খাজার স্বপ্নযাত্রা চলছেই, রোমাঞ্চের হাতছানি লাহোরে
দিনের শেষ ওভারে পঞ্চম বলটা ঝুলিয়ে দিলেন মারনাস লাবুশেন। আবদুল্লাহ শফিক জোরের ওপর ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ তুললেন স্লিপে। স্টিভ স্মিথ যেন প্রত্যাশাই করেননি অমন কিছু, প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেরি করে ফেললেন একটু। স্মিথের হাত গলে বেরিয়ে যায় শফিকের ক্যাচ, হলো চার। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হাত গলে বেরোতে পারবে পাকিস্তান? উসমান খাজার আরেকটি শতকের দিনের পর আপাতত এমন প্রশ্নের সামনেই দাঁড়িয়ে লাহোর টেস্ট।
৯০ ওভার, ২৭৮ রান, ১০ উইকেট—পঞ্চম দিনে এ টেস্টের সমীকরণের চলকগুলো আপাতত এমন। জিততে গেলে ২৭৮ রান করতে হবে পাকিস্তানকে, ড্র করতে খেলতে হবে অন্তত ৯০ ওভার। শফিকের ওই ক্যাচ মিস করার অর্থ, অস্ট্রেলিয়ার এখনো প্রয়োজন ১০ উইকেট। ৩৫০ রানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে শফিক ও ইমাম-উল-হকের জুটি দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ ওভার ব্যাটিং করে তুলেছে ৭৩ রান। ৪২ রানে ব্যাটিং করছেন ইমাম, শফিক অপরাজিত ২৭ রানে।
অতীত বলছে, কাজটা মোটেও সহজ নয় পাকিস্তানের জন্য। লাহোরের এ ভেন্যুতে এখন পর্যন্ত চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটা ইংল্যান্ডের। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানকে হারানো ম্যাচে তাদের লক্ষ্য ছিল ২০৯ রান। চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ওভার ব্যাটিং করে ম্যাচ বাঁচানোর রেকর্ড অবশ্য পাকিস্তানেরই, ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৭ ওভার ব্যাটিং করে ড্র করেছিল স্বাগতিকেরা।
এমনিতে লাহোরের উইকেটটা ধীরগতির, তবে রিভার্স সুইং যেমন মিলছে, মাঝেমধ্যে দেখা যাচ্ছে বড় বাঁকও। তার ওপর প্রথম ইনিংসে ২০ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে মহানাটকীয় পাকিস্তানি ধসের উদাহরণও তো আছে অস্ট্রেলিয়াকে উজ্জীবিত করতে! অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রেরণা হতে পারে করাচিতে শেষ ইনিংসের মহাকাব্যিক ব্যাটিং।
অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ২২৭ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করতে প্যাট কামিন্স উজ্জীবিত হয়েছেন খাজার দারুণ ব্যাটিংয়েই। গত অ্যাশেজ দিয়ে দলে ফেরার পর থেকে এ বাঁহাতি আছেন স্বপ্নের ফর্মে। এ সিরিজে নিজের দ্বিতীয় শতকটা যেমন পেলেন আজ। প্রথম ইনিংসে ৯ রানের জন্য ১০০ মিস করলেও সে আক্ষেপ ঘোচাতে বেশি সময় লাগল না তাঁর। খাজা অবশ্য ফিরতে পারতেন ৩১ রানে। নাসিম শাহর বলে বোল্ড হয়েছিলেন, তবে নাসিমের পা ছিল পপিং ক্রিজের বাইরে। খাজা এরপর ফিরে তাকাননি আর।
বিনা উইকেটে ১১ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। খাজা ও ডেভিড ওয়ার্নারের দৃঢ় শুরুতে প্রথম ব্রেকথ্রু পেতে প্রায় পুরো সেশনটাই অপেক্ষা করতে হয়েছে পাকিস্তানকে। মধ্যাহ্নবিরতির ঠিক আগে শাহিনের দুর্দান্ত রিভার্স সুইং ডেলিভারিতে উড়ে গেছে ওয়ার্নারের অফ স্টাম্প। ৫১ রান করে ফেরার পথে শাহিন এসে হাত মিলিয়ে গেছেন ওয়ার্নারের সঙ্গে, আগের দিন থেকেই তো চলছে দুজনের মধ্যে খুনসুটি!
মারনাস লাবুশেন অবশ্য দাঁড়িয়ে ছিলেন পেয়ারের সামনে। মুখোমুখি হওয়া ১২তম বলে সাজিদ খানের বলে চার মেরে সেটি থেকে বেঁচেছেন লাবুশেন। সাজিদের পর নোমান আলী—দুই পাকিস্তানি স্পিনারের ওপর চড়াও হয়েছিলেন, ৩৬ রানের ইনিংসে মারা ৬টি চারই মেরেছেন এ দুজনকে। শেষ পর্যন্ত নোমানকে লেগ স্টাম্পের বাইরের স্লগ সুইপ করতে গিয়েই মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৮০০০ রানের মাইলফলক ছুঁতে স্মিথের প্রয়োজন ছিল ৭ রান। প্রথম ইনিংসে ৫৯ রানে আউট হওয়া স্মিথ সেটি ছুঁয়েছেন হাসান আলীকে দারুণ এক ড্রাইভে চার মেরে। ১৫১ ইনিংসে ৮০০০ রান হলো সাবেক অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের, ভাঙলেন কুমার সাঙ্গাকারার ১৫২ ইনিংসে এ মাইলফলক ছোঁয়ার রেকর্ড।
স্মিথ মাইলফলক ছোঁয়ার আগেই আক্রমণ শুরু করেন খাজা, হাসান আলীর এক ওভারে টানা তিন চার মেরে নব্বইয়ের কাছাকাছি চলে যান দ্রুতই। এরপর অবশ্য সময় নিয়েছেন, ১৪৪ বলে ৮৫ রান করা খাজা তিন অঙ্ক পূর্ণ করেছেন ১৬৯ বলে। ক্যারিয়ারে খাজার এটি ১২তম শতক, যার ৪টিই পেলেন সর্বশেষ ৫ টেস্টে।
খাজার শতকের পর খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি কামিন্স। চা-বিরতির পর স্মিথ ফিরেছেন নাসিমের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে, ২৭ বলে ১৭ রান করে। এর আগেই অবশ্য ফিরতে পারতেন, আগের ওভারে নোমান আলীর বলে আজহার আলী ফেলেছিলেন স্মিথের সহজতম ক্যাচ। দিন শেষে সে স্মিথই আলোচনায়, ক্যাচ হাতছাড়া করে!
স্মিথের ক্যাচ হাতছাড়া হওয়াও ইঙ্গিত দিচ্ছে, শেষ দিনে সব রকম ফলের সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হওয়া লাহোর টেস্টে রোমাঞ্চের আশা করতেই পারেন আপনি।