৯ বছরে ৫ আইসিসি শিরোপা, পন্টিংকে পেছনে ফেললেন ল্যানিং
তিন মাস আগেও একটি ক্যাফেতে কাজ করতেন তিনি। কাজের মধ্যে ছিল কফি বানানো আর প্লেট ধোয়ামোছা।
না, অর্থের অভাবে বা ক্রিকেট থেকে ব্রাত্য হয়ে যাওয়ার কারণে নয়। ২০১০ সাল থেকে তিন সংস্করণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একাধিক বিশ্বকাপ, অ্যাশেজ আর কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতার পর খেলা চালিয়ে যেতে আর আগ্রহ পাচ্ছিলেন না। ঘোষণা দিয়েই তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছিলেন।
বিরতির সেই সময়টায় কিছুদিন ঘুরে বেড়িয়েছেন, বাকি সময় চাকরি করেছেন ক্যাফেতে। ওই চাকরির সময়ই অনুভব করেন—তিনি মাঠের মানুষ। মনে আবারও জেগে ওঠে ক্রিকেট নিয়ে অনুভূতিটুকু। ‘অনির্দিষ্টকালের বিরতি’ শেষ হয়ে যায় চার মাসেই।
রোববার দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৯ রানে হারিয়ে আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। যে জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন নতুন বছরে নতুন করে ফিরে আসা মেগ ল্যানিং। এটি ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরে অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ জয়। আর অধিনায়ক হিসেবে ল্যানিংয়ের চতুর্থ।
৩০ বছর বয়সী ল্যানিং এখন আইসিসির টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক। চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাশাপাশি একটি ৫০ ওভার বিশ্বকাপের ট্রফি জয়েও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আয়োজিত পাঁচটি আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া অধিনায়ক আর কেউই নেই। পঞ্চম শিরোপা জয়ে ল্যানিং পেছনে ফেলেছেন তাঁরই স্বদেশি ও একসময়কার ‘আদর্শ’ রিকি পন্টিংকে। এ শতকের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার ছেলেদের দলকে নেতৃত্ব দেওয়া পন্টিং দুটি বিশ্বকাপ (২০০৩, ২০০৭) ও দুটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (২০০৬, ২০০৯) জিতেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ২১ বছর বয়সে নেতৃত্ব পাওয়া ল্যানিং প্রথম শিরোপা জেতেন ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এরপর একই ট্রফি জিতেছেন ২০১৮ আর ২০২০ সালেও। গত বছর নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে সংস্করণের বিশ্বকাপ জিতে অধিনায়ক হিসেবে দাঁড়িয়ে যান পন্টিংয়ের পাশে। রোববারের পর সর্বাধিক আইসিসি ট্রফিজয়ী অধিনায়ক যখন ল্যানিং একাই।
মাঝে ২০২২ সালের আগস্টে জিতেছেন কমনওয়েলথ গেমসের সোনার পদকও। সব মিলিয়ে ৫০ ওভার ক্রিকেটের বিশ্বকাপ, ২০ ওভার ক্রিকেটের বিশ্বকাপ, কমনওয়েলথ গেমসের সোনার পদক এবং অ্যাশেজজয়ী একমাত্র অধিনায়ক ল্যানিংই। আর এই সব কটিই জিতেছেন সর্বশেষ ১৪ মাসের মধ্যে।
নেতৃত্বে সাফল্যের শীর্ষে ওঠা ল্যানিং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে জায়গা করেছিলেন ব্যাটার হিসেবে। এক যুগের ক্যারিয়ারে ডানহাতি এ ব্যাটার বেশ কিছু রেকর্ডেও নাম লিখিয়েছেন। ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৪৫ বলে ১০০ এখনো অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে দ্রুততম সেঞ্চুরি। মেয়েদের ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ১৫টি সেঞ্চুরিও তাঁর। টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি (২টি) আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের (৩৪০৫) মালিকও ল্যানিংই।
ছন্দে ছিলেন এবারের নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। ৫ ইনিংস ব্যাটিং করে দুটিতে অপরাজিত থেকে করেছেন ১৪৯ রান, গড় ৪৯.৬৬।
তবে সিঙ্গাপুরে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটারের নেতৃত্ব সত্তা নিয়েই বেশি উচ্ছ্বসিত সতীর্থরা। নামের শুরুতে ‘মেগ’ থাকার সূত্রে আগে থেকেই ‘মেগাস্টার’ নামে ডাকা হয় ল্যানিংকে। টানা তিনটি বড় আসরের ফাইনালে ফিফটি করা বেথ মুনির মতে, মেগাস্টার ল্যানিং এখন তাঁর দলের অনেকের আদর্শ, ‘ওর ক্রিকেট মস্তিষ্ক খুব পরিষ্কার। চাপের মধ্যে শান্ত থাকতে পারে, অন্যদের প্রতি সহমর্মীও। অন্যরা কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেটা সে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে। তাঁর মতো একজনকে পেয়ে আমরা সৌভাগ্যবান।’
সৌভাগ্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটেরও। তাদের যে আছে পাঁচটি আইসিসি শিরোপা এনে দেওয়া এক অধিনায়ক।