লিভারপুলের দিনগুলো ভুলব না: বিদায়বেলায় ক্লপ
সবকিছুরই শেষ আছে। কিন্তু সব শেষ সব সময় আনন্দদায়ক হয় না। লিভারপুলে ইয়ুর্গেন ক্লপের বিদায়ও তেমন। ক্লপ যখন লিভারপুলের দায়িত্ব নিয়ে অ্যানফিল্ডে এসেছিলেন, লিভারপুল তখন যেন ঐতিহ্যের জীবাশ্মতে পরিণত হওয়া ক্লাব। লিগ শিরোপা জেতার বয়স পেরিয়ে গেছে ২৫ বছর, এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগও জেতা হয়নি এক দশক ধরে।
সেই ক্লাবটিই ক্লপের জাদুকরি স্পর্শে জেগে ওঠে নতুন করে। গত প্রায় ৯ বছরে লিভারপুলকে সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতিয়েছেন ক্লপ। কাছাকাছি গিয়ে কয়েকটি শিরোপা হাতছাড়া না হলে আরও সমৃদ্ধ হতে পারত জার্মান কোচের অর্জন। কিন্তু বিদায়বেলায় ক্লপের কোনো আক্ষেপ নেই। অ্যানফিল্ডে যা পেয়েছেন, ক্লপ তাতেই খুশি। লিভারপুলকে বিদায় বলাও কত বেদনাদায়ক, সেটাও জানিয়েছেন তিনি।
চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি আকস্মিকভাবে লিভারপুল ছাড়ার ঘোষণা দেন ক্লপ। এক ভিডিও বার্তায় জানিয়ে দেন, মৌসুম শেষে তিনি আর লিভারপুলের কোচ থাকছেন না। নিজের বিদায়ের কারণ হিসেবে প্রাণশক্তি ফুরিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন ক্লপ। এরপর শুরু হয় ক্ষণগণনা। আগামী রোববার লিভারপুলের কোচ হিসেবে শেষবারের মতো ডাগআউটে দাঁড়াবেন ক্লপ। অ্যানফিল্ডে নিজের বিদায়ী ম্যাচের আগে আজ শেষবারের মতো এসেছিলেন ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে। এর পুরোটা জুড়েই ছিল ক্লপের বিদায়ের প্রসঙ্গ
বিদায়মুহূর্ত নিয়ে ক্লপ বলেছেন, ‘এটা আমার জীবনের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ একটা সপ্তাহ ছিল। এই সপ্তাহে আমি প্রায়ই “বিদায়” বলেছি। আমাদের এটা দেখানোর প্রয়োজন নেই সপ্তাহটা খুব স্বাভাবিক ছিল; কারণ, এটা আসলেই ছিল না। বিদায় বলা আমার মনে হয় না কখনো সুন্দর কিছু। কিন্তু বেদনা বা দুঃখবোধ ছাড়া যখন বিদায় নিতে হয়, তখন এর মানে হলো আমরা একসঙ্গে যে সময় কাটিয়েছি সেটা ভালো ছিল না। কিন্তু এখানে আমরা দারুণ সময়ই কাটিয়েছি। তাই এটা স্পষ্ট যে বিষয়টা খুবই কঠিন হবে।’
২০১৫ সালের অক্টোবরে লিভারপুলে আসার পর ক্লাবটির হয়ে সাতটি বড় শিরোপা জিতেছেন ক্লপ। যেখানে ৩০ বছর পর লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে জেতা চ্যাম্পিয়নস লিগও আছে। শিরোপার কাছাকাছি গিয়ে একাধিকবার হতাশ হতে না হলে ক্লপের লিভারপুলের ট্রফি ক্যাবিনেট আরও চোখধাঁধানো হতো। ক্লপের অধীনে দুই মৌসুমে মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ট্রফি হাতছাড়া করেছে লিভারপুল। এ ছাড়া দুবার (২০১৮ ও ২০২২) রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ফাইনালে হারায় হাতছাড়া হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিও।
এ মৌসুমেও একপর্যায়ে ‘কোয়াড্রপল’ শিরোপা জয়ের পথে ছিল লিভারপুল। ফেব্রুয়ারিতে লিগ কাপ জিতে লক্ষ্যের পথে যাত্রাটা দারুণভাবে শুরু করেছিল তারা। কিন্তু এরপরই আশ্চর্য পতন দেখতে হয় ক্লাবটিকে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে বেশ কিছু ম্যাচে হেরে একে একে এফএ কাপ ও ইউরোপা লিগ থেকে ছিটকে পড়ে লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগেও এখন ৩ নম্বর স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে দলটিকে। ক্লপ বলেছেন, ‘আমি জানি আমরা আরও অনেক বেশি জিততে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা বদলাতে পারব না, ফলে যা হয়েছে তা নিয়ে আমি খুশি।’
১ পয়েন্টের জন্য দুবার শিরোপা হাতছাড়া করার অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে ক্লপ যোগ করেন, ‘১ পয়েন্টের জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে না পারাটা ভালো অভিজ্ঞতা নয়। কাছাকাছি গিয়ে জিততে না পারাটা ইতিহাসে লেখা থাকবে না।’
বিশ্বব্যাপী সমর্থক গোষ্ঠীর কারণেও লিভারপুল বেশ জনপ্রিয়। প্রায় এক দশক সমর্থকদের সঙ্গে দারুণ এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ক্লপের। শিরোপা জিতে যেমন সমর্থকদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন, সমর্থকেরাও হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসেছেন ক্লপকে। নিজেকে জনসাধারণের প্রতিনিধি উল্লেখ করে ক্লপ বলেন, ‘আমরা জনগণের দূত। আমরা চেষ্টা করতে হয় তাদের স্বপ্নপূরণের।’
অ্যানফিল্ডের ক্লাবটির প্রতি নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করতে গিয়ে ক্লপ আরও যোগ করেন, ‘এখানে আমার জীবনের প্রায় এক দশক কাটিয়েছি। নানা দিক থেকে এটা দারুণভাবে প্রভাববিস্তারী ছিল। আমি এই জায়গার সবকিছু ভালোবাসি। আমি স্মৃতিগুলো সঙ্গে নিয়ে যাব। অসাধারণ সব স্মৃতি। পাশাপাশি আমি বন্ধুত্ব এবং সম্পর্কগুলোও সঙ্গে নিয়ে যাব। জীবনের একটি দশক দেওয়া খুব বড় ব্যাপার। এ সময়ের একটি দিনও আমি ভুলব না। কারণ, এখানে আমি নিজের দেখা সেরা মানুষগুলোকে পেয়েছি।’