এ মুহূর্তে মিরপুর টেস্টের যে অবস্থা, তাতে ফল আসতে গেলে অভাবনীয় কিছু ঘটতে হবে। বৃষ্টিতে প্রায় এক সেশন ভেসে গেল আজ। উইকেটে যদি নাটকীয় পরিবর্তন না আসে, স্পিন সহায়ক না হয়, তাহলে ড্রয়ের দিকেই যাবে। তবে হ্যাঁ, টেস্টে একটা সেশনেই সব ওলটপালট হয়ে যেতে পারে।
দিনের শুরুটা অবশ্য বাংলাদেশের জন্য ভালোই হয়েছিল। প্রথম ঘণ্টাতেই দুই উইকেট শ্রীলঙ্কার জন্য বড় ধাক্কা ছিল। বিশেষ করে দিমুথ করুনারত্নের উইকেটটা। আগের দিন ভালো খেলেছিল, ওকে ঘিরেই হয়তো বড় স্কোরের পরিকল্পনা ছিল ওদের। ওই সময়ে ওই দুই উইকেটে শ্রীলঙ্কা যথেষ্ট ব্যাকফুটে চলে যায়।
দ্রুত দুই উইকেট পড়ে গেলেও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা হাল ধরে ফেলল। ম্যাথুস প্রথম টেস্টেও ফলটা আমাদের পক্ষে আসতে দেয়নি। এখানেও তার ওই টেম্পারমেন্ট দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ডি সিলভা শুধু ম্যাথুসের সঙ্গে জুটিতে সঙ্গ দেয়নি, আক্রমণাত্মকও খেলেছে। ও আরও কিছুক্ষণ উইকেটে থাকলে শ্রীলঙ্কাও আরেকটু আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারত।
দিনের শেষ দিকে ডি সিলভার উইকেটটা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাকিব একটু টার্ন পেয়েছিল। এর আগে করুনারত্নের উইকেটটাও দুর্দান্ত ছিল। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে এসে অ্যাঙ্গেল করা ডেলিভারিটা টার্ন করে ভেতরে ঢুকল, ব্যাট প্যাডের ফাঁক দিয়ে বোল্ড—করুনারত্নেও এ আউটের কথা হয়তো অনেক দিন মনে রাখবে।
ওর বোলিংয়ে আগের তুলনায় অবশ্যই উন্নতি আছে। ও জানে এখানে ধৈর্য দরকার, সেটিরই পরিচয় দিচ্ছে। অনেক দিন না মাঠে না থাকা, কোভিড থেকে উঠে আসা, শারীরিক দিয়ে হয়তো শতভাগ ফিট নেই। তবে ওর যে একাগ্রতা আছে, উইকেট নিতে চাইছে, সে জিনিসগুলো খুব পরিষ্কার।
সাকিব সব সময় খুবই বুদ্ধিমান বোলার। ও জানে ম্যাচের পরিস্থিতি কী, ব্যাটসম্যানরা কী ভাবছে, উইকেট তাকে কতটুকু সহায়তা করবে—সব হিসাব করেই বোলিং করে। শেষ দিকে যথেষ্ট ফ্লাইট দিচ্ছিল, উইকেট থেকে একটু বাউন্স আর টার্ন পেতে ধীরে করছিল—ব্যাটসম্যানদের ‘টিজ’ করার চেষ্টা। তাইজুল কিন্তু সেদিক থেকে একটু ফ্ল্যাট, দ্রুতগতিতে করেছে। তবে সাকিব নানা কিছু চেষ্টা করেছে। এ সবকিছুর মধ্যে অ্যাকুরেসিও ধরে রেখেছে।
ওর বোলিংয়ে আগের তুলনায় অবশ্যই উন্নতি আছে। ও জানে এখানে ধৈর্য দরকার, সেটিরই পরিচয় দিচ্ছে। অনেক দিন না মাঠে না থাকা, কোভিড থেকে উঠে আসা, শারীরিক দিয়ে হয়তো শতভাগ ফিট নেই। তবে ওর যে একাগ্রতা আছে, উইকেট নিতে চাইছে, সে জিনিসগুলো খুব পরিষ্কার। সাকিব যদি ধারাবাহিকভাবে এমন ভালো বোলিং করতে পারে, শ্রীলঙ্কার ওপর সেটি চাপ তৈরি করবে।
ইবাদতের কথা আগেও বলেছি। আজও ওর বলে যথেষ্ট গতি ছিল, বাউন্স ছিল। মাঝেমধ্যে শর্ট বল করে ব্যাকফুটে নিয়ে গেছে ব্যাটসম্যানদের। ওর মধ্যে ভালো একজন পেসার পেয়েছি আমরা, এতে সন্দেহ নেই। মরা একটা উইকেটেও ওর ওপর ভরসা করা যায়। প্রথম টেস্টে বাদ পড়ার পর শরীফুলের চোটেই দলে এল। এ টেস্টে যে বোলিং, তাতে আশা করি ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ওকে বসে থাকতে হবে না।
তাইজুলও ইকোনমিক্যাল বোলিং করেছে। প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি, গত টেস্টের মতো বাড়তি একজন বোলার, স্পিনার থাকলে আমাদের বোলিং লাইনআপ আরও শক্তিশালী হতো, দু-একটা উইকেট বেশি পেতাম।
তবে উইকেটে ব্যাটসম্যানরা আজও খুব বেশি অসুবিধায় পড়েনি, মিরপুরে যেটি সাধারণত দেখা যায় না। উইকেটকে বিশ্বাস করে খেলতে পারছে। স্পিনাররা মাঝেমধ্যে টার্ন পাচ্ছে। সবার জন্যই আসলে কিছু না কিছু আছে। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ভালো একটা উইকেট। তবে এ উইকেটে খুব বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। শ্রীলঙ্কা কাল আরেকটু ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাবে, পরের ইনিংসে আমাদের ব্যাটিংও কঠিন হওয়ার কথা নয়।
তবে কাল যদি দ্রুত ২-১টি উইকেট নিতে পারি, তাহলে কিন্তু সুযোগ তৈরি করা যাবে। শ্রীলঙ্কা এখন পর্যন্ত ধীরেই খেলেছে, জয়ের কথা হয়তো সেভাবে ভাবছে না। আদৌ ভাবার সুযোগ পাবে কি না, সন্দেহ আছে। তবে বাংলাদেশ যদি ওদের আগেভাগে অলআউট করে দিতে পারে, তাহলে সুযোগ আছে। আমরা ম্যাচে আছি এখনো। সাকিব এ ইনিংসে যেমন করেছে, সেটির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে, পরের ইনিংসে আরেকটু সহায়তা পাবে। আমাদের সব স্পিনারই আরও বেশি কার্যকর হবে। সে ক্ষেত্রে অভাবনীয় কিছু তো ঘটতেই পারে!