২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উদ্ভাবনাময় ঝুড়ি

সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র্যের বিষয়টি এখন বাস্তবতা। ছবি: প্রথম আলো
সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র্যের বিষয়টি এখন বাস্তবতা। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছরের কম সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়। এ অর্জন ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়া না হলেও এ দেশের জনমানুষের জীবনযাপনের মান উন্নত করার চেষ্টা সব সময়ই কমবেশি অব্যাহত ছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিই ছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি। জন্মলগ্নে বাংলাদেশকে বলা হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, যার অর্থ আজন্মকাল এ দেশ পরনির্ভরতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে না। গত কয়েক দশকের মধ্যে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন বিদেশি বিশেষজ্ঞরাই বলছেন যে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উদ্ভাবনাময় ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। এ অর্জনের পেছনে রয়েছে সংবিধানের মূলনীতিতে যে রূপকল্প দেওয়া হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার। রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ছিল: অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা, অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিত্সা নিশ্চিত করার কথা। অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে ছিল: নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগত দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ, কুটিরশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের বিকাশ, শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সর্বোপরি সামাজিক নিরাপত্তার জন্য, বিশেষ করে বেকার, বিধবা ও বৃদ্ধ মানুষের সরাসরি সরকারি সাহায্য লাভের বিষয়টি অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, জনগণের পুষ্টি উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করবে। সামাজিক নিরাপত্তা বিশ্বের উন্নত, মধ্যম আয়ের ও অনুন্নত শ্রেণিভুক্ত প্রায় সব দেশেই কমবেশি চালু আছে।

১৯৯৯ সালে অমর্ত্য সেন সামাজিক নিরাপত্তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ধারণার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করেন (অমর্ত্য সেন, দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৯)। অমর্ত্য সেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানকে বাজার নির্ভরশীল করা যায় না। বরং সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্ম অধিকার হিসেবে গণ্য। এর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাঁর মতে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে যে হারে বেকারত্ব রয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ না থাকলে ওই সব দেশের লোকও অনাহারে জীবন যাপন করত, হয়তোবা দুর্ভিক্ষও হতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, খাদ্য গ্রহণের সুযোগ যদি বাজারে অধিক মূল্যের কারণে সংকুচিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রের কর্তব্য সে অভাব দূর করা।

কৃষি খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি পৃথিবীর নজর কেড়েছে। ছবি: প্রথম আলো
কৃষি খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি পৃথিবীর নজর কেড়েছে। ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীনতার জন্মলগ্নে বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে ও তার পরবর্তী কয়েক দশকের পর বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এখন বাংলাদেশকে উদ্ভাবনাময় ঝুড়ি হিসেবে গণ্য করেন। ‘খাদ্যনিরাপত্তা ও চিকিত্সা’ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশকে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে চিহ্নিত করেন। ফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নেও নব্বইয়ের দশকের তুলনায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এসব মিলেই কৃষি খাতকে গণ্য করা হয়।

সাম্প্রতিক কালের বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি খাতের অভূতপূর্ব উন্নতি একটি না–বলা কাহিনি। অর্থাৎ কীভাবে উন্নতি হলো, তা এখনো অজানা। এ কথা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে কৃষি খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন অতি দ্রুত হারে অর্জন করা সম্ভব। এ কথা বিবিএসের বসতবাড়ির আয় ও ব্যয়ের পরিসংখ্যান প্রমাণ করে। ১৯৯১-৯২ সালে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল শতকরা ৫৬ দশমিক ৭, যা ২০১০ সালে হ্রাস পেয়ে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। এ সূত্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হতদরিদ্রের সংখ্যা একই সময়ে ৪১ দশমিক ১ থেকে হয় ১৭ দশমিক ৬। ২০১৬ সালের এক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এক অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ওই সালে হতদরিদ্রের শতকরা হার ১২ দশমিক ৮ হবে। এ তথ্য বিআইডিএসের ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের জার্নালে প্রকাশিত। তবে হতদরিদ্রের শতকরা হার গ্রামাঞ্চলেই অধিকতর।

সার্বিক অর্থনীতির বিষয়ে বাংলাদেশের বহুজাতিক উন্নয়নসহযোগীরা বর্তমানে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অন্যদিকে এ বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জিডিপির বৃদ্ধির হার আগের তুলনায় বাড়লেও (এক) দারিদ্র্যবিমোচনের শতকরা হারে আগের তুলনায় গতি কমেছে এবং (দুই) আয়ের বৈষম্যের বিষয়টি দৃশ্যমান। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃশ্যপট উজ্জ্বল হলেও কিছু সমস্যা রয়েই গেছে। উল্লিখিত বিআইডিসের সেপ্টেম্বর (২০১৮) প্রকাশনায় এক গবেষক এ দুটি সমস্যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা প্রণিধানযোগ্য। তাঁর কথায় দারিদ্র্যবিমোচনের হার হ্রাস ও আয়ে অসমতার কারণে প্রকৃত আয় কমে গেছে। সাম্প্রতিক কালে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি কিছুটা হলেও এ দুই সমস্যার কারণ চিহ্নিত করা যায়। সার্বিকভাবে গবেষক মনে করেন যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তনের অন্য কারণ শিক্ষার প্রসার। তবে আঞ্চলিক দারিদ্র্যের হার সমভাবে হ্রাস পায়নি।

শিক্ষা ছাড়াও ক্ষুদ্রঋণের ব্যাপকতাও গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেককেই কম উপার্জনের কাজ থেকে বেশি উপার্জনের কাজে যেতে অবদান রেখেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যে উন্নয়নের ধারা নিয়ে দেশে ও বিদেশে কথা বলা হচ্ছে, সেই উন্নয়নের অংশীদার কে বা কারা? কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বর্তমান উন্নয়নের দাবিদার হতে পারে না। তবে সরকারসহ আরও অনেক গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে এর অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। গোষ্ঠীর মধ্যে বিদেশি উন্নয়নসহযোগী ছাড়াও এ দেশের কৃষক ও শ্রমিকেরাও দেশের উন্নয়নের অংশীদার। একইভাবে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এনজিওসহ মিডিয়া।

দারিদ্র্যবিমোচনের অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও উন্নয়নের সাফল্যসংক্রান্ত বিতর্কে চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হলো দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য আঞ্চলিক ভিত্তিতে অসম। দেশের পূর্বাঞ্চলের তিনটি জেলায়, যথা চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেটে ২০০০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের শতকরা হার অধিকতর হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমের জেলাগুলোর মধ্যে বরিশাল ও খুলনা ছাড়া রাজশাহী ও রংপুরে সে হারে হ্রাস পায়নি। পশ্চিমের জেলার মধ্যে রংপুরের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

জানা যায়, আমাদের প্রতিটি খাতে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে বা ভবিষ্যতেও হবে, তা জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত টেকসই উন্নয়ন বা এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাস্তবায়ন করা হবে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। পত্রিকান্তরে জানা যায়, আট নম্বর এসডিজিতে জিডিপিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অথচ জিডিপির হ্রাস/বৃদ্ধি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় হলেও তা আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট নয়। জিডিপিনির্ভর অর্থনৈতিক উন্নতি প্রক্রিয়ায় অসম উন্নয়নের বিভিন্ন দিক দৃশ্যমান হয় না। অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজও একই মত পোষণ করে বলেছেন, সার্বিক উন্নয়নের জন্য নতুন মাপকাঠি খুঁজতে হবে। কারণ, জিডিপি আয়বৈষম্য দৃশ্যমান করে না। এ ছাড়া এতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অবদান গণনায় আসে না এবং পরিবেশের ক্ষতিও অনেকটাই ধরা পড়ে না।

সবজি উৎপাদনে আমাদের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। ছবি: হাসান রাজা
সবজি উৎপাদনে আমাদের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। ছবি: হাসান রাজা

টেকসই উন্নয়নের জন্য মোট ১৭টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কয়েকটি আলোচনা করা যায়। প্রথমটি হলো সর্বত্র সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান। দ্বিতীয়টি হলো ক্ষুধার অবসান, খাদ্যনিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার। প্রথমটি বাস্তবতাবিবর্জিত। কারণ, দারিদ্র্য চিরতরে অবসান সম্ভব নয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যে মানুষ বা পরিবার আজ সচ্ছল, সে কিছুদিনের মধ্যেই দারিদ্র্যের শিকার হতে পারে। বাংলাদেশে এ সম্ভাবনা অনেক বেশি। উদাহরণ হলো, নদীভাঙনে ঘরবাড়িসহ কৃষিজমির বিলুপ্তি। প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনায় উপার্জনক্ষম মানুষের মৃত্যু বা পঙ্গুত্ববরণ। এ বাস্তবতা মনে রেখেই কাজ করতে হবে। দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো ক্ষুধার অবসান, খাদ্যনিরাপত্তা ও টেকসই কৃষির প্রসার। ক্ষুধার অবসান বা জিরো হাঙ্গারও শতভাগ অর্জন সম্ভব নয়। অভিজ্ঞতার আলোকেই এ কথা বলা যায়। ১৯৯৬ সালে বিশ্ব খাদ্য সামিটের নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল ওই সময়ের ৮০০ মিলিয়ন ক্ষুধার্ত জনমানুষের সংখ্যা ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেক করা হবে। বাস্তবে তা হয়নি। এফএওর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮২০ মিলিয়ন ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনা দুরূহ বিষয়।

তবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুধা নিরসনের ক্ষেত্রে খাদ্য গ্রহণের বৈচিত্র্যের বিষয়টি দৃশ্যমান। অতীতে ক্ষুধা নিরসনের জন্য ভাত খাওয়াই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। ভাতের অভাব মানেই ক্ষুধার চিত্র। এ চিত্র বর্তমানে পাল্টে গেছে। মাছসহ ডিম ও মাংস উত্পাদনের ব্যাপকতার কারণে মাথাপিছু এ ধরনের খাদ্যের প্রাপ্তি আগের তুলনায় সহজ। অন্যদিকে সবজি চাষে একটি নীরব বিপ্লব অর্জিত হয়েছে। এসব খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি খাদ্য গ্রহণের বৈচিত্র্যের দৃশ্য প্রমাণ করে। বিবিএস ও বিআইডিএসের এ–সংক্রান্ত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে যে মাথাপিছু চালের পরিমাণ সার্বিক খাদ্যের মধ্যে আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। তবে এ কথা সত্যি, এই বৈচিত্র্য শহরের তুলনায় গ্রামে কম। তবু ধীরগতিতে হলেও গ্রামাঞ্চলেও এ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।

ভাতকে বলা হয় বাংলাদেশিদের প্রধান খাদ্য। মাছে-ভাতে বাঙালি—এ কথাও ছিল সর্বজনবিদিত। তবে নব্বই দশকের গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের মাথাপিছু প্রাপ্যতা হ্রাস পেয়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, তাতে মাছে–ভাতে বাঙালি কথাটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। একই সঙ্গে ভাত খাওয়ার মাথাপিছু পরিমাণ অনেক হ্রাস পেয়েছে। ফল খাওয়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র্যের বিষয়টি এখন বাস্তবতা, যা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করা যায়।

পোলট্রি খাতে অনেক এগিয়েছে বাংলােদশ। ছবি: প্রথম আলো
পোলট্রি খাতে অনেক এগিয়েছে বাংলােদশ। ছবি: প্রথম আলো

আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ইফপ্রি) ডিসেম্বর ২০১৮–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাথাপিছু ভাত খাওয়ার পরিমাণ ৩৯৬ গ্রাম, যা অতীতে ৫০০ গ্রামের অধিক ছিল। অন্যদিকে, অ্যাকুয়াকালচারের প্রসারের কারণে অধুনা মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এফএওর হিসাব অনুযায়ী, মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ ১৯৮০ সালে ছিল ৭ দশমিক ৭ গ্রাম; ২০০০ সালে এই পরিমাণ হয় ১৩ গ্রাম এবং ২০১০ সালে হয় ১৮ গ্রাম। বিবিএসের ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী এর পরিমাণ হয় ২৩ গ্রাম। ইফপ্রির ২০১১-১২ সালের হিসাব অনুযায়ী এর পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৫০ গ্রাম। অর্থাৎ বাংলাদেশে পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যাভ্যাসের সূচনা হয়েছে।

টেকসই উন্নয়নের তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা সব বয়সী সব মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করা, একাদশতম লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাতসহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলা এবং ষোড়শ লক্ষ্যমাত্রা হলো টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার প্রচলন। টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে, তবে এ ধরনের উন্নয়ন মানবিক উন্নয়নের বিকল্প হতে পারে না। অতীতে জাতিসংঘ মানবিক উন্নয়নের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিল। মানবিক উন্নয়নের সূচকও করা হয়েছিল। বাংলাদেশের জন্য মানবিক উন্নয়নই বর্তমান প্রেক্ষাপটে জরুরি হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও তা মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়। এ কথা বলার কারণ হলো, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাফল্য অর্জন করলেও রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে, অর্থাৎ মানবিক উন্নয়নে পিছিয়ে যাচ্ছে।

এ এম এম শওকত আলী সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকােরর খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক উপদেষ্টা