বন্যা–পরবর্তী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও জাপান–বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের আয়োজনে ‘বন্যা–পরবর্তী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়ে। আলোচকদের বক্তব্যের সারমর্ম এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

ড. তাহমিদ আহমেদ

নির্বাহী পরিচালক, আইসিডিডিআর বি

বন্যা বা এই ধরনের দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া হয়। ডায়রিয়ার পাশাপাশি রক্ত আমাশয় হয়। এর সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো খাবার স্যালাইন ও জিংক। বন্যাদুর্গত অঞ্চলে খাবার স্যালাইন ও জিংক পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। সে জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও জিংক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ডায়রিয়া ও কলেরার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কোন ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে ও কোন ক্ষেত্রে দিতে হবে না, এই বিষয়টি জানাতে হবে। গবেষণায় এসেছে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুকে ১০ দিনের জিংক ওষুধ দেওয়া হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে যায়।

বিশুদ্ধ পানির অনেক বেশি সংকটের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। সেখানে যে পানি আছে তা বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। ডিপিএইচই–এর একটা পানি বিশুদ্ধকরণ মডেল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে কাপড় দিয়ে পানি ছেঁকে নেওয়া হয়। এরপর ফিটকিরি মেশানো হয়। সর্বশেষ ব্লিচিং পাউডার কিংবা হ্যালোট্যাব দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা হয়। এ জন্য প্রতিটি বাড়িতে দুটি করে ড্রাম ও একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তিকে পানি বিশুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। আইসিডিডিআরবির গবেষণায় এসেছে, সোফিওয়াটার যেকোনো সাবানের মতোই কার্যকর। দেড় লিটার পানিতে চার চামচ যেকোনো ডিটারজেন্ট পাউডার যোগ করে সোফিওয়াটার বানানো হয়। এই পদ্ধতিটি সহজ ও সাশ্রয়ী।

দুর্গত এলাকায় একজন কলেরায় আক্রান্ত হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা প্রতিরোধের জন্য পানি, সাবান ও সোফিওয়াটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি ওরাল কলেরা ভ্যাকসিনের কথা চিন্তা করা যেতে পারে। অনেকে হাত পরিষ্কার বরার সময় টিউবওয়েলের মুখ স্পর্শ করে ফেলে।  তখন কলেরা বা টাইফয়েডের জীবাণু থাকলে সেটি টিউবওয়েলের মুখে লেগে থাকে। এটি সংক্রমণের অন্যতম উৎস। সে জন্য ব্লিচিং পাউডার বা চাপ দিয়ে সব পানি বের করে দিতে হবে। এ ছাড়া সোপিওয়াটার দিয়ে টিউবওয়েলের মুখ পরিষ্কার করতে হবে।

এ ধরনের যেকোনো দুর্যোগে পাঁচ ধরনের লোক বেশি আক্রান্ত হয়। প্রথমত, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। দ্বিতীয়ত, অন্তঃসত্ত্বা নারী। তৃতীয়ত, শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা। গর্ভাবস্থার চেয়ে দুগ্ধপান করানো অবস্থায় পুষ্টির প্রয়োজন বেশি। চতুর্থত, প্রবীণ মানুষেরা। পঞ্চমত, অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি। বিশেষ করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী। দুর্যোগের সময় তাদের খাবার ও ওষুধের ঠিক থাকে না। ফলে তাদের ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। এ পাঁচ শ্রেণির মানুষের সেবার বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশে এ মুহূর্তে অপুষ্টির হার ১০ থেকে ১১ শতাংশ। দুর্গত এলাকায় আগামী পাঁচ–ছয় মাসের মধ্যে এই হার আরও বেড়ে যাবে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি ৩ থেকে ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে অনুযায়ী শুধু ফেনী ও কুমিল্লার বুড়িচং এলাকায় ৭৫ হাজার গর্ভবতী নারী রয়েছেন। এসব অন্তঃসত্ত্বা নারী ও গর্ভের সন্তানের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে হবে। এঁদের জন্য একটা রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে, যা আগামী এক থেকে দুই মাস চালু রাখতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারীকে প্রতিদিন একটি করে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ট্যাবলেট দিলে তাঁর অণুপুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির পরই প্রবীণেরা পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। সর্বশেষ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের যেন পুষ্টির চাহিদা মেটানো হয়। তাঁদের ওষুধ খাওয়া যেন আবার চালু করা হয়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে।

ডা. এ এস এম আলমগীর 

আইএইচএম অফিসার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ  

আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি বিভাগে কাজ করি। আমরা সমন্বয়ের জন্য সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ফ্যাসিলিটির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আমাদের ৫৪০টির বেশি স্বাস্থ্যসেবা ফ্যাসিলিটি আক্রান্ত হয়েছে। ফেনীতে তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচে পানি ছিল। সে জন্য আমাদের প্রথম কাজ ছিল ভ্যাকসিনগুলো দ্বিতীয়     তলায় তোলা। এ ছাড়া ৯০ ভাগ স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের কাজটি কঠিন।

বন্যা–পরবর্তী সময়ে মারাত্মক ডায়রিয়া, কলেরা দেখা দেবে। দেশের সাধারণ মানুষ এখন নিরাপদ পানি নিয়ে অনেক সচেতন। আমরা লাখের অধিক পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি দিচ্ছি। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির উৎস চিহ্নিত করে দিতে হবে। কীভাবে টিউবওয়েল পরিষ্কার করতে হয়, তা জানাতে হবে। টিউবওয়েল খুলে ক্লোরিন দিতে হবে। তারপর কতক্ষণ পানি বের করলে নিরাপদ পানি পাওয়া যাবে, তা জানাতে হবে।

বন্যা–পরবর্তী রোগের মহামারি দেখা দেয়। এখন প্রচুর মানুষের ঠান্ডা ও সর্দি–কাশি হবে। একজনের সর্দি–কাশি হলে সেটা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে যাবে। এই সব জায়গায় মাস্ক খুব একটা কার্যকর কৌশল। শ্বাসকষ্ট থেকে শিশুদের বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দুটি ঝুঁকিপূর্ণ দল আছে—পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ও বয়স্ক মানুষেরা। উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয়। এখন অনেকের ওষুধ খাওয়া বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো দ্রুত মেরামত করতে হবে।

প্রথমে ঝুঁকি পর্যালোচনা করতে হবে। এরপর কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রতিটি মেডিকেল টিমের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। প্রথমত, অনেকের ওষুধ গ্রহণ অনিয়মিত হয়ে গেছে। এটা ঠিক করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মানসিক ট্রমা নিয়ে কাজ করতে হবে। খুব সীমিত আকারে আমরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করি। জেলা পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

বন্যা চলা এলাকাগুলো কলেরাপ্রবণ এলাকা। কলেরা হলে মানুষ মারা যায়, এটা কলেরা, তা জানিয়ে দিলে ডাক্তারদের আর কিছু শেখাতে হয় না। ডাক্তারেরা জানেন। এ জন্য র‍্যাপিড টেস্ট কিট স্থানীয় পর্যায়ে দেওয়া প্রয়োজন। বন্যার পানি কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। এই বিষয়টি এখন ব্যাপকভাবে প্রচার করা উচিত।

আসলে এ সময় বন্যার পানিতে হাঁটাও ক্ষতিকর। বন্যার সময়ে চর্মরোগগুলো দেখা যায়। এ সময় কিছুদিন মানুষের ব্যবহারের জন্য টয়লেট ছিল না। সবকিছুই পানির সঙ্গে মিশে গেছে। এই পানিতে হাসপাতালের বর্জ্যও মিশেছে। এই বিষয়গুলো চিন্তা করে তা পরিকল্পনায় আনতে হবে।

বন্যা–পরবর্তী করণীয়গুলো গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা করার ভালো সক্ষমতা রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিতে হবে। জাতিসংঘ থেকে দুর্যোগ ত্রাণে যথেষ্ট বরাদ্দ রয়েছে।  এগুলোর যথাযথ ব্যবহার করলে সংকট কমানো যাবে। স্বাস্থ্যসহ সার্বিক সংকটই আমরা কমাতে পারব। শিশুদের টিকা প্রদান বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রয়োজনে ক্যাম্পেইন করে এটা আবার চালু করতে হবে। সর্বপরি, দ্রুত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে কার্যকর করার বিকল্প নেই।

নাঈম গোলদার

নাঈম গোলদার, পরিচালক (চলতি দায়িত্বে), ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর 

আজকের গোলটেবিল আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ব্যর্থতা ও পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পারব। পানি সরে গেলে প্রথমেই স্যানিটেশন ও হাইজিনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে হবে। বন্যায় অনেকে বাড়ি, সম্পদসহ সবকিছু হারিয়েছেন। কেউ কেউ সন্তান বা মা-বাবা হারিয়েছেন। দুর্যোগের ধকল কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু সময় লাগবে। তাই এ সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন (বাফি) ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিষদ বসেছে। কোনো ওষুধের ঘাটতি যেন না হয়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওষুধের ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রথমেই কাঁচামাল সহজলভ্য করা প্রয়োজন। এরপর হলো ওষুধের উৎপাদন নিশ্চিত করা। এখন পর্যন্ত উৎপাদন–ব্যবস্থা ঠিক আছে।

বন্যার সময় সাপের উপদ্রব অনেক বেড়ে যায়। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অ্যান্টিভেনম আমদানি করে থাকে। আমরা তা অনুমোদন দিয়ে থাকি।

আইসিডিডিআরবি ইতিমধ্যে স্যালাইন বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি ঔষধ প্রশাসনকে আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে। ঔষধ প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, স্যালাইনের কিছু স্যাম্পল যাচাই করে এটা অনুমোদন দেওয়া হবে। আশা করি ওষুধের জোগানে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।

ফেনীতে অনেকগুলো ফার্মেসি বন্যার পানির নিচে ছিল। এখানে দুটি বিপদ রয়েছে। প্রথমত, এ ফার্মেসিগুলো পুনরায় কার্যকর করা। দ্বিতীয়ত, বন্যার পানিতে ভিজে যাওয়া ওষুধ বিক্রি ঠেকানো। অনেক অসাধু লোক এ ওষুধগুলো বিক্রির চেষ্টা করবে। আমাদের স্থানীয় অফিসগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। একটা উপজেলায় অনেকগুলো ইউনিয়ন থাকে। প্রতিটি ইউনিয়নের বাজারে অন্তত একটি ফার্মেসি চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি ফার্মেসি চালু করার জন্য ওষুধ লাগবে। ফ্রিজ চালু করা লাগবে। কারণ, সেখানে তাপমাত্রা সংবেদনশীল অনেক ওষুধ রাখতে হয়। সে জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে অনেক ফার্মেসি নগদ টাকায় ওষুধ কিনতে পারবে না। তাই তাদের বাকিতে ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ওষুধ কোম্পানিগুলোকে আমরা তা বলে দিয়েছি। তারা এতে রাজি হয়েছে। এই সুযোগে নকল ওষুধ যেন না ঢোকে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

অধ্যাপক ডা. মো. জোনাইদ শফিক

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস

আমাদের দুটি বড় টিম আগস্টের ২৫ ও ২৯ তারিখ ফেনী ও কুমিল্লায় কাজ করেছে। সারা দেশে নাভানা ফার্মার প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কর্মী কাজ করেন। ২৭টি জেলায় আমাদের ডিপো আছে। প্রথমে আমরা ফেনী যাই। পরে আমাদের কর্মীরা জানান, কুমিল্লার বুড়িচংয়ে তেমন কেউ যাচ্ছে না। এ রকম অনেক জায়গায়ই কেউ যাচ্ছে না।

আমরা ১৫ দিন পরে আবার ফলোআপ মেডেকেল ক্যাম্প করব। বৈঠকে পাওয়া সুপারিশগুলো কাজে লাগাব। দুর্গত এলাকায় চর্মরোগবিশেষজ্ঞ যাওয়ার কথা। আমরা ওষুধের পাশাপাশি চিকিৎসক ও যাতায়াত–সুবিধাও দিতে পারব।

আজকের গোলটেবিল বৈঠকের পরামর্শগুলো আমরা সারা দেশে জানাতে চাই। এখানে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সমন্বয়টা ঠিকমতো করা দরকার। নাভানা ফার্মার কর্মীরা না বললে আমরা বুড়িচংয়ে যেতাম না। সেখানকার মানুষ আমাদের ছাড়তে চাচ্ছিল না। আরও ত্রাণ চাচ্ছিল। এখানে আমরা কিছু জিনিস শিখেছি। স্যানিটারি প্যাড ও বাচ্চাদের ডায়াপার অনেক জনপ্রিয় হয়ে গেছে। মাঠপর্যায়ে না গেলে এটা কেউ বুঝতে পারত না। এগুলোর প্রচলন শুধু শহরে সীমাবদ্ধ নেই। গ্রামেও এর বহুল প্রচলন শুরু হয়েছে। আমরা এ চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করতে পেরেছি। সবাই যেন এসব স্যানিটারি পণ্য নিয়ে যায়।

৫ লাখ ৮৬টি পরিবার এবং ৩৭ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।  তাদের শুকনা খাবার দেওয়া বেশি জরুরি।

ফেনীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা শুকনা খাবার নিয়ে গিয়েছি। কেননা দুর্গত এলাকায় রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা খেজুর, বিস্কুট, আপেল দিয়েছি। দু–একটা খেজুর খেয়ে দীর্ঘ সময় কাটানো যায়। পানি তো সবাই দিচ্ছে। আর এত পানি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট নিয়ে গিয়েছি। বাংলাদেশে একটি কোম্পানিই পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট তৈরি করে। এখন তারা জোগান দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। অনেক বেশি চর্মরোগ হচ্ছে। কেননা ওখানে পানি তো ময়লাযুক্ত। সুতরাং এসব রোগ আসবেই।

প্রথম আলো ও সরকারের কাছে অনুরোধ করব, যেন আজকে আমরা যা জানলাম, বিশেষ করে সহজে পানি বিশুদ্ধ করার পদ্ধতি, সোপি ওয়াটার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা ইত্যাদি ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনসচেতনতা তৈরি করে। তাহলে রোগের প্রাদুর্ভাব কম হবে।

অধ্যাপক ডা. সরদার এ. নাঈম

চেয়ারম্যান, জাপান–বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল

দেশের এই রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে এ রকম একটি বন্যা পরিস্থিতি আসবে, তা আমাদের কল্পনায় ছিল না। দুই সপ্তাহ পরে আমরা বন্যা–পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করছি। কিন্তু এখনো অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা আছে। মানুষ বানের পানিতে ভাসছে। সে জন্য তাদের সাহায্যের প্রয়োজন আছে।

আলোচনায় রোগ, রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার বিষয়গুলো এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সরকারের সঙ্গে কাজ করে, স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নিয়ম মেনেই কাজ করে। আমরা কিছু বিষয় জেনেছি। এখন আমাদের আরও জানা ও মানুষকে জানানো দরকার। সবচেয়ে বেশি দরকার সবগুলো অংশীজনদের নিয়ে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ত্রাণের সঙ্গে প্রচুর ওষুধ দুর্গত এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। এ ওষুধগুলো চিকিৎসকদের মাধ্যমে পরামর্শকৃত ও সরবরাহ করা প্রয়োজন।

আলোচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা হয়েছে। এ বিষয়গুলো সবাইকে জানাতে হবে। পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন একই রকম গুরুত্বপূর্ণ৷ আজকের আলোচনার সুপারিশগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করা জরুরি। আমাদের সবার সাহায্য যেন যথাযথভাবে কার্যকর হয়, সে জন্য সমন্বয় প্রয়োজন। করোনার সময় সরকার ফিল্ড হাসপাতাল করে দিয়েছিল। এখন সে রকম করা যেতে পারে। এসব কার্যক্রমে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

গওহার নঈম ওয়ারা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ

আমি সাপের উপদ্রব বিষয় নিয়ে শুরু করতে চাচ্ছি। সাপে কাটা বেশির ভাগ রোগী ওঝাদের কারণে মারা যাচ্ছেন বলে বলা হয়ে থাকে; কিন্তু বেশির ভাগ রোগী মারা যাচ্ছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যেতে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে ফোন নাম্বার উল্লেখ করে দিতে হবে। যেন ফোন দিয়েই অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়।

বন্যাদুর্গত ফেনীতে অনেক পরিবার ত্রাণ পেয়েছে বলে আর নেয়নি। সুতরাং ত্রাণগুলো অন্য কোনো গ্রামে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও আমি এমন দেখিনি। আমরা একটু সহযোগিতা করলে এখানকার মানুষ খুব সহজে ঘুরে দাঁড়াবেন। গত এক সপ্তাহে গত তিন মাসের সমান রেমিট্যান্স এসেছে। এ অঞ্চলের অনেক মানুষ প্রবাসী। তাঁরা যেন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে না পারায় তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে।

এমন খাবার দিতে হবে, যেন তা খেলে অনেক বেশি পিপাসা না পায়। খেজুর খুব ভালো খাবার; কিন্তু খেজুর খাওয়ার পরপরই পানির পিপাসা লাগে। দ্রুত পুকুরের পানি পরিষ্কার করতে হবে। যেন মানুষ গোসল করতে পারেন। প্রবীণ মানুষের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও যক্ষ্মার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। খাগড়াছড়িতে অনেক যক্ষ্মা রোগী রয়েছেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আবার কাজ করতে হবে।

পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি দিয়ে বিশুদ্ধ করা পানিতে একটা কটু গন্ধ আসে। এ পানি শিশুরা খেতে চায় না। সে জন্য সুতি কাপড় চার ভাঁজ করে পানি ছেঁকে ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করতে হবে। এখানে শিক্ষা স্বাস্থ্য ব্যুরো কাজ করতে পারে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

আপনারা ডায়াপার ও স্যানিটেশন টাওয়াল দিচ্ছেন। এগুলো মানুষ ছুড়ে ফেলেছেন এবং পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় অনেকের দোতলা বা একতলা বাড়ি রয়েছে। সবাই মাটির নিচে ট্যাংকে পানি রাখেন। এটা দ্রুত পরিষ্কার করা দরকার। রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ডিপিএইচইয়ের কিছু ভ্রাম্যমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট আছে। এর মধ্যে মাত্র একটি ফেনীর দাগনভূঞাতে আনা হয়েছে। বাকিগুলো নিয়ে আসা গেলে খুব ভালো হবে।

স্কুলগুলো দ্রুত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মিডডে মিল চালু করা যেতে পারে। একটি ডিম ও কলা কিংবা কোনোদিন পাতলা খিচুড়ি দেওয়া যেতে পারে। এতে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। মিড ডে মিল চালু করা গেলে অপুষ্টির সমস্যা দূর করা যাবে। রেড ক্রিসেন্টকে জেলা পর্যায়ে কার্যকর  করা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

অধ্যাপক ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান

অধ্যাপক, ডারমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

বন্যায় চর্মরোগ বাড়বে। চর্মরোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভালো পানি ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ বোতলের পানি খাচ্ছেন; কিন্তু হাত-পা ধোবে কী দিয়ে? সোপিওয়াটার তৈরি ও পুকুরগুলো পরিষ্কার করা দরকার। সেটা করা গেলে চর্মরোগ প্রতিরোধে কাজে লাগবে। এ সময় কিছু রোগ বাড়বে। স্ক্যাবিস, ফাঙ্গাল ও ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন এ সময় বাড়বে।

লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার অনেক রোগী এ ফাঙ্গাল ও স্ক্যাবিস ইনফেকশনে দীর্ঘদিন ভুগছেন। এটা সারছে না। কারণ, এ স্ক্যাবিস ও ফাঙ্গাল অনেক বেশি রোগপ্রতিরোধী হয়ে গেছে। সে জন্য তাঁরা সাধারণ ওষুধে ভালো হচ্ছেন না। বন্যার সময় গাদাগাদি করে থাকার কারণে এটা আরও বাড়বে। সেখানকার চিকিৎসকদের সবার এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। সে জন্য সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে জুম মিটিংয়ের চিন্তা করছি। এ নির্দেশনাগুলো লিফলেট আকারে দিতে চাই।

আগে স্ক্যাবিসের ভালো চিকিৎসা ছিল না। এখন এটার অনেক উন্নত চিকিৎসা রয়েছে।শিশুরা এখন অনেক বেশি স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হবে। শিশুদের যথাযথ চিকিৎসা না হলে কিডনি আক্রান্ত হতে পারে। তাই স্ক্যাবিস প্রতিরোধ অগ্রাধিকার পাবে।

প্রবীণ ব্যাক্তিদের অনেক ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হবে। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন প্রতিরোধে হাত ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ। বন্যার পানির সংস্পর্শে এলে সোপিওয়াটার দিয়ে ধুয়ে একটা ময়েশ্চারাইজার দিলে অনেক ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যাবে। অনেক কম দামি ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। নারকেল তেলও খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার। তাদের বিশেষ যত্নের বিষয়টি ভাবতে হবে। এ কয়েকটি বিষয়ে নজর দিলে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে।

অধ্যাপক ডা. নাজলিমা নারগিস

অধ্যাপক (গাইনি ও অবস), ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

বন্যা–পরবর্তী সময়ে শিশু, নারী, প্রবীণসহ সবাই বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। গর্ভবতী নারীরা এ সময় বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। পানিবাহিত রোগের মধ্যে ডায়রিয়া গর্ভবতী নারীদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। ডায়রিয়ার কারণে তৈরি পানিশূন্যতায় মা ও শিশু উভয়েই আক্রান্ত হয়ে থাকে। এমনকি গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়। পানিবাহিত আরেকটি রোগ হলো হেপাটাইটিস। গর্ভকালে হেপাটাইটিস এ এবং ই মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে আনে। এটি মাতৃমৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ। তাই পানি বিশুদ্ধকরণের পরামর্শগুলো আমাদের কাজে লাগাতে হবে। বন্যার পানি বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকছে। ফলে পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি মশাবাহিত রোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া সাধারণ নারীর পাশাপাশি গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ব্যাপার। তাই এ সময় সবার জন্য মশারির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বন্যা–পরবর্তী সময়ে বাসাবাড়ি পরিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনায় স্যানিটেশনের কথা এসেছে। সাবানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি সোপিওয়াটারও গুরুত্বপূর্ণ। ত্রাণের সঙ্গে তোয়ালের পরিবর্তে গামছা দেওয়া যেতে পারে। এটাতে সহজে হাত মোছা যায় এবং ধুয়ে শুকানো যায়।

নারীদের মাসিক একটি নিয়মিত ঘটনা। এ সময় মেয়েদের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকা অত্যন্ত জরুরি। বন্যার পানির কারণে নারীদের মূত্রনালির বিভিন্ন সংক্রমণ হতে পারে। এ জন্য স্যানিটারি প্যাড ও ন্যাপকিনের কথা এসেছে। ত্রাণ কার্যক্রমে প্যান্টি সিস্টেম স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হবে। এ ছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। ৭৫ হাজার গর্ভবতী নারীর জন্য জরুরি প্রসূতিসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে টেলিমেডিসিনের ওপর আমি বিশেষ গুরুত্ব চাই।

অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মাহিদ খান

ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল

বন্যা দুর্গত অঞ্চলে জরুরি ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব রয়েছে। তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে কিছু ফার্মেসি নির্ধারণ করে ওষুধ সরবরাহ ঠিক রাখতে পারে। বন্যায় আক্রান্ত বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক রোগীর নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। তাই এসব অঞ্চলে ইনসুলিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা খুবই প্রয়োজন।

প্রতিটি উপজেলায় ওষুধ কোম্পানিগুলোর কেন্দ্র রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও তারা কোনো ফার্মেসির সঙ্গে কথা বলে জরুরি ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারে। ডায়রিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাদের আরও যত্নশীল       হতে হবে। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ স্যালাইন ও কলেরার স্যালাইন—দুটিই ব্যবহার করতে বলব। ডায়রিয়ার সময় রোগীর শরীরে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়। এর ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এ বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

অনেক ডায়াবেটিস রোগী দুর্বল অনুভব করেন। এ জন্য তাঁরা গ্লুকোজ স্যালাইন খেতে চান, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। গ্লুকোজ স্যালাইন খেলে তাঁর শরীরে সুগার আরও বেড়ে যায়। এ বিষয়ে যেন সবাই সতর্ক থাকেন।

ডা. গোলাম ফাহাদ ভুঞা

কিডনি বিশেষজ্ঞ, জাপান–বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল

মাঠপর্যায়ে ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে গেছি। ফেনী ও কুমিল্লার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। ফেনী শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়েছে। এ জন্য ফেনীর রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া বেশ কঠিন। সরকারের পক্ষ থেকে ফেনীর কিছু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এর পরিধি আরও বাড়ানো দরকার। ফেনী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬ জন গর্ভবতী নারী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনজনের ডেলিভারির তারিখ ছিল ২৫ আগস্ট। এ জন্য নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতাল ও পরিবহনব্যবস্থা ঠিক করে দিতে হবে। কুমিল্লা শহরে সব সেবা রয়েছে। গর্ভবতী নারীদের প্রসব–পূর্ব যত্ন একেবারেই নেই। বন্যার কারণে শিশুরা টিকা পাচ্ছে না; এটি দ্রুত চালু করা দরকার।

আমরা দুর্গত এলাকায় কিছু ডায়াবেটিসের রোগী পেয়েছি, যাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শপত্র পানিতে ভেসে গেছে। তাঁরা ওষুধের নামও বলতে পারছেন না। আমরা ওষুধের পরামর্শপত্র দিয়েছি। নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের জন্য সরকারি হাসপাতালে আলাদা কর্নার করা যেতে পারে। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কাজ শুরু করার মতো অবস্থা নেই। হাসপাতালগুলোতে বন্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য আলাদা কর্নার করে সেবা দেওয়া গেলে ভালো হতো। একজন যক্ষ্মার রোগী পেয়েছি, যিনি আশ্রয়কেন্দ্রে হাজারো মানুষের সঙ্গেই থাকছেন। চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। একজিমা, স্ক্যাবিসের রোগী খুব বেশি। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা না পেলে স্ক্যাবিস খুব দ্রুত ছড়িয়ে যাবে। প্রতিটি থানায় চার থেকে পাঁচজনের একটি মোবাইল মেডিকেল টিম গঠন করে দেওয়া যেতে পারে।

ডা. আল মুকতাফী সাদী

জ্যেষ্ঠ পরামর্শক, শিশু বিভাগ, জাপান–বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল

দুর্গত অঞ্চলে যথাযথ ওষুধের পর্যাপ্ততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়ার দরকার নেই।  বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় টেলিমিডিসিন সেবাও সব অঞ্চলে অনিশ্চিত অবস্থায় ছিল। এখন অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বন্যা দুর্গত অঞ্চলে চিকিৎসকদের সবসময় হয়তো পাওয়াও যাবে না। তাই কেয়ার গিভারদের সাধারণ রোগগুলোর বিষয়ে চিকিৎসা বিষয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ চালানো যেতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টি অনেক বড় ব্যাপার। ত্রাণের ওষুধগুলো যেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা সিভিল সার্জন ছাড়া অন্য কাউকে না দেওয়া হয়, সে বিষয়ে প্রচারণা অব্যাহত রাখা দরকার।

বায়ুবাহিত রোগ নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। প্রচুর ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়া হচ্ছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়া হচ্ছে। সে জন্য যথাযথ ওষুধ প্রয়োজন। বেশি অসুস্থ রোগীদের স্থানান্তর করার জায়গা জানিয়ে দিতে হবে। সর্বপরি জনসচেতনতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যেন জানে, কোথায় গেলে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পাবেন।