পরিবার ও যাঁরা সমর্থন দিয়েছেন তাঁদের শতক উৎসর্গ মাহমুদউল্লাহর
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের শতকসংখ্যা ৬, এর মধ্যে ৩টি শতক মাহমুদউল্লাহর। সেগুলো ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে। আইসিসির টুর্নামেন্টে কীভাবে যেন ব্যাট চওড়া হয়ে ওঠে মাহমুদউল্লাহর। তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪ শতকের মধ্যে অন্যটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। বিশ্বকাপে গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১১ রানের যে শতকটি করলেন, সেটি বিরুদ্ধস্রোতে নেমে আর বাংলাদেশ দলও জিততে পারেনি।
৩৮২ রান তাড়া করতে নেমে ১৪৯ রানে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহর কাছে তাই জানতে চাওয়া হয়েছিল, ব্যাটিংয়ে নেমে লক্ষ্যটা কী ছিল? ব্যাট করার সময় কি তাঁর মনে হয়েছে, দলের হার তো নিশ্চিত, তাই ব্যক্তিগত লক্ষ্য; মানে শতকের পিছু ছোটাই ভালো?
মাহমুদউল্লাহর উত্তরটা জানানোর আগে তাঁর ক্রিজে আসার সময় ম্যাচের পরিস্থিতিটা জানিয়ে রাখা ভালো। ১২তম ওভারে বাংলাদেশ যখন ৪২ রান তুলতে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল, তখন ব্যাট করতে নামেন মাহমুদউল্লাহ। একপর্যায়ে ২২ ওভারের মধ্যে ৮১ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ এখান থেকে নাসুম আহমেদের সঙ্গে ৪১, হাসান মাহমুদের সঙ্গে ৩৭ এবং মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের সংগ্রহটা ২০০ পার করেন। শেষ পর্যন্ত ৪৬.৪ ওভারে ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
৪০০ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রায় অর্ধেক পথেই ১০০ রান তোলার আগে ৬ উইকেট পড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে যেকোনো দল। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ঘটেছে গতকাল। তখন মাহমুদউল্লাহ ঠিক কোন লক্ষ্যে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন—সে প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘শতকের লক্ষ্য ছিল না। মোস্তাফিজের সঙ্গে ব্যাট করার সময় তাকে বলেছি, শুধু টিকে থাকো। ৫০ ওভার খেলে দেখা যাক স্কোরটা কত হয়। কারণ, রানরেটের একটা ব্যাপার আছে। দ্রুত অলআউট হলে রানরেটের ওপর প্রভাব পড়বে। তাই আমি যতটা সম্ভব ব্যাট করতে চেয়েছি এবং দলের জন্য রান করতে চেয়েছি।’
৫ ম্যাচে ১ জয় ও ৪ হারে বিশ্বকাপ পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে নেমে গেছে বাংলাদেশ। নেট রানরেট –১.২৫৩।
শতক পাওয়ার পর উদ্যাপন নিয়েও জানতে চাওয়া হয়েছিল মাহমুদউল্লাহর কাছে। শতকটি কাউকে উৎসর্গ করেছেন কি না, প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘অবশ্যই পরিবারকে উৎসর্গ করেছি। বিশেষ করে তাঁদের প্রতি, যাঁরা গত কয়েক মাসে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন এবং দোয়া করেছেন।’ ১১১ বলের এই ইনিংসে ১০০ স্ট্রাইকেরেটে ব্যাট করেছেন মাহমুদউল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, নিজের স্ট্রাইকরেটটা তিনি ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। এটাও জানিয়েছেন উদ্যাপনে কোনোরকম ‘প্রতিবাদ’ ছিল না। সেটা ছিল শুধুই শতক উদ্যাপন।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে দলে থাকলেও ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পাননি মাহমুদউল্লাহ। তাঁর নামার আগেই ৬ উইকেটে জিতেছে দল। ওই ম্যাচে দলের খেলোয়াড় তালিকায় ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী তাঁর পজিশন ছিল আটে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে একাদশে ছিলেন না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে আটে নেমে অপরাজিত ৪১ রান করেছিলেন। ভারতের বিপক্ষে সাতে নেমে ৩৬ বলে করেন ৪৬ রান। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁকে পাঠানো হয় ছয়ে এবং এই পজিশনে নেমে শতক তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ব্যাটিং অর্ডারে উঠে আসার কথা টিম ম্যানেজমেন্টকে তিনি বলেছিলেন কি না। মাহমুদউল্লাহর উত্তর, ‘না, আমি এটা নিয়ে ভাবিনি। গতকাল (পরশু) কোচ বলেছেন, আমি ছয়ে ব্যাট করতে নামব। এরপর নেমে নিজের খেলাটা খেলেছি।’
দল এমন অবস্থানে ছিল, যেখান থেকে জেতার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। এর মধ্যে নিজের কাজটা করে শতক পেলেও দলের হারে অনুভূতিটা কী? মাহমুদউল্লাহর ভাষ্য, ‘কেউ হারতে পছন্দ করে না। এটা অবশ্যই হতাশার...আমরা দ্রুত উইকেট হারানো থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি...পানি পানের বিরতির সময় আমরা আলোচনা করছিলাম, ৩২০–৩৩০ রান তাড়া করা সম্ভব। কিন্তু আমরা ৩২০–৩৩০ রানের মধ্যে (দক্ষিণ আফ্রিকাকে) আটকে রাখতে পারিনি।’