মোহাম্মদ নাঈমের টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান নিয়ে চিন্তিত নন বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম। এই বাঁহাতি ওপেনারের বল মারার সামর্থ্যকে ‘সহজাত’ উল্লেখ করে শ্রীরাম বলেছেন, নাঈমের কাছে তাঁদের চাওয়াটা বেশ পরিষ্কার—‘বল দেখো আর মারো।’
সর্বশেষ দুটি সিরিজে টি-টোয়েন্টি দলে ছিলেন না নাঈম। ছিলেন না শুরুতে ঘোষিত এশিয়া কাপের দলেও। চোটের কারণে নুরুল হাসান ও হাসান মাহমুদ ছিটকে যাওয়ার পর দলে নেওয়া হয়েছে তাঁকে। নাঈমের টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল দারুণ। ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচেই খেলেছিলেন ৪৮ বলে ৮১ রানের এক ইনিংস। তবে এরপর নাঈমের ব্যাটিং টি-টোয়েন্টির সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, এ নিয়ে অনেকবারই প্রশ্ন উঠেছে।
৩৪ ম্যাচে নাঈমের ব্যাটিং গড় ২৪.৫১। তবে বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানদের মতো বড়সড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন আছে তাঁর ১০৩.৭১ স্ট্রাইক রেটের পাশে। যদিও ৩৪টি ম্যাচের মধ্যে ১০টিই তিনি খেলেছেন গত বছর বিশ্বকাপের আগে দেশের মাটিতে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে, যে দুটি সিরিজের উইকেটের মান নিয়েও ছিল প্রশ্ন। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫টি ম্যাচে ব্যাটিং করেও নাঈম কোনোটিতেই ১০০ স্ট্রাইক রেট ছুঁতে পারেননি, সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ৫০ বলে ৪৭ রানের। এরপরই বাদ পড়েন তিনি।
নাঈম এর পর থেকে দলে সুযোগ পাচ্ছেন মূলত কারও চোট পাওয়ার কারণেই। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সফরেই যেমন লিটন দাস ছিটকে যাওয়ার পর ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। যদিও ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। এশিয়া কাপেও নেই লিটন, নাঈমকে তো নেওয়া হয়েছে নুরুলের চোটের পরই।
আগামীকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে স্বীকৃত যে তিনজন ওপেনার আছেন বাংলাদেশ দলে, নাঈম তাঁদের একজন। তাঁর কাছে প্রত্যাশা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে আজ সংবাদ সম্মেলনে শ্রীরাম বলেছেন, ‘নাঈমের বল মারার সামর্থ্যটা সহজাত। ওর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগটা পরিষ্কার। ওর কাছে আমাদের কী প্রত্যাশা, সেটি সে জানে। আমি নিশ্চিত, সে মাঠে গিয়ে নিজের সহজাত ক্রিকেটটা খেলবে—যেটা হলো “বল দেখো আর মারো”। আমরা ওর সংখ্যা বা অন্য কিছু নিয়ে চিন্তিত না। আমরা চাই, পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলুক। যত দ্রুত সম্ভব কন্ডিশন বুঝতে পারুক। ব্যাটিং–সঙ্গীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক এবং নিজের ভূমিকা পালন করুক।’
শুধু নাঈমের স্ট্রাইক রেট নয়, কমবেশি বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানের বড় শট খেলার সামর্থ্য নিয়েও আছে প্রশ্ন। টি-টোয়েন্টিতে দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও সুবিধার নয়। তবে দলের কাউকে বাড়তি কোনো চাপ দিতে চান না শ্রীরাম, ‘আমরা ওদের স্বাধীনতা নিয়ে খেলার সুযোগ দেব। এটা নিয়ে কথা বলছি। বাংলাদেশ দলের সামর্থ্য নিয়ে কোনো সংশয় নেই। মাঠে যাওয়া, আত্মবিশ্বাসী থাকা, নিজেদের প্রকাশ করা ও কাজটা করে যাওয়া—এগুলোই আসল।’
নাঈমের সঙ্গে শ্রীরাম প্রশংসা করেছেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহরও। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি দলে দুজনের জায়গাই নড়বড়ে ছিল। অবশ্য দেশ ছাড়ার আগে দুজনকে ‘সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ’ বলেছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এবার তাঁরা প্রশংসা পেলেন শ্রীরামের কাছেও, ‘মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর “ওয়ার্ক এথিকস” দুর্দান্ত। ওদেরকেও বলেছি এটি। একটা উদাহরণ তৈরি করেছে। এমনকি ঐচ্ছিক অনুশীলনেও তারা এসেছে। সব সময়ই দলে অবদান রাখতে চায়, কঠোর পরিশ্রম করে, নিজেদের কাজটা করে যায়। আমার মনে হয়, সফল হওয়ার জন্য যথেষ্ট ভালো তারা।’
আর বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও ক্যারিয়ারের সেরা পর্যায়ে আছেন, এমন দাবি শ্রীরামের, ‘নেটে যেমন বোলিং করছে, নতুন বল যেভাবে সুইং করাচ্ছে, ডান হাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে ঢোকাচ্ছে—আমি মনে করি সে খুব বিপজ্জনক একজন। আমরা বিশ্বাস করি, এখন সে সেরা পর্যায়ে আছে।’