মেয়েদের ইচ্ছায় দশ বছর পর বিগ ব্যাশে ওয়ার্নারের ফেরা
অবশেষে বিগ ব্যাশ লিগে ফিরলেন ডেভিড ওয়ার্নার। সময়ের হিসেবে প্রায় দশ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে ফিরছেন এ সংস্করণের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। দুই বছরের চুক্তিতে সিডনি থান্ডারে ফিরছেন ওয়ার্নার, আজ নিশ্চিত হয়েছে সেটি। বিগ ব্যাশে ফেরার পেছনের কারণ হিসেবে ওয়ার্নার বলছেন, মেয়েদের ইচ্ছা পূরণ করতেই এমন সিদ্ধান্ত তাঁর।
ওয়ার্নারের বিগ ব্যাশে ফেরা শুধু দীর্ঘদিন তাঁর অনুপস্থিতির কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ নয়। কয়েক দিন যে বেশ নাটকই হয়েছে তাঁর এ লিগে খেলা নিয়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন দুটি টি-টোয়েন্টি লিগ আসার পর এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বিগ ব্যাশ। সেখানে নিজের দেশের খেলোয়াড়কেই যদি আটকে রাখা না যায়, তাহলে আর ‘মর্যাদা’ থাকে কই—ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দশা হয়েছিল এমন।
জানুয়ারিতে নিজেদের টি-টোয়েন্টি লিগের জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ বাতিল করে দক্ষিণ আফ্রিকা, ফলে সূচিতে ফাঁকা জায়গা বেরিয়ে পড়ে। গ্রীষ্ম মৌসুমে আন্তর্জাতিক সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তিন সংস্করণে খেলা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা এমনিতেও বিগ ব্যাশে খেলার সুযোগ পান না। তবে এবার সেটি তৈরি হয়েছিল। বিপত্তি বাধায় আরব আমিরাতের নতুন ওই লিগ।
বিগ ব্যাশের সঙ্গে চুক্তিতে না থাকা ওয়ার্নার আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টিতে খেলতে চান, জানা যায় এমন। এরপরই উঠেপড়ে লাগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নারকে নিজেদের লিগে রাখতে সফলও তারা।
নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে ৫০ ওভার ও ‘অরিজিনাল’ বিগ ব্যাশে খেলেই নজর কেড়েছিলেন ওয়ার্নার। কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ না খেলেই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তবে নতুন আঙ্গিকে বিগ ব্যাশ শুরু হওয়ার পর মাত্র ৩টি ম্যাচ খেলেন ওয়ার্নার, যার সর্বশেষটি ছিল ২০১৩ সালে, থান্ডারের হয়েই। তাদের হয়ে ২টি বিগ ব্যাশ ম্যাচ খেলেছিলেন ওয়ার্নার, একটি খেলেছিলেন সিডনি সিক্সারসের হয়ে।
এবার থান্ডারের সঙ্গে চুক্তির পর বিগ ব্যাশে খেলার কারণ হিসেবে ওয়ার্নার বলেছেন, ‘আমার মেয়েরা বলেছে, আমাকে ঘরের মাঠে বিগ ব্যাশে খেলতে দেখলে ভালো লাগবে তাদের। পরিবার হিসেবে বিগ ব্যাশের অংশ হওয়াটা আমাদের জন্য দারুণ হবে। তাদের সঙ্গে এটি ভাগ করে নিতেও উন্মুখ হয়ে আছি আমি।’
আমার মেয়েরা বলেছে, আমাকে ঘরের মাঠে বিগ ব্যাশে খেলতে দেখলে ভালো লাগবে তাদের। পরিবার হিসেবে বিগ ব্যাশের অংশ হওয়াটা আমাদের জন্য দারুণ হবে। তাদের সঙ্গে এটি ভাগ করে নিতেও উন্মুখ হয়ে আছি আমি।
ওয়ার্নার এমন সময়ে চুক্তি করলেন, যখন বিগ ব্যাশের মান পড়ে যাচ্ছে বলে আলোচনা আছে। সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও ঝামেলা চলছে লিগটির। এরই মধ্যে ওয়ার্নারের মতো তারকা বিগ ব্যাশে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ওয়ার্নার বলছেন, তাঁর অংশগ্রহণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে বলে আশাবাদী তিনি, ‘এ খেলার প্রতি আমার নিবেদন অনেক। আমি জানি, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আজ আমি যা উপভোগ করছি, তার বেশির ভাগই আমার আগে খেলে যাওয়া সিনিয়র ক্রিকেটারদের অবদানের কারণে। খেলাটির কাঠামোই এমন। আশা করি ভবিষ্যতে বিগ ব্যাশে আমার অবদান আমার অবসরের অনেক পরও পরবর্তী প্রজন্মের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করবে।’
সিডনি থান্ডারের হয়ে নিয়মিত মৌসুমে এবার কমপক্ষে পাঁচটি ম্যাচ খেলার কথা অস্ট্রেলীয় ওপেনারের। বিগ ব্যাশের ড্রাফটে সর্বোচ্চ প্লাটিনাম শ্রেণিতে থাকা খেলোয়াড়দের মতোই প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার ইউএস ডলার পাবেন তিনি। তবে সিডনি থান্ডারের পারিশ্রমিক বাবদ যে খরচের সীমা, সেটি অতিক্রম করে যাচ্ছে বলে ওয়ার্নারের পারিশ্রমিকের একটা অংশ বহন করবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াই।
ওয়ার্নার ছাড়াও বেশ কয়েকজন অস্ট্রেলীয় জাতীয় দলের খেলোয়াড়ই ছিলেন বিগ ব্যাশের চুক্তির বাইরে। সিডনি সিক্সার্সের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন স্টিভ স্মিথ, আন্তর্জাতিক ঠাসা সূচিতে নিজের চাপ বাড়াতে চান না তিনি। স্মিথের মতো বিগ ব্যাশের চুক্তির বাইরে আছেন টেস্ট অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলার জশ হ্যাজলউড। একই পথে হাঁটতে পারেন অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিনও। অবশ্য চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছেন মারনাস লাবুশেন, ট্রাভিস হেডরা।