গতকালের কঠিন শুরুটা পার হয়ে মুশফিক-লিটনের ওই জুটিতে পুনর্গঠনের কাজটা দারুণ হয়েছিল আমাদের। ফলে প্রত্যাশাটাও বেড়ে গিয়েছিল। ওদের জুটিটা আজ একটু বড় হলে আমরা আরেকটু দাপুটে অবস্থায় যেতে পারতাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে লিটন আজ বেশিক্ষণ টিকতে পারল না। মনে হয়েছে লিটন সময় নিয়ে একটু বেশি সাবধানী ইনিংস খেলতে চেয়েছে। ওর মতো ব্যাটসম্যান ইতিবাচক থাকলে একরকম ফুটওয়ার্ক, একটু রক্ষণাত্মক থাকলে সেটি ভিন্ন হয়। হয়তো এ কারণেই একসময় একটু নড়বড়ে হয়ে আউট হয়ে যায়। ইনিংসের শুরুতে ওর এক রকমের জড়তা থাকে। নতুন একটা দিনে আজও সেটি ছিল বেশ কিছুক্ষণ।
তবে মুশফিকের ব্যাটিংয়ে আজ নতুন একটা দিক দেখলাম—উইকেট দিয়ে আসতেই চাচ্ছে না। খেলাটা দারুণ উপভোগ করছে মনে হচ্ছে। গতকালও ভালো খেলেছে, তবে আজ যেন অন্য পর্যায়ে খেলছিল। ওর রানের ক্ষুধা, দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটিং করার ক্ষুধার সঙ্গে ইনিংসের নিয়ন্ত্রণ দেখাটা দারুণ একটা ব্যাপার ছিল আজ।
এমনিতে মোসাদ্দেক এমন পজিশনে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে অভ্যস্ত, ভালোও করে। তবে টেস্ট ক্রিকেটে এত লম্বা সময় পর ফিরে থিতু হতে পারল না আজ। লিটনের পর মোসাদ্দেকও দ্রুত আউট হয়ে যাওয়াতে কিন্তু ৩১০-৩২০ রানের মধ্যেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কারণ, আমাদের টেইল-এন্ড তো অমন কার্যকরী হয় না। তাইজুল ও ইবাদতকে তাই কৃতিত্ব দিতে হবে। মুশফিকের সঙ্গে তাইজুলের অষ্টম উইকেট জুটিতে একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ৪৯ রান উঠল, তেমনি বেশ খানিকটা সময় ব্যাটিং করল ওরা। এ টেস্টের পরিপ্রেক্ষিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
আগেও বললাম, আমাদের টেইল-এন্ড ব্যাটসম্যানদের স্কিল খুব একটা দৃঢ় না। তবে আজ ইবাদত সীমিত স্কিল দিয়েই যেভাবে বাউন্সার সামলেছে, সাহসী ব্যাটিং করেছে—দারুণ ইতিবাচক একটা ব্যাপার। টেইল-এন্ডের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আরও কাজ করা দরকার। অন্তত যাতে ডিফেন্স করতে পারে, নাহলে চোটের একটা শঙ্কা থেকে যায়। শরীফুলের ক্ষেত্রে কিন্তু তাই হয়েছিল।
তবে গতকাল এবং আজ—দুই দিনের শুরু বিবেচনায় নিলে ৩৬৫ রান কিন্তু দিন শেষে বেশ ভালো একটা স্কোর। শ্রীলঙ্কার এখন যে অবস্থা, তাতে খেলা কোন দিকে যাবে, সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের সামনে শ্রীলঙ্কাকে চতুর্থ ইনিংসে, পঞ্চম দিনের কন্ডিশনে খেলানোর সুযোগ আছে। ওদেরকে তাই কাল বেশি স্কোর করতে দেওয়া যাবে না।
ব্যাটসম্যান ইবাদতের মতো বোলার ইবাদত নিয়েও বলতে হয়। আগের টেস্টেও ওকে দরকার ছিল, সেটি আগেই বলেছি। ওর বলে গতি আছে, ফ্ল্যাট উইকেটেও যেটি দরকার। আজ তো দুজন পেসারের মধ্যে ওর বোলিংই বেশি কার্যকর ছিল। আজও ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের ওপর গতিতে বল করেছে, উইকেটও পেয়েছে, সেটিও গতির কারণেই। শরীরী ভাষাও ভালো লেগেছে। ওর গতিটা আমাদের কাজে লাগানো উচিত।
ইবাদতের গতি প্রসঙ্গে বলতে হয়, এ টেস্টে শ্রীলঙ্কার দুই মিডিয়াম পেসারের বোলিং আমাদের সব পেসারের জন্যই শিক্ষা, শুধু যারা খেলছে তারা নয়, যারা দেখছে তাদের জন্যও। ওরা বেশ কয়েকটা উইকেট আদায় করে নিয়েছে স্কিল দিয়েই। ১০টি উইকেটের একটি রানআউট বাদ দিয়ে তো ৯টিই ওদের। স্পিনাররা তো তেমন কার্যকরী ছিল না। তবে পেসাররা দেখিয়েছে, এই কন্ডিশনেও পেস বোলিং কাজে আসে। যদি আগে থেকে ধরে নিই যে এখানে হবে না, তাহলে কখনোই হবে না। মানসিকতাটা বদলাতে হবে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো সহায়তা পাওয়া যাবে না, তবে এখানেও স্কিল কাজে লাগিয়ে উইকেট পাওয়া সম্ভব।
অবশ্য কাল যেমন বলেছি, আমাদের একজন পঞ্চম জেনুইন বোলার দরকার ছিল। মোসাদ্দেক ভালো ব্যাটসম্যান, কিন্তু এ টেস্টে তাকে মূলত স্পিনার হিসেবেই খেলানো হচ্ছে। সেটি আজ অন্তত একেবারেই কাজে আসেনি, তা তো টের পাওয়াই গেল। এখানে জেনুইন একজন স্পিনার আসলেই খুব দরকার ছিল। সে ক্ষেত্রে হয়তো ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে আরেকটু কম্প্রোমাইজ করতে হতো। তবে সাহসটা দেখাতে পারলে কিন্তু কাজে দিতে পারত। ওদের লম্বা কোনো জুটি হলে পঞ্চম একজন বোলার দরকার পড়বে। আর আমাদের একটু ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বোলারও দরকার।
ফিল্ডিংয়ে কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছি আজ। সুযোগ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ‘হাফ চান্স’ হলেও এ ধরনের ম্যাচে চাপ তৈরি করার অন্যতম উপায় সেসব। প্রথম টেস্টে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ক্যাচ মিস তো অনেক ভুগিয়েছে।
তবে সব মিলিয়ে এ উইকেটটা মিরপুরের অন্য উইকেটের তুলনায় একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে গতকাল থেকেই। সবার জন্যই কিছু না কিছু আছে। টেস্টের জন্য বেশ ভালো উইকেটই মনে হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত এ টেস্টে উইকেটের ভূমিকা কেমন হয়, সেটি দেখতে তাই শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।