়ে যেতে চাইবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ তা খুব করে চাইছিলও। কিন্তু বিশ্ব আর্চারি ফেডারেশনের ছাড়পত্র পাননি রোমান। ফলে জার্মানির বার্লিন শহরে ৩১ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে আগামীকাল ভোর পাঁচটায় বাংলাদেশ আর্চারি দল রওনা দিচ্ছে সম্ভবত রোমানকে ছাড়াই। সম্ভবত বলার কারণ, গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রোমানকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি বিশ্ব আর্চারি ফেডারেশন। বাকি কয়েক ঘণ্টায়ও অনুমতি মিলবে না বলেই ধরে নিয়েছে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন।
অথচ রোমানের জন্য জার্মানির ভিসা, টিকিট এমনকি আবাসনের ব্যবস্থাও রেখেছে ফেডারেশন। গত কিছুদিন ধরেই তারা চেষ্টা করছিল রোমানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাটা তুলে নিতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আর্চারি ফেডারেশনকে রাজি করানো যায়নি।
রোমানের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটা কয়েক মাস আগের ঘটনা। সতীর্থ এক আর্চারের সঙ্গে অসদাচরণের কারণে গত নভেম্বরে তাঁকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন। গত ৭ মার্চ শর্তসাপেক্ষে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেয় দেশীয় আর্চারির সর্বোচ্চ সংস্থাটি। কিন্তু বাদ সেধেছে আন্তর্জাতিক আর্চারি ফেডারেশন। রোমানের শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা জেনে আন্তর্জাতিক আর্চারি ফেডারেশন স্বপ্রণোদিত হয়ে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে, যে কারণে বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন চাইলেও দলে নিতে পারছে না রোমানকে।
অগত্যা বার্লিনগামী বাংলাদেশ পুরুষ রিকার্ভ দলে নেওয়া হয়েছে হাকিম আহমেদ রুবেল, রামকৃষ্ণ সাহা ও সাগর ইসলামকে। রিকার্ভ মহিলা দলে শুধু দিয়া সিদ্দিকী। বার্লিনগামী দলে কম্পাউন্ড বিভাগে আছেন মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ও বন্যা আক্তার। তাঁরা ব্যক্তিগত ও মিশ্রতে খেলবেন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ খেলবে রিকার্ভ পুরুষ দলগত, ব্যক্তিগত ও মিশ্রতে। কম্পাউন্ডে দলীয় বিভাগে খেলবে না, শুধু ব্যক্তিগত ও মিশ্রতে খেলবে। ১২ জন যাওয়ার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশ পাঠাচ্ছে ৬ জন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্ট হওয়ায় এখানে বেছে বেছে আর্চার পাঠানো হচ্ছে।
নিজের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রোমানকে না পাওয়া বাংলাদেশ কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ হতাশ। বার্লিন আবার তাঁর নিজের শহরও। প্রথম আলোকে কাল তিনি বলছেন, ‘বিশ্ব আর্চারি থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সবুজ সংকেত আসেনি রোমানের ব্যাপারে। আমি শুধু এতটুকু জানি, রোমানকে ছাড়াই আমরা যাচ্ছি।’ তাহলে রোমানবিহীন দলের কাছে কোচের প্রত্যাশা কী? ‘দেখুন, ২০১৯ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রোমানের ব্রোঞ্জ জেতার পর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আমাদের হাকিম আহমেদ রুবেল ১৭তম হওয়া ছিল সেরা সাফল্য। এবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছে ৮০টির বেশি দেশ, প্রায় ৬০০ আর্চার। এই টুর্নামেন্ট থেকে পদকজয়ীরা অলিম্পিকের টিকিট পাবে। কিন্তু বাস্তবতা মেনে এখানে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গেলে আমি খুশি থাকব। এখানে পদক জেতা অনেক কঠিন’— বলেছেন ফ্রেডরিখ।
কঠিন বলেই রোমানকে দলে নিতে বার্লিন গিয়েও তদবির করেছেন বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ। পরশু বিশ্ব আর্চারির কংগ্রেসে আবারও ইলেকটোরাল বোর্ড সদস্য মনোনীত হয়ে বার্লিন থেকে তিনি প্রথম আলোকে ফোনে বলেন, ‘রোমানের নিষেধাজ্ঞা তুলতে তো অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনো ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি না বিশ্ব আর্চারি থেকে।’
৫ জুলাই রোমান-দিয়া বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর তাঁরা দুজনই বলেছেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জুটি গড়ে আরও সাফল্য পেতে চান। কিন্তু এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সেটি হচ্ছে না। বিয়ের পর রোমানকে দেশে রেখেই দিয়াকে যেতে হচ্ছে বার্লিন।