সৌদি তরুণকে মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচাতে মেসির কাছে চিঠি

ছেলেকে বাঁচাতে মেসিকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে এক সৌদি পরিবারএএফপি

সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি ২০ বছর বয়সী এক তরুণের জীবন বাঁচাতে লিওনেল মেসিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তার পরিবার। পিএসএজি ও আর্জেন্টাইন ফুটবলারের প্রতি ওই পরিবারের আকুতি—মেসি যেন ওই মামলায় নিজের প্রভাব খাটিয়ে হস্তক্ষেপ করেন।

মেসির কাছে এমন চিঠি শুধু তিনি ফুটবলের বড় তারকা বলেই নয়। এর পেছনে মেসির সৌদি আরব সংশ্লিষ্টতার একটি বিষয়ও আছে। সম্প্রতি দেশটির পর্যটনের শুভেচ্ছাদূত বানানো হয়েছে তাঁকে। ওই পরিবারের আশা, সৌদি আরবের ওপর প্রভাব খাটিয়ে মেসি তাঁদের ছেলেকে বাঁচাতে পারবেন।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, সৌদি সরকারের বিপক্ষে ‘অপরাধ’ করার অভিযোগে মোহাম্মদ আল ফারাজ নামের ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১৭ সালে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি ছিলেন ১৫ বছরের কিশোর। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করা হয়েছে। অবশ্য তাঁর পরিবার বলছে, নির্যাতন করেই স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে ফারাজের।

আরও পড়ুন

মেসিকে দেওয়া চিঠিতে ফারাজের পরিবার লিখেছে, ‘আমরা বিনয়ের সঙ্গে আপনার মনযোগ আকর্ষণ করছি। আমাদের প্রিয় মোহাম্মদের দুর্দশা তুলে ধরতে আহ্বান করছি। তাকে শিশু অবস্থায় আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের পর্যটনদূত হিসেবে আপনার অনেক প্রভাব আছে। আপনি কি সেটি একজন কিশোরের জীবন বাঁচাতে ব্যবহার করবেন?’

‘আমরা বিনয়ের সঙ্গে আপনার মনযোগ আকর্ষণ করছি। আমাদের প্রিয় মোহাম্মদের দুর্দশা তুলে ধরতে আহ্বান করছি। তাকে শিশু অবস্থায় আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের পর্যটনদূত হিসেবে আপনার অনেক প্রভাব আছে। আপনি কি সেটি একজন কিশোরের জীবন বাঁচাতে ব্যবহার করবেন?’

পরিবারের দাবি, ফারাজকে গ্রেপ্তারের সময় সে বন্ধুদের সঙ্গে বোলিং খেলছিল। তবে এরপরই তাকে প্রাপ্তবয়স্কদের কারাগারে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হয়। তার বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ, সেটি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আদালত এখনো মামলার রায় দেননি, তবে বাদী ‘সম্ভাব্য সর্বোচ্চ শাস্তি’ই দাবি করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।

‘কারাগারের রক্ষীরা তাকে পিটিয়েছে, লাথি মেরেছে। মাঝে হাতের ওপর শিকল বেঁধে কয়েক ঘণ্টা রাখা হয়েছে। একজন শিশুর সঙ্গে কেউ এমন নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণ কীভাবে করতে পারে?’ —যোগ করা হয়েছে চিঠিতে।

আরও পড়ুন

আপাতত ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে কাজ করছে ‘রিপ্রিভ’ নামের একটি মানবাধিকার সংস্থা। তাদের মতে, খেলাধুলাকে কাজে লাগিয়ে সৌদি আরব তাদের সুনাম বাড়াতে চাইছে।

রিপ্রিভের পরিচালক মায়া ফোয়া বলেছেন, ‘যখন এক পঞ্জিকাবর্ষে তারা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করতে চলেছে, সে সময় সৌদি আরবের শাসকেরা খেলাধুলায় বেপরোয়া বিনিয়োগ করে চলেছে। এটি কাকতাল হতে পারে না। তারা ৮১ জন মানুষকে এক দিনেই হত্যা করেছে। এরপর যখন গ্রাঁ প্রি এল দুই সপ্তাহের মধ্যে, স্পনসর এবং বেশির ভাগ ড্রাইভারই কিছুই ঘটেনি, এমন একটা ভান করল।’

সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে মুখ খুলেছেন ফর্মুলা ওয়ান ড্রাইভার লুইস হ্যামিল্টন
ছবি: রয়টার্স

ফোয়া উল্লেখ করেছেন মূলত ফর্মুলা ওয়ানের সৌদি আরব গ্রাঁ প্রির কথা। এ বছরের মার্চে জেদ্দায় হয়েছে সেটি। তবে এর কিছুদিন আগেই মিসাইলের আঘাতে মারা গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মানুষ। সাতবারের ফর্মুলা ওয়ান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন লুইস হ্যামিল্টনসহ বেশ কয়েকজন ড্রাইভার এ নিয়ে সরব ছিলেন।

আরও পড়ুন

রেস শেষে হ্যামিল্টন বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই অনেক নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে। তবে সব ড্রাইভার মিলে আমরা ফর্মুলা ওয়ান ও দলের বসদের সঙ্গে কথা বলব, ভবিষ্যতে আসলে কী ঘটছে, সেটি নিয়ে।’ এ ছাড়া হ্যামিল্টনও চিঠি পেয়েছিলেন মেসির মতো। ১৪ বছর বয়সে গ্রেপ্তার হওয়া আবদুল্লাহ আল-হোয়াইতি নামের এক কিশোরের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে মুখ খুলেছিলেন হ্যামিল্টন। ১৭ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় আবদুল্লাহকে।

ফোয়া হ্যামিল্টনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এখানে থাকার সময় মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে লুইস হ্যামিল্টন দেখিয়েছে, সব সময় এমন চলতে পারে না।’ ফোয়া এরপর যোগ করেছেন, ‘মোহাম্মদ বিন সালমান (সৌদি যুবরাজ) উচ্চপর্যায়ের ক্রীড়াবিদের সঙ্গে একই কাতারে নিজেকে দেখতে চান। কিন্তু তাঁর শাসনামলে “শাসকদের অমান্য করার” জন্য যে শিশুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন হচ্ছে এবং শিশুরা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হচ্ছে, এর সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চান না। সৌদি শাসকদের রক্তমাখা রেকর্ড থেকে আমাদের মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর জন্য খেলাধুলাকে উপলক্ষ্য বানানোর সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না।’