ব্যাটিং–স্বর্গ বানিয়ে শাস্তির মুখে পাকিস্তান
রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট শুরু হয়েছিল রডনি মার্শের প্রতি শোক জানিয়ে। সেই টেস্ট যে এভাবে সদ্য প্রয়াত উইকেটকিপারের এক স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে, সেটা কে জানত। আজ থেকে ৪২ বছর আগে হওয়া ফয়সালাবাদ টেস্ট খেলতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। সে এমনই উইকেট যে পাঁচ দিনে দুই দলের এক ইনিংস শেষ হয়নি। সফরকারী দলের অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেল বিরক্ত হয়ে বল তুলে দিয়েছেন দলের ১১ জনের হাতে। রডনি মার্শ গ্লাভস খুলে এসে ১০ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন। তবে লাভ হয়নি, কোনো উইকেট পাননি মার্শ।
মার্শ না পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বাউচার কিন্তু মাত্র ৮ বল করেই উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন। ইংলিশ আলফ্রেড লিটলটন তো মাত্র ৪৮ বল করেই পেয়েছিলেন ৪ উইকেট! এদিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে অজয় রাত্রা। ভারতীয় উইকেটকিপার মাত্র ১ ওভার করে ছিলেন উইকেটশূন্য।
নিয়মিত বোলাররা কোনো দাগ কাটতে পারছেন না, ম্যাচে ফল দেখার আশা নেই—এমন দশা হলেই উইকেটকিপারদের হাতে বল দেখার সুযোগ মেলে। টেস্টে এক দলের ১১ জনই বোলিং করেছেন, এমন চার ঘটনায় চার উইকেটকিপারের বোলিংয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট। না, মোহাম্মদ রিজওয়ান বা অ্যালেক্স ক্যারি বল হাতে নেননি। বাবর আজম বা প্যাট কামিন্সও চ্যাপেল বা সৌরভ গাঙ্গুলী হতে পারেননি। তবে রাওয়ালপিন্ডির উইকেট যে রকম ব্যাটিং–স্বর্গ হয়ে দেখা দিয়েছে, তা এই মাঠের জন্যই বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
সিরিজের প্রথম টেস্টে দুই দলের ব্যাটসম্যানরা উৎসব করেছেন। প্রথম চার দিনে ৯২৫ রান উঠেছে, পড়েছে মাত্র ১১ উইকেট। আজ পঞ্চম দিনে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১০ রান তুলতে প্রথম ইনিংসের বাকি ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। তাতে অবশ্য পিচের কোনো অবদান নেই সেটা পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে টের পাচ্ছেন সবাই। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ১৮৯ রান করেছে। ৫৪ ওভার পর্যন্ত কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।
এমন ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ব্যাটসম্যানদের মনে খুশির বান ডাকলেও ডাকতে পারে, ফলাফলপ্রত্যাশী কারও জন্য সুখবর নয়। এ টেস্টে ম্যাচ রেফারির ভূমিকায় আছেন রঞ্জন মাদুগালে। যিনি এর আগে ২০১৭ সালে অ্যাশেজ চলার সময় মেলবোর্নের উইকেটকে ‘বাজে’ রেটিং দিয়েছিলেন। যে উইকেটের সমালোচনা সে সময়কার অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ নিজেও করেছিলেন। এবার সফর করতে যাওয়া স্মিথ সরাসরি সমালোচনা করেননি, তবে বুঝিয়ে দিয়েছেন এমন উইকেটে খেলার কোনো মানে হয় না, ‘একদম মরা উইকেট। উইকেটে পেসারদের জন্য গতি ও বাউন্স নেই। ভালো বাউন্স নেই, খুব বেশি গতি নেই। আর স্টাম্পে টানা বল করলে আর সে অনুযায়ী ফিল্ডিং সাজালে রান নেওয়া কঠিন...তবে আউট হওয়াও কঠিন।’
স্মিথ উইকেট নিয়ে যেমনটা ভাবছেন, মাদুগালেও সেটা ভাবলেই বিপদ। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পঞ্চম দিন শেষে আজ মাদুগালে এ উইকেট সম্পর্কে নিজের রেটিং জানাবেন। এখন পর্যন্ত খেলার যে অবস্থা, তাতে পিচের রেটিং তাঁর পক্ষে ‘বাজে’ দেওয়াই যুক্তিযুক্ত। আর ‘বাজে’ রেটিং পাওয়া মানেই সে ভেন্যুর কপালে তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট জুটবে। পাঁচ ডিমেরিট পয়েন্ট পেলেই ১২ মাসের জন্য কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে পারে না কোনো ভেন্যু।
বৃষ্টি খুব বেশি ওভার নষ্ট করেনি (অন্তত ৩৩০ ওভার খেলা হয়েছে), এমন টেস্টের ক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে কম উইকেট পড়ার রেকর্ড ১৭ উইকেট। পঞ্চম দিনের অর্ধেক পার হয়ে যাওয়া রাওয়ালপিন্ডিতে এখন পর্যন্ত পড়েছে মাত্র ১৪ উইকেট।
আইসিসির নীতিমালা অনুযায়ী, ‘টেস্ট ম্যাচের উইকেটে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সিম, বাউন্স, স্পিন থাকতে হবে এবং বল উইকেটরক্ষক পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। যাতে ম্যাচে ব্যাটসম্যান ও বোলাররা সমান সুযোগ পাননি। সম্ভব হলে বোলারদের বাড়তি সুবিধা দেবে। একটা উইকেট তখনই বাজে রেটিং পাবে যখন খুব কম বা একদমই সিম মুভমেন্ট থাকবে না অথবা ম্যাচের কোনো অবস্থাতেই বল বাউন্স বা স্পিন করবে না। এর ফলে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে বোলারদের প্রতিযোগিতা করার সম্ভাবনা নষ্ট হয়।’
নতুন এই নিয়ম অনুযায়ী এখন পর্যন্ত শুধু ২০১৮ সালে ওয়ান্ডারার্সের উইকেট বাজে রেটিং পেয়েছিল। যেখানে রাওয়ালপিন্ডির উইকেটের উল্টোটা হয়েছিল, সেখানে উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল।
সাধারণত রাওয়ালপিন্ডির উইকেট পেসবান্ধব হয়। সর্বশেষ পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে ৩২ উইকেটই পেয়েছিলেন পেসাররা। সে আশাতেই তিন ফাস্ট বোলার নিয়ে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ২৪ বছর পর অস্ট্রেলিয়াকে সফর করতে দেখার আনন্দে একটু বেশিই ব্যাটিংবান্ধব উইকেট বানিয়ে ফেলেছে পাকিস্তান। প্রথম তিন দিনে শুধু সমর্থকদের বিরক্তির কারণ হয়েছিল, কিন্তু এখন সেটা শাস্তিতেও রূপ নিতে পারে।