আড়ং একটি পরিবারের মতো

তামারা হাসান আবেদ
তামারা হাসান আবেদ
>তামারা হাসান আবেদ ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের জ্যেষ্ঠ পরিচালক । আড়ং এখন পরিচালিত হচ্ছে তাঁর নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায়। আড়ং এবং তিনি বেড়ে উঠেছেন যেন সমান্তরাল, সহোদরার মতো। তবে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একসময় তাঁর জীবন পুরোপুরি জড়িয়ে যাবে, তা অন্তত তিনি ভাবেননি। অথচ সেটাই আজ বাস্তবতা। তাঁর নেতৃত্বেই উদ্‌যাপিত হলো আড়ংয়ের ৪০ বছর পূর্তি উৎসব।

২০০২ সালে পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়ে পার করেছেন ১৬ বছর। ৩০ পূর্তি করেছিলেন ধুমধাম করে। এবার ৪০। উদ্‌যাপিত হয়েছে মহাসমারোহে। কেমন লাগছে?

তামারা হাসান আবেদ: ভালো অবশ্যই লাগছে। সেই ছোটবেলা থেকে আড়ংয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। তবে কোনো দিন এর হাল ধরতে হবে তা ভাবিনি। তা ছাড়া কেমন করে এত দিন কাটিয়ে দিলাম, তা ভেবেও অবাক হচ্ছি।

নস্টালজিক হচ্ছেন কি?

তামারা আবেদ: আমি আসলে নস্টালজিক টাইপের নই। তবে ৪০ পূর্তিতে আমি সত্যিই লুক ব্যাক করেছি। অনেক স্মৃতিই মনে পড়ছে। বিশেষ করে গত ১৬ বছরের স্মৃতি।

আড়ংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার গল্পটা কি বলবেন?

তামারা আবেদ: যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতি আর ফাইন্যান্সে পড়া শেষ করে ক্যারিয়ার শুরু করি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ে। এরই মধ্যে সারা বিশ্বের কাছে মুসলমানদের অবিশ্বাসী করে তোলে নাইন-ইলেভেন। সেই রেশ ধরে শুরু হয় আফগানিস্তান যুদ্ধ। নিজের প্রতিবেশী হারানো, আমেরিকায় মুসলমানদের ওপর মানসিক নিগ্রহ—সব মিলিয়ে মন টিকছিল না। তা ছাড়া বাবারও তো বয়স হয়েছে। তাঁকে ফেলে বিদেশে থাকতেও ইচ্ছে হচ্ছিল না।

দেশে ফিরে এসে কী মনে হলো?

তামারা আবেদ: তখনো আসলে ভেবে উঠতে পারছিলাম না কী করব। একসময় ভেবেছি, জাতিসংঘের চাকরি নিয়ে আফগানিস্তান চলে যাই।

যাওয়া তো হয়নি?

তামারা আবেদ: না। কারণ, দেশে ফিরে কিছু দিন বিশ্রামে থাকতে চেয়েছিলাম। ওই সময়ে বাবার অনুরোধেই আড়ং দেখতে শুরু করি। কারণ, পুরোনোরা চলে যাওয়ায় আড়ং বেশ অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তখন। আমি খণ্ডকালীন দায়িত্ব নিই কেবল ডিজাইন বিভাগ দেখাশোনার।

অর্থনীতি থেকে ডিজাইন—দ্বিধা ছিল না?

তামারা আবেদ: হ্যাঁ; তা তো অবশ্যই ছিল। তবে তখন অন্য কোনো ভাবনাকে আমল দেওয়ার সময় ছিল না, বরং চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। সে সময়ে ঈদও ছিল।

সেটা কবের ঘটনা?

তামারা আবেদ: ২০০২ সালের জানুয়ারি। কাজ করতে গিয়ে ক্রমেই ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হই। এনজয় করতে শুরু করি। ডিজাইন থেকে উৎপাদন হয়ে পণ্যের খুচরা বিক্রি—পুরো প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়ি। ফলে পেছনে আর ফেরা হয় না। মার্চ থেকে পুরো দায়িত্ব নিয়ে থেকে যাই।

চার দশক পূর্তির অনুষ্ঠান হলো বেশ ধুমধাম করেই। এর পেছনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

তামারা আবেদ: এই অনুষ্ঠান সব বয়সীর কথা বিবেচনায় রেখে সাজানো হয়। আড়ং একটা পরিবারের মতো। উৎপাদক থেকে কারুশিল্পী, এমনকি আমাদের ক্রেতারা। প্রডিউসার অ্যাওয়ার্ড তাই ভালো কাজে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আড়ংয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের স্বীকৃতিও। ৪০ বছর মাথায় রেখেই ৪০ জনকে সম্মানিত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রদর্শনী আর হাতে–কলমে শেখার মধ্য দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ কারুশিল্পের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের পরিচয় করানোটাও ছিল উদ্দেশ্য।

আড়ংয়ের যেমন প্রজন্মান্তর হয়েছে, ক্রেতাদেরও। এমনকি নানা বিত্তের ক্রেতাদের ধরে রাখার বেলাতেও সফল আড়ং। এটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?

তামারা আবেদ: আমরা পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। যাতে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত সবাই আড়ংয়ের পণ্য কিনতে পারে। আড়ংয়ের সঙ্গে থাকতে পারে। আমরা চাই সবাইকে নিয়ে চলতে।

১৬ বছরে আড়ংকে সময়োপযোগী করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। টার্নওভার ছাড়িয়েছে ৮৫০ কোটি। এরপর?

তামারা আবেদ: আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ তরুণ। তাদের কথা মাথায় রেখেই আসলে তাগা, হারস্টোরি হয়ে তাগা ম্যান—এই সহ–ব্র্যান্ডগুলো করা হয়েছে। তবে জ্যেষ্ঠদের জন্যও আমাদের সৃজনশীলতা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি অচিরেই যোগ হচ্ছে বিউটি প্রোডাক্ট। স্কিন কেয়ার লাইন; আর গ্লোবাল ই-কমার্সকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে আড়ংয়ের পণ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সত্যি বলতে কি, ফ্যাশনের গতিপ্রকৃতি আর পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রভাব মাথায় রেখেই পণ্য উন্নয়ন করা হচ্ছে। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে থাকার চেষ্টা আড়ং সব সময়ই করে যাচ্ছে।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

তামারা আবেদ: ধন্যবাদ আপনাকেও।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: শেখ সাইফুর রহমান