ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন উপাচার্যের কেউই চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন অথবা অপসারিত হয়েছেন। উপাচার্যদের নিয়োগ-বাণিজ্য, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বার্থান্বেষী শিক্ষকদের ইন্ধনসহ বিভিন্ন কারণে মেয়াদ শেষ করতে পারেননি তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য এ এন এম মমতাজউদ্দিন চৌধুরী দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য থাকাকালে ক্যাম্পাস গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর নিয়ে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ হয়। এর জের ধরে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার এক বছর আগে তিনি অপসারিত হন। দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে চার বছর মেয়াদে নিযুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। যৌন কেলেঙ্কারি ও শিক্ষকদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগে ১৯৯১ সালের জুনে তাঁকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হামিদ তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন। অবৈধ নিয়োগ দিতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় চাকরিপ্রার্থীরা তাঁকে বাসায় তিন দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এরপর রাতের আঁধারে ক্যাম্পাস ছেড়ে যান তিনি।
১৯৯৫ সালের মে মাসে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইনাম-উল হক যোগ দেন চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে আন্দোলনকারীরা তাঁকে লাঞ্ছিত করলে তিনি আর ফেরেননি। এরপর ১৯৯৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ কায়েস উদ্দিন পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। দুর্নীতি, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও আঞ্চলিকতার অভিযোগে আন্দোলন শুরু হলে তিনি পদত্যাগ করেন।
ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক মুহাম্মদ লুৎফর রহমান। তিনিও ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। সপ্তম উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান লাগাতার আন্দোলনের মুখে মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর আগে অপসারিত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম অষ্টম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেলেও স্থানীয় চাকরিপ্রার্থীদের চাপের মুখে পদত্যাগ করেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ফয়েজ মোহাম্মদ সিরাজুল হক নিযুক্ত হন নবম উপাচার্য হিসেবে। বিতর্কিত কিছু শিক্ষক তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সমালোচনার মুখে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেন তিনি। দশম উপাচার্য এম আলাউদ্দিন এবং একাদশতম উপাচার্য আবদুল হাকিম সরকার মূলত দুর্নীতির অভিযোগে মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগেই চলে যেতে বাধ্য হন। দ্বাদশ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. হারুন-উর-রশীদ আসকারি।
কয়েক বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সহ-উপাচার্যের বিরোধ লেগেই ছিল। ছাত্রলীগে রয়েছে দুই গ্রুপ, একই অবস্থা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শিক্ষকদের মধ্যেও। একই মতাদর্শের শিক্ষকদেরও দুটি গ্রুপ রয়েছে। এসব কিছু মিলিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।