সাফের ফাইনালে যেতে পারল না বাংলাদেশ
সবশেষ চারটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। সবশেষ ফাইনাল, তা-ও ১৬ বছর পেরিয়ে গেছে। ২০০৫ সালের পর এই প্রথম ফাইনালে খেলার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। আজ নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতলেই অপেক্ষার পালা শেষ বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের। কিন্তু তা হয়নি শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করে ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের।
ফাইনালে খেলার জন্য বাংলাদেশকে আজ জিততেই হতো। নেপালের প্রয়োজন ছিল ন্যূনতম ড্র। ম্যাচের নবম মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিকে মাথা ছুঁইয়ে বাংলাদেশকে ফাইনালের পথে এগিয়ে দিয়েছিলেন সুমন রেজা। কিন্তু ৮৬ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে নেপালকে ম্যাচে ফেরান অঞ্জন বিষ্টা। ফাইনালে না উঠতে পারা লিগ পদ্ধতির সাফ শেষ করছে ৫ দলের মধ্যে চতুর্থ স্থানে থেকে।
মূলত ৭৯ মিনিটে দলের সেরা পারফরমার গোলকিপার আনিসুর রহমানের লাল কার্ডই শেষ করে দেয় বাংলাদেশের স্বপ্ন। বাকি সময়ে এক খেলোয়াড় কম নিয়ে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৮৬ মিনিটে রেফারির একটি বিতর্কিত পেনাল্টির সিদ্ধান্তেই সর্বনাশের চূড়ান্ত হয় বাংলাদেশের।
আগের ম্যাচের একাদশ থেকে চারটি পরিবর্তন এনে ৪-৪-২ কৌশলে আজ একাদশ সাজিয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেছিলেন ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন ও রাইটব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষ। সাফে প্রথমবারের মতো আজ একাদশে খেলেছেন টুটুল হোসেন বাদশা। তাঁকে সেন্টারব্যাক খেলাতে গিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে লেফটব্যাকে খেলানো হয়েছে তারিক কাজীকে। তবে মতিন মিয়াকে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রেখে সুমনকে একাদশে খেলানোটা একটা চমকই ছিল। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলার পর টানা দুই ম্যাচে বদলি নামা সুমনকে আজ আবার একাদশে খেলানো। তাঁর সঙ্গে আক্রমণভাগে জুটি বেঁধেছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম।
সুমনকে নিয়ে আলাদা কোনো ছকই সাজিয়েছিলেন কোচ অস্কার ব্রুজোন। স্প্যানিশ এই কোচের কৌশলটা সঠিক প্রমাণ করতে মাত্র ৯ মিনিট সময় নিয়েছেন এই স্ট্রাইকার। জামাল ভূঁইয়ার ফ্রিকিক নেপালের মানব প্রাচীর দেয়ালে লেগে গোলমুখে পড়লেই মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন সুমন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে জাতীয় দলের হয়ে এটিই তাঁর প্রথম গোল। অথচ গোলটির আগে বাংলাদেশকে চাপে রেখেছিল নেপালই। নবযুগ শ্রেষ্ঠা, অঞ্জন বিষ্টাকে ঠেকাতে বারবার ফাউল করেছেন তপু বর্মণ, তারিকরা। শুরুতেই বক্সের ওপরে দারুণ এক ডামিতে তপুকে বোকা বানিয়েছিলেন নেপালি স্ট্রাইকার নবযুগ। পরবর্তীতে বক্সের বাইরে নবযুগকে ঠেকাতে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেছেন তপু। বক্সের বাইরে ভালো জায়গা থেকে ফ্রিকিক পেলেও সেটি বার উঁচিয়ে মেরে নষ্ট করে এক প্রকার বাংলাদেশকে স্বস্তি দিয়েছেন সুজাল শ্রেষ্ঠা।
গোল হজমের পর নেপাল ম্যাচে ফেরার সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পেয়েছিল ১৫ মিনিটে। গৌতম শ্রেষ্ঠার কাট ব্যাকে গোলমুখে অরক্ষিত ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার লিগে খেলা নেপাল ফুটবলের সেরা তারকা রোহিত চাঁদ। সঠিকভাবে শটটি নিতে পারেননি এই মিডফিল্ডার। বলের দখল ও আক্রমণে সবকিছুতেই এগিয়ে ছিল নেপাল। কিন্তু কার্যকরী ফুটবল খেলে রক্ষণভাগ ভাঙার মতো কাজটি করতে পারেনি তারা।
উল্টো এগিয়ে যাওয়ার পর প্রতি আক্রমণ কৌশলে নেপালিজদের পরীক্ষা নিয়েছেন সুমন, রাকিবরা। ৫৫ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করতে পারতেন সুমনই। একক প্রচেষ্টায় বক্সে ঢুকে গোলকিপার কিরণ চেমজংকে একা পেয়েও তাঁকে পরাস্ত করতে পারেননি। ৬৩ মিনিটে সুযোগ এসেছিল ইব্রাহিমের সামনেও। সাদ উদ্দিনের ফ্রিকিক থেকে ইব্রাহিমের হেড পোস্ট উঁচিয়ে বাইরে চলে যায়। ২ মিনিট পরেই বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান। নবযুগের হেড দারুণভাবে রক্ষা করেছেন তিনি।
তবে শেষ রক্ষা আর হলো কোথায়? ৭৯ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় আনিসুরকে। তাঁর লাল কার্ডটি রাকিবের ছেলে মানুষি ভুলের খেসারতও বলা যায়। মাঝমাঠ থেকে বাতাসে ভাসিয়ে ব্যাক পাস করেন রাকিব। কিন্তু গোলকিপারের সঙ্গে নিজের দূরত্বের হিসাব করতে গিয়েই ভুলটা করেন রাকিব। শেষ পর্যন্ত বক্সের বাইরে এসে সেটি কভার করতে গিয়ে দুর্ভাগ্যবশত বল হাতে লেগে যায় আনিসুরের। রেফারি তাঁকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান। ৮৬ মিনিটে পেনাল্টি পায় নেপাল। বক্সের মধ্যে অঞ্জন বিষ্টাকে হেড করতে বাধা দিতে গিয়েছিলেন সাদউদ্দিন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, অঞ্জনকে তিনি ধাক্কা দিয়েছিলেন। তবে সেটি আদৌ ‘ধাক্কা’ ছিল কিনা, বিতর্কটা সেটি নিয়েই। ৮৮ মিনিটে স্পটকিক থেকে বল জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি অঞ্জন।