রিশাদের মন যেভাবে চায়, সেভাবেই ব্যাটিং করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল
রিশাদ হোসেন কি দলে তাহলে অবধারিত পছন্দ হয়ে উঠলেন?
ম্যাচ শেষে প্রশ্নটি সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি ওঠেনি। অন্যভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের কাছে। জানতে চাওয়ার একটি পটভূমিও আছে। বাংলাদেশের জার্সিতে গত বছর মার্চে অভিষেক এই লেগ স্পিনারের।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব মিলিয়ে খেললেন ১১ ম্যাচ। এর মধ্যে দুটি ম্যাচে পারফরম্যান্সের কারণে এমন প্রশ্নের অবতারণা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ মার্চ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে ২৮ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে আটে নামা রিশাদ ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে বুঝিয়েছিলেন, ওই পজিশনে নেমে অমন দাপুটে ইনিংস বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানও খেলতে পারেন। কিন্তু রিশাদ সেখানেই থেমে যাননি।
পরের ম্যাচেই, মানে আজ সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেও ব্যাট হাতে সংহারী ভূমিকায় রিশাদ। ৪ ছক্কা ও ৫ চারে ১৮ বলে তাঁর অপরাজিত ৪৮ রানের ইনিংসে ম্যাচটি ৪ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। টানা দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে অসাধারণ খেলায় রিশাদের ‘স্পিনার’ পরিচয় বুঝি এখন মুছে যায়!
নাহ, সেটি না হলেও ব্যাটিং–সামর্থ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁকে আলাদা করেই চিনিছে। নাজমুলের কাছে তাই জানতে চাওয়া হয়েছিল, দলের খেলোয়াড় তালিকায় সবার আগে তাঁর নামটা লিখতে চাইবেন কি না।
নাজমুল এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথাগত ক্রিকেটীয় কথাই বললেন, ‘বোলিংটা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ। লেগ স্পিনার তো আমাদের নেই। যদি নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে দেখা হয়, আমার মনে হয়, ভালো বোলিং করছে। সাতের ব্যাটিংটা নিউজিল্যান্ড সিরিজে যেমন ছিল, তার চেয়ে অনেক উন্নতি করেছে মনে হয়। তবে এখনো অনেক উন্নতির জায়গা আছে এবং সেসব নিয়ে কাজও করছে। অবশ্যই খুব খুশি। এমন খেলোয়াড় দলে থাকলে তো অবশ্যই অধিনায়কের জন্য সবকিছু অনেক সহজ হয়।’
২৩৫ রান তাড়া করতে নেমে ৩৬.১ ওভারে ১৭৮ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হওয়ায় তাঁর জায়গায় আসেন রিশাদ। তখন রিশাদকে ড্রেসিংরুম থেকে কী বার্তা দেওয়া হয়েছিল? নাজমুল জানালেন, আলাদা করে তেমন কোনো বার্তা তাঁকে দেওয়া হয়নি, ‘মিরাজ আউট হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই ড্রেসিংরুমে একটু দুশ্চিন্তা ছিল। তবে রিশাদকে তেমন কোনো পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। যেটা মন চায়, সেভাবেই যেন ব্যাট করে, স্বাভাবিক খেলাটা যেন খেলে।’
রিশাদের স্বাভাবিক ব্যাটিং-ই যদি এমন আক্রমণাত্মক হয়, সাদা বলের সংস্করণে তাহলে বাংলাদেশ তো একটি ‘প্যাকেজ’ পেয়েই গেল! মানে, ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং—এই তিন বিভাগেই প্রত্যাশার প্রতিদান দিচ্ছেন রিশাদ। আজ প্রথম ওয়ানডেতে ৯ ওভারে ৫১ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।
নাজমুলের গলায়ও প্রতিধ্বনিত হলো রিশাদে ‘হোয়াইট বল প্যাকেজ’ পাওয়ার কথা, ‘হ্যাঁ, আমার মনে হয় খুবই ভালো ফিল্ডার, ব্যাটিংয়েও উন্নতি করছে; আমার মনে হয়, আজকেও যেভাবে বোলিং করেছে, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়েছে। তবে এখনই এত রোমাঞ্চিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। অনেক উন্নতির জায়গা আছে।’
শ্রীলঙ্কাকে ২৩৫ রানে অলআউট করায় বোলারদের প্রশংসাও করলেন নাজমুল, ‘আমার মনে হয়, আরও দ্রুত অলআউট করা যেত। আমার মনে হয়, খুবই ভালো বোলিং করেছে। ২৩৫ রানে আমরা ওদের আটকিয়েছি এই উইকেটে। তাসকিন, শরীফুল, মোস্তাফিজ, মিরাজ—সবাই ভালো বোলিং করেছে। শুরুতে উইকেটেরও একটু সাহায্য ছিল সম্ভবত।’