২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

পুষ্টির জন্য চাই দুধে স্বনির্ভরতা : আহসান খান চৌধুরী

>
আহসান খান চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো
আহসান খান চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো
পুষ্টির জন্য দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ বাড়ানো জরুরি। দেশের দুগ্ধশিল্পের বর্তমান অবস্থা ও উন্নতিতে করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন এ খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ

প্রথম আলো: দেশের দুগ্ধশিল্প খাতের বর্তমান পরিস্থিতি কী?
আহসান খান চৌধুরী: দেশে দুধের যে চাহিদা, তার সিংহভাগ বিদেশ থেকে আসে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশে গুঁড়া দুধ আমদানি হয়। সমস্যা হলো, সময়ে সময়ে দুধের দাম অনেক বেড়ে যায়। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সীমিত। দাম বেড়ে গেলে ভোক্তাদের পক্ষে দুধ কেনা কঠিন হয়ে যায়। আমি মনে করি, দেশ গড়ার জন্য যেমন অবকাঠামো দরকার, তেমনি স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনে দরকার পুষ্টি। পুষ্টির ভিত্তি হলো দুধ। আমাদের তাই দুধের উৎপাদন বাড়াতে নজর দিতে হবে, নিজেদের স্বনির্ভর হতে হবে। আবাদযোগ্য জমি কম থাকলেও দুধের উৎপাদন বাড়ানো যায়।

প্রথম আলো: দুগ্ধশিল্পের কথা জানতে চাইছিলাম। পরিস্থিতি কী? কোনো সমস্যা কি আছে?
আহসান: দুগ্ধশিল্পে সরকার অনেক সহায়তা দেয়। তবে সমস্যা হলো, এ খাত এখনো শুধু তরল দুধনির্ভর। বৈচিত্র্য আনতে হবে। পনির তৈরিতে নজর দেওয়ার বিরাট সুযোগ আছে। আইসক্রিম শিল্প আমদানি করা গুঁড়া দুধের ওপর নির্ভরশীল। এ খাতে দেশীয় দুধ ব্যবহার করা যায়। দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাবার, যেমন দই, মিষ্টি, মাখন, মিষ্টি ইত্যাদির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন ধরুন, দেশে মাখনের দাম অনেক বেশি। এটা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে ভোগ অনেক বাড়বে।

ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে দেখবেন, সেখানে দুধ প্রচুর উৎপাদিত হয় বলে মানুষ দুগ্ধজাত পণ্যসামগ্রী বেশি গ্রহণ করতে পারে। কারণ, সেটা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। বাংলাদেশে দুধ উৎপাদন বাড়ালে সেখান থেকে গুঁড়া দুধ ও অন্যান্য পণ্য তৈরি করা যাবে। তখন আমদানিনির্ভরতা কমানো যাবে। প্রাণ প্রচুর দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানি করে। আমরা প্রতি মাসে দেড় লাখ কার্টন ‘ইয়োগার্ট ড্রিংক’ ভিয়েতনামের মতো দেশে পাঠাই। আগামী দিনগুলোয় এদিক দিয়ে বড় সম্ভাবনা তৈরি হবে।

দুধের উৎপাদন বেশি হয় পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে। ছবি: সংগৃহীত
দুধের উৎপাদন বেশি হয় পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো: গরু পালন বাড়াতে কী করা যায়?
আহসান: কৃষককে গরুর কেনার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিতে হবে। এখনো দেওয়া হয়, তবে আওতা বাড়ানো জরুরি। যদিও গরু কিনতে কৃষককে ঋণ দেওয়া ব্যাংকের জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমরা যারা করপোরেট, বাজারে আমাদেরও অনেক দুর্বলতা আছে। এটা মেনে নিয়ে শিল্পায়নের জন্য যদি শিল্পে ঋণ দেওয়া যায়, তাহলে কৃষককে কেন নয়? ভালো জাত, উন্নত খাদ্য ও কৃষককে গরুর খামার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ—এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে দেশে দুধের উৎপাদন বাড়বে। খাদ্যের দাম যদি বেশি হয়, আর গরু যদি কম দুধ দেয়, তাহলে উৎপাদন খরচ বেশি হবেই। ভারতে গাভিপ্রতি দুধের উৎপাদন বেশি। আমরা ভারত থেকে ভালো জাত নিয়ে আসতে পারি। যদিও দেশে ভালো জাত আনা খুবই কঠিন। সরকারকে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে হবে।

এখন দুধের উৎপাদন বেশি পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে। অন্যান্য অঞ্চলেও দুধের বিপ্লব ঘটাতে হবে। আমি অনেক সাংসদকে বলেছি তাঁদের এলাকায় দুধ উৎপাদনে কার্যক্রম নিতে। তাহলে আমরা সেই দুধ কিনতে পারব।

প্রথম আলো: পাবনা ও সিরাজগঞ্জে যে মডেলে সফলতা পাওয়া গেছে, তা কেন অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না?
আহসান: সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় দুধ উৎপাদনের কেন্দ্র বা হাব গড়ে তুলতে উন্নয়নসহযোগী সংস্থা আমাদের সহায়তা করেছে। এখন যদি বলেন, ভোলায় একটি ‘ডেইরি হাব’ গড়ে তোলেন, সেটা সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ, ১৪ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণ নিয়ে সেটা টেকসই হবে না। এখন ব্যাংকঋণ উচ্চ সুদের। খেলাপি হওয়া এড়াতে আমাদের ব্যাপক সতর্ক থাকতে হয়। তাই উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। এ ক্ষেত্রে সরকার এগিয়ে আসতে পারে। বিশেষ অঞ্চলভিত্তিক ডেইরি হাব গড়ে তুলতে স্বল্প সুদে তহবিল দিলেই তা সম্ভব। সমমূলধন তহবিল (ইইএফ) নামের একটি ব্যবস্থা ছিল। সেটা দিয়েই প্রাণ ডেইরি গড়ে উঠেছে। এ তহবিল এখন নানা কারণে বিতর্কিত। ভদ্রলোকদের পক্ষে সেখান থেকে ঋণ নেওয়া কঠিন। দুগ্ধ খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পুনঃ অর্থায়ন তহবিল করতে পারে। আবার শুধু দুগ্ধশিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।

প্রথম আলো: দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি হলেও বেকারত্বের চাপ কমছে না। বিপুল শিক্ষিত তরুণ চাকরির খোঁজে রয়েছেন। তাঁদের কর্মসংস্থানের জন্য গবাদিপশু পালন কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
আহসান: বেকারত্বের চাপ সামাল দিতে আগামী দিনগুলোয় দুটি খাত বড় ভূমিকা রাখতে পারে, গবাদিপশু পালন ও মাছ চাষ। প্রাণ এ খাতে বড় কাজ করবে। এ দেশে মাংসের দামও বেশি। ফলে উৎপাদনের সুযোগ বেশি। দেশে গবাদিপশু পালনে আগ্রহী তরুণের সংখ্যা প্রচুর। তাঁদের যদি বড় শিল্পের সহায়ক হিসেবে যুক্ত করা যায়, তাহলে বেকারত্বের চাপ কমানো যাবে।

তরুণদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া আরও বাড়ানো দরকার। উন্নত জাতের গাভি পাওয়া নিশ্চিত করলে, গরুর ভালো খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করলে তরুণেরা খামার করে দুধ উৎপাদন অনেক বাড়াতে পারবেন। আমরা শিল্প খাত সেই দুধ কিনে নিতে পারব। তাঁদের পরামর্শ ও গরুর চিকিৎসাসহায়তাও দিতে পারব। এ মডেলটি পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে রয়েছে। এখন অন্য জায়গায় নেওয়া জরুরি।