দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে লা রিভের বিদেশযাত্রা
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসা দিয়ে শুরু। সাফল্যের সঙ্গে আট বছর দেশ–বিদেশে সওদাগরি করার পর নতুন পরিকল্পনা করে রিভ গ্রুপ। এর পাশাপাশি পোশাকের একটি ব্র্যান্ড দাঁড় করায় তারা। সেটিই আজকের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড লা রিভ। ফরাসি শব্দ রিভ অর্থ স্বপ্ন। সেখান থেকেই লা রিভের স্লোগান—‘ওয়্যার ইয়োর ড্রিমস’।
২০০৯ সালে ঢাকার উত্তরা ও বনশ্রীতে ছোট্ট দুটি বিক্রয়কেন্দ্র নিয়ে লা রিভের যাত্রা শুরু। এক দশকের যাত্রায় দেশের ফ্যাশনজগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের বাজারে তাদের ব্যবসা প্রসারিত হয়েছে, বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকায় ১৪টি, সিলেটে ২টি ও খুলনায় ১টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে লা রিভের। মিরপুরে আছে ৬০ হাজার বর্গফুটের কারখানা। সেখানে কাজ করেন দেড় হাজার পোশাকশ্রমিক। সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে লা রিভ।
লা রিভ দেশের গণ্ডিতে আটকে নেই। বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়েছে ব্র্যান্ডটি। চলতি বছরের মে মাস থেকে সিঙ্গাপুরে লা রিভের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে নিজস্ব কোনো বিক্রয়কেন্দ্র নয়, বরং জাপানভিত্তিক ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ইসেতানের তিনটি বিক্রয়কেন্দ্রে লা রিভের সালোয়ার–কামিজ, টিউনিক, মেয়েদের শার্ট, পালাজ্জো ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। ইসেতানে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ম্যাঙ্গো, দেসিগোয়াল, পাশমা ও সিঙ্গাপুরিয়ের হোলা, ইন, জ্যাসোকা ইত্যাদির পাশাপাশি আছে লা রিভের পোশাক।
উল্টো পথে হাঁটছি। কারণ, নারীদের পোশাকের চাহিদা বেশি। তখন আমরা মোট পোশাকের ৬০ শতাংশ নারী ও ৪০ শতাংশ পুরুষদের জন্য করতে লাগলাম।সিঙ্গাপুরে যাত্রার গল্পটা শোনালেন লা রিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মন্নুজান নার্গিস। বললেন, ‘গত বছর সিঙ্গাপুরে আমরা একটি ফ্যাশন শোতে অংশ নিই। সেখানের লা রিভের পোশাক পছন্দ করেন ইসেতানের কর্মকর্তারা। তাঁরা লা রিভের পোশাক ইসেতানের দোকানে বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করেন।’ তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের তরুণেরা খুবই ফ্যাশন–সচেতন। তাঁরা দ্রুত পোশাক পরিবর্তন করেন। তাই বাজারটি ধরা খবু চ্যালেঞ্জের। তবে খুবই সম্ভাবনাময়। অবশ্য কেবল সিঙ্গাপুর গিয়েই থামতে চায় না বাংলাদেশের পোশাকের এই ব্র্যান্ড। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বাজার ধরতে কাজ করছে লা রিভ। তা ছাড়া ভারতে অনলাইনের মাধ্যমে পোশাক বিক্রি করছে তারা। এমনটাই জানালেন মন্নুজান নার্গিস, ‘আমরা স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া ও আসিয়ান দেশগুলোতে লা রিভ পৌঁছে যাবে।’
আবার পেছনে ফেরা যাক। সফটওয়্যারের ব্যবসা থেকে পোশাক। কীভাবে? মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘২০০০ সালে রিভ গ্রুপের সফটওয়্যার তৈরির প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমসের যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট অফিস সিঙ্গাপুরে। তা ছাড়া বাংলাদেশসহ ১১টি দেশে আঞ্চলিক কার্যালয় আছে। তো ২০০৮ সালের দিকে বৈশ্বিক মন্দা আমাদের বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। তখন একটি খাতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর না করে ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা শুরু করি আমরা। বাজার বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশে পোশাকের ব্যবসার ভালো সম্ভাবনা আছে। তা ছাড়া ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশনের প্রতি আমার একটা বিশেষ ঝোঁক তো ছিলই।’
পূর্ব–অভিজ্ঞতা না থাকায় পোশাকের ব্যবসায় প্রথম তিন বছর শিক্ষানবিশকাল হিসেবে নেয় লা রিভ। শুরু থেকেই দেশীয় ঐতিহ্য ও পাশ্চাত্য—এই দুই ধারাকে সংমিশ্রণ করে পোশাকের নকশা করছে ব্র্যান্ডটি। আধুনিকতার পাশাপাশি নতুনত্ব থাকায় সহজেই ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় উঠে আসে লা রিভের পোশাক।
শুরুর দিকের কথা বলেন মন্নুজান নার্গিস, ‘প্রথম দিকে আমরা যত পোশাক করতাম, তার ৬০ শতাংশ পুরুষ ও ৪০ শতাংশ ছিল নারীদের। পরে আমরা দেখলাম, উল্টো পথে হাঁটছি। কারণ, নারীদের পোশাকের চাহিদা বেশি। তখন আমরা মোট পোশাকের ৬০ শতাংশ নারী ও ৪০ শতাংশ পুরুষদের জন্য করতে লাগলাম।’
বর্তমানে লা রিভের পোশাকের নকশা করার জন্য আছেন ২০ জন ডিজাইনার। তাঁদের মধ্যে দুজন ভারতীয়ও আছেন। তা ছাড়া দেশের পাশাপাশি চীন থেকেও কাপড় আমদানি করছে তারা। উন্নত মান নিশ্চিতে অনেক পোশাকের প্রিন্টিংয়ের কাজ চীন থেকে করিয়ে আনে লা রিভ।
শুভংকর কর্মকার : প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক