তাঁতিপাড়া থেকে উঠে এসে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পাটখোলা গ্রামের তাঁতিপাড়ায় মেয়েটার জন্ম। তাঁতের শব্দের সঙ্গেই তার বেড়ে ওঠা। বাবা আক্তার হোসেন নিজেই তাঁতশ্রমিক। আর মা নাসিমা বেগম বোনেন সুতো। ছোটবেলায় নিজেও মায়ের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন সুতো বুনতে। কিন্তু ভাগ্য কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায়, কে বলতে পারে। ছোটবেলায় সুতো বোনা সেই আঁখি খাতুনই হয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়। তাঁতিপাড়া থেকে উঠে এসে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের খেতাব উঠেছে আঁখির হাতে। তাও আবার একজন ডিফেন্ডার হয়ে সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জয় করা চাট্টিখানি কথা নয়।
আঁখিকে অন্য সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে মেলানো যায় না। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার ডিফেন্ডারকে অনেক দূর থেকেও চেনা যায়। শারীরিকভাবে বেশ শক্তিশালী। রক্ষণভাগে খেললেও গোল করাতেও পটু বিকেএসপির নবম শ্রেণিতে পড়া এই ছাত্রী। গ্রুপ পর্বে ভুটানের বিপক্ষে করেছিল জোড়া গোল। দুটোই কর্নার থেকে।
উচ্চতা বেশি হওয়ায় আঁখির ‘হেড ওয়ার্ক’ দারুণ। পুরো টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচেও দেখা যায়নি, সে এরিয়াল বলে লাইন মিস করেছে। লম্বা পায়ে ট্যাকলগুলো হয় নিখুঁত, পজিশন জ্ঞান প্রখর। সবচেয়ে ভালো গুণ, নিচ থেকে দুই উইংয়ে মাপা এরিয়াল পাস দিয়ে আক্রমণ তৈরি করতে পারে। তার পাশে খেলা সেন্টারব্যাক নাজমার সঙ্গে তার বোঝাপড়াটাও দারুণ। সবকিছু মিলিয়ে আঁখি হয়ে উঠছে রক্ষণভাগের এক দক্ষ সেনানীর প্যাকেজ। স্বাভাবিকভাবেই যা চোখ এড়ায়নি বিচারকদের। তাই তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
আঁখি শুধু বোঝে তার হাতে একটি সেরার পুরস্কার উঠেছে। আর তার দল হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। তাই তার উচ্ছ্বাসের বক্তব্যও শুধু দুই এক কথায় সার, ‘আমরা সবাই ভালো খেলেছি। চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে খুশি। আত্মবিশ্বাস ছিল চ্যাম্পিয়ন হতে পারব।’
বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের আজকের এই বিপ্লবের পেছনে আছে বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট। আঁখির উঠে আসা এই টুর্নামেন্ট দিয়েই। ২০১৪ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ইব্রাহিম বালিকা বিদ্যালয় থেকে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলে আঁখি। এরপরে নাম লেখায় বিকেএসপিতে। খেলোয়াড় তৈরির কারখানা থেকে ডাক পায় ২০১৫ সালে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ দলে। সেখানেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।