সব নবজাতক শিশুর জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল নিউবর্ন হেলথ প্রোগ্রাম, ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘বিশ্ব অপরিণত নবজাতক দিবস’ উপলক্ষে ‘সকল নবজাতক শিশুর জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৮ নভেম্বর ২০২৪। আলোচকদের বক্তব্যের সারকথা এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশ করা হলো।
ডা. মো. জহুরুল ইসলাম
প্রকল্প ব্যবস্থাপক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
নবজাতক মৃত্যুর একটি বড় কারণ হলো শ্বাসযন্ত্র–সংক্রান্ত জটিলতা। অন্য একটি কারণ হলো তীব্র সংক্রমণ। জন্মের শূন্য থেকে এক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ৫০ শতাংশ মৃত্যু ঘটে এ সময়ের মধ্যে। ৩৭ সপ্তাহের মধ্যে জন্ম নেওয়া অপরিণত নবজাতকদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি। সে কারণে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রসব–পরবর্তী মা ও নবজাতকের চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৩৭ সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহণ করলে অপরিণত জন্ম বলা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় দেড় কোটি এবং বাংলাদেশে ৪ লাখ ৮৩ হাজার অপরিণত নবজাতক জন্মগ্রহণ করে। অপরিণত নবজাতক মৃত্যুর বড় একটি কারণ হলো জন্মকালীন স্বল্প ওজন। নবজাতকের চেয়ে একটু বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর মূল কারণ হলো নিউমোনিয়া। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে নবজাতক মৃত্যুর হার ২০ জন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিবেচনায় সেই সংখ্যা ১২ জন হওয়ার কথা।
মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা সীমিত। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের অভাব একটি বড় সমস্যা। জেলা পর্যায়ে নবজাতকের চিকৎসাসেবায় পৃথক কোনো ইউনিট নেই। এখনো বাড়িতে অহরহ প্রসবের ঘটনা ঘটছে। পর্যাপ্ত ফলোআপ চিকিৎসার অভাব, অপর্যাপ্ত ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ জন্মতথ্যসহ আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অপরিণত নবজাতক বাঁচাতে জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেএমসি শুরু করা উচিত। নবজাতক ইউনিটগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। মা–বাবা, পরিবারের অন্য সদস্যরা যেন সেখানে থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা জরুরি। মাতৃস্বাস্থ্য প্রদানকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার রীতি তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি মা এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তাও জরুরি।
অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার
শিশুস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা বেড়েছে। অসংখ্য লোক এখন বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ঝুঁকছেন। আপনাদের শিশু ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ আছে। সব সুযোগ–সুবিধা আছে। তবে এগুলোর সমন্বয় ও বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মূল ভূমিকা রাখতে হবে।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা প্রশিক্ষণ দিতে প্রস্তুত। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ফ্লো-চার্ট, বিজ্ঞাপনসহ অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু এসবের পাশাপাশি চর্চা গুরুত্বপূর্ণ।
অপরিণত শিশুর সেবার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম। দ্বিতীয়ত, প্রসব–পরবর্তী সেবা। কেবল চিকিৎসক ও নার্সদের দ্বারা প্রতিরোধের কাজটি সম্পন্ন হবে না। এ ক্ষেত্রে পরিবার, পুষ্টিবিদ, স্কুল–কলেজের শিক্ষক ও পরিবেশ থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু বিবেচনায় রাখতে হবে।
তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কাজের সমন্বয় করতে হবে। একসময় শিশু জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোসল করানোর রীতি ছিল। এখন আমরা পরিবর্তন দেখছি। সুতরাং নতুন নতুন বিষয় নিয়ে অভ্যস্ততা বজায় রাখতে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে।
আমাদের অসংখ্য বেসরকারি পেশাদারেরাও ভালো ভূমিকা রাখেন। এগিয়ে যেতে হলে তাঁদেরও সঙ্গে নিতে হবে। আর এ–সংক্রান্ত সব কাজে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা
সভাপতি, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস)
আজকের আলোচনার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকার, বেসরকারি খাত, পেশাজীবী ও পেশাদার সংগঠন, উন্নয়ন সহযোগী ও চিকিৎসা শিক্ষা—এ পাঁচ অংশীজন রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের করণীয় জানি, সরকারও জানে। সরকার কাজ করা শুরুও করেছে। কিন্তু সেটা খুব হাঁটা হাঁটি পা পা করে চলছে। একে ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। আর শুরু করার পর এটি যেন টেকসই হয়, তা সরকারকে নিশ্চিত
করতে হবে।
আমরা বেসরকারি খাতের সঙ্গে কাজ করতে চাই। বিশ্বব্যাপী শিশুস্বাস্থ্যে অনেকগুলো আদর্শ ঠিক করা হয়েছে। বেসরকারি খাত এর কিছু অংশ মানছে না। এ জায়গাটা ঠিক করতে হবে।
আমরা পেশাজীবীরা প্রায়ই একাডেমিক আলোচনা করি। আজকে যে সূক্ষ্ম বিষয়গুলো উঠে এসেছে, তা সবাই চর্চা করছে না। উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাকটা তুলে ধরবেন।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এখন আর অনেকগুলো চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি করে না। দেশে গবেষকেরা ইনকিউবেটর, পালস অক্সিমিটার তৈরি করছেন। কিন্তু এগুলোকে উৎসাহিত করার কেউ নেই। এ জায়গায় জোর দিতে হবে। এটি করা গেলে সরকার এখন যে দামে আমদানি করছে, একই দামে ১০ গুণ চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে পারবে। আমাদের সবার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে হয়তো অপরিণত নবজাতকের জন্ম কমে আসবে।
অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা
অধ্যাপক, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, বারডেম
অপরিণত প্রসব ঠেকানোর উপায় আছে। কিন্তু অপরিণত প্রসব হয়ে গেলে করণীয়গুলো ব্যয়বহুল। এতে মৃত্যুহার বেশি থাকে। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে শিশু বিভিন্ন ধরনের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে।
অপরিণত শিশুর বাবা-মা কিংবা পরিবারের কথা চিন্তা করতে হবে। তাদেরও আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে। হাসপাতালে শিশু জন্ম দেওয়ার গুরুত্ব গর্ভবতী মায়েদের বোঝাতে হবে। নিয়মমাফিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সুবিধা সম্পর্কে তাদের অবগত করতে হবে। কী কী করলে অকালশিশু জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়—এ বিষয়ে গর্ভবতীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের ভালোভাবে অবগত করা জরুরি।
এ আলোচনা শুধু আমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। আমরা স্কুলগুলোয় এসব বিষয়ে আলোচনার করার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের ভবিষ্যৎ মায়েরা পড়ে। তাদের সঙ্গে তাদের পরিবারও সেখানে যুক্ত থাকে। সুতরাং সেখানে এ আলোচনা করা গেলে পরিবার পর্যায়ে বিষয়গুলো সম্পর্কে সহজে অবগত করা যাবে।
প্রসব-পূর্ব যত্নের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কখন আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হবে কিংবা অন্যান্য সেবা নিতে হবে, তা মায়েদের জানাতে হবে। প্রসবকালীন বিভিন্ন রোগবালাই প্রভৃতি সম্পর্কে নিয়মিত যত্নবান হলে অপরিণত শিশু প্রসবের হার কমবে। অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুরা শ্বাসযন্ত্রের জটিল সমস্যায় ভোগে। এ ছাড়া প্রসবকালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হয়।
মায়া ভেনডেনেন্ট
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান, ইউনিসেফ বাংলাদেশ
বাংলাদেশে সময়ের আগে জন্মানো শিশুর হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। কম ওজনের শিশু জন্মের হারও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। এসব শিশুদের জন্য ক্যাঙারু মাদার কেয়ার (কেমসি) (সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুকে কাপড়ে পেঁচিয়ে মায়ের বুকের ত্বকের সঙ্গে রাখা) ব্যবস্থার মতো সাশ্রয়ী প্রতিরোধব্যবস্থা বাস্তবায়নে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপজেলা হাসপাতালসহ শিশুরা জন্ম নেয়, এমন সব জায়গায় ক্যাঙারু মাদার কেয়ার বাস্তবায়নে কাজ করা জরুরি। যেসব উপজেলা, জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ধরনের কেএমসি সেবা রয়েছে, তা আরও জোরদার করতে হবে।
সব শিশুর কেএমসি সেবা প্রয়োজন হয় না। গত বছর ৪৫০টির বেশি কেন্দ্রে প্রায় ১৮ হাজার শিশু কেএমসি সেবা গ্রহণ করেছে। কয়েক বছর আগের তুলনায় এখানে একটি বড় অগ্রগতি হয়েছে।
ইউনিসেফ ইতিমধ্যে ১০টি উপজেলায় কমিউনিটি কেএমসি সেবা চালু করেছে। কারণ, এখনো ৩৫ শতাংশ নারী বাড়িতে সন্তান প্রসব করছেন। এ ছাড়া অর্ধেকের বেশি নারী বেসরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসব করছে। তবে সেসব জায়গায় কেএমসি সেবা নেই। এ ছাড়া স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট সার্ভিস (স্কানু) ৫১টি জেলায় থাকলেও ইমিডিয়েট কেএমসি সেবার ব্যবস্থা তেমন একটা নেই। তাই স্কানুর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। স্কানুতে ভর্তি শিশু খুবই নাজুক, তাদের জন্য মানসম্পন্ন ও পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করা জরুরি। পিছিয়ে পড়া কমিউনিটির সব শিশুকে সেবার আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। আমরা ইতিমধ্যে ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভেতে এ স্কানু যুক্ত করেছি। কমিউনিটি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাতেও স্কানু যুক্ত করা যেতে পারে৷
দেশে অপরিণত শিশু জন্মানোর হার বৃদ্ধিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে; প্রজনন ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপরও জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। প্রতি ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ৫ শতাংশ মৃত ও সময়ের আগে অপরিণত শিশু জন্মানোর মতো জটিলতা তৈরি হয়। আমরা হয়তো এ বিষয়টি বিবেচনায় নিইনি। আমরা ইতিমধ্যে ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভেতে এ বিষয়টি যুক্ত করেছি। প্রসব-পূর্ব সেবায় (এএনসি) মায়েদের কাউন্সিলিং সেবা যুক্ত করা হচ্ছে না। বায়ুদূষণও শিশুর সময়ের আগে জন্মানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। সে জন্য এসব বিষয় মাথায় রেখে আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা সবার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ
করতে চাই।
অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান
সভাপতি, ওজিএসবি
অপরিণত শিশু প্রসব প্রতিরোধে আমাদের সবার ভূমিকা রাখতে হবে। পৃথিবীব্যাপী প্রতিবছর দেড় কোটি শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে ১০ লাখ শিশু মৃত্যুবরণ করে। সেসব শিশু বেঁচে থাকে, তাদের সবাই আবার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন পায় না। অনেক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।
এ ক্ষেত্রে প্রসবপূর্ব সেবা গুরুত্বপূর্ণ। প্রসবপূর্ব সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের শরীরের ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। কিছু ঝুঁকি অবশ্যই থাকে। যেমন সংক্রমণের ঝুঁকি কিংবা জরায়ুর জন্মগত সমস্যা থাকতে পারে। আমাদের দেশের নারীরা সাধারণত কম ধূমপান করেন। তবে কিছুসংখ্যক নারী ধূমপান করেন। তাঁরা অপরিণত শিশু জন্ম দেওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
অপরিণত শিশু জন্মদান প্রতিরোধে ঝুঁকি নির্দিষ্ট করে তারপর সেবা দিতে হবে। সংক্রমণের জায়গা বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা করতে হবে। জরায়ুমুখ বড় হলে তা সেলাই করে একটি অবস্থায় আনার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া প্রসূতি মায়েদের পুষ্টি–সংক্রান্ত উপদেশগুলো ঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। আর কোনো কারণে যদি অপরিণত শিশু জন্ম নেয়, তাহলে সে শিশু যেন পর্যাপ্ত সেবা পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ ছাড়া প্রজেস্টোরন হরমোন দিতে হবে। এটি বিভিন্ন উপায়ে দেওয়া যায়।
যে হাসপাতালে শিশুর জন্ম হবে, সেটিতে অপরিণত শিশুর জন্মদানের ক্ষেত্রে যথাযথ সুযোগ–সুবিধা আছে কি না, তা দেখতে হবে। চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। কেবল ডাক্তার নয়, সেবাদানকারী অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণ জরুরি। মিডওয়াইফ কিংবা নার্সদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। জটিল পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. এ এম শামীম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ল্যাবএইড
বছরে পাঁচ লাখ শিশু অপরিণত জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে অনেক নবজাতক মারা যায়, যার ৫০ শতাংশ জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়। আরও ২৫ শতাংশ এক সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। উন্নত দেশগুলোতে ৯০ শতাংশ শিশুই বেঁচে যায়। এ জায়গায় আমাদের একটা বড় ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।
বাংলাদেশে দুই লাখ চিকিৎসা শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশই বেসরকারি খাতের অধীনে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ নামে একটি কর্মসূচি আছে। ভারতে বেসরকারি পর্যায়ে ৩০ লাখ শয্যা রয়েছে, যার ২৫ শতাংশ সব সময়ই খালি থাকে। এ কর্মসূচির আওতায় ওই খালি শয্যাগুলো সরকার এক–তৃতীয়াংশ দামে কিনে নেয় এবং গরিব রোগীদের সেবা দেয়।
এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ১০ কোটি পরিবারকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা হয়। এ রকম সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্ব আমাদের দেশেও হতে পারে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত শয্যা ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি আছে। তাই এটি বিবেচনা করা যেতে পারে। বেসরকারি খাতে খরচ অনেক বেশি। এখানে খরচ কমিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বের কথা কেবল মুখে বললেই হবে না; বরং একে বড় একটা ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে ২০ থেকে ২৫ লাখ শিশু ও মাকে আগামী দিনগুলোতে অনুসরণ করতে হবে।
ডা. আরিফ মাহমুদ
গ্রুপ মেডিকেল ডিরেক্টর, এভারকেয়ার হসপিটাল
বিশ্বব্যাপী ১৭ নভেম্বর অপরিণত নবজাতক দিবস পালন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণের মধ্যে একটা সচেতনতা তৈরি করা ও নীতিগত পর্যায়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া। প্রতিবছর ১৩০ মিলিয়ন অপরিণত নবজাতক জন্মগ্রহণ করছে। তাদের জন্য মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এ রকম ক্ষেত্রে রোগীকে অনেক দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। এই চিকিৎসা ব্যয়ভার তার পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। এ জায়গায় আমাদের একটা সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।
আমাদের পর্যাপ্ত নবজাতক শিশুর বিশেষ সেবা ইউনিট (স্ক্যানু) নেই। আমাদের দেশে প্রতি ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী (চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ) আছেন মাত্র ৫ দশমিক ৭ জন। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আদর্শ অনুযায়ী এ সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন হওয়া উচিত ছিল। নার্সের প্রয়োজন তিন লাখ, আমাদের আছে মাত্র এক লাখ।
আগের তুলনায় অপরিণত নবজাতক ও মাতৃমৃত্যুর হার উভয়ই কমেছে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হলে জনবল, অবকাঠামো ও প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে। এই তিনের সমন্বয় করা গেলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার চিত্র অনেকটাই বদলে যাবে। পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় বহনে স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্সের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান
চেয়ারম্যান, নিওনেটোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ; মহাসচিব, বিপিএস
চিকিৎসকদের কাজ মূলত ডেলিভারির সময় থেকে শুরু হয়। তবে প্রসব প্রক্রিয়ার পূর্বে আমাদের কিছু কাজ থাকে। যেমন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রসূতি মায়েদের সঙ্গে আমরা কথা বলি। ডেলিভারির পর নতুন জন্ম নেওয়া শিশুর সেবাদান করতে হবে মায়ের পেটের ওপরে। অর্থাৎ, শিশুর শরীর শুকানোসহ অন্যান্য কাজ মায়ের পেটের ওপরেই করতে হবে।
সুস্থ অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুকে মায়ের সঙ্গে রেখেই সেবা দেওয়া হয়। আর যে শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে, তাকে দ্রুত বিশেষায়িত জায়গায় চিকিৎসাসেবা দিতে হয়।
নতুন একটি ধারণা নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশে কাজ চলছে। ধারণাটি হলো ইমিডিয়েট ক্যাঙারু মাদার কেয়ার (আইকেএমসি)। আগে এটি ছিল ক্যাঙারু মাদার কেয়ার (কেএমসি)। বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে কাজ চলছে।
অপরিণত শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হলো ‘সেপসিস’। ইমিডিয়েট ক্যাঙারু মাদার কেয়ার সেবাদানের মাধ্যমে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত সেপসিস কমিয়ে আনা সম্ভব।
পালস অক্সিমিটার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ও হৃৎস্পন্দন নির্ণয় করা হয়। স্যাচুরেশন কম থাকা ক্ষতিকর। এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু স্যাচুরেশন বেশি থাকাও ক্ষতিকর, তা অনেকেই জানেন না। তাই মানসম্পন্ন ও নিয়ন্ত্রিতভাবে অক্সিজেন ব্যবহার করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মো. মনির হোসেন
সভাপতি, বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরাম (বিএনএফ)
অপরিণত বয়সে শিশু জন্মের হার বাড়ছে। এ হার কমাতে আমাদের টেকসই ও সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা–সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরাম কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে। প্রথমত, অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি। সব শ্রেণি–পেশার মানুষ পেতে পারে এমন চিকিৎসেবা নিশ্চিত করতে হবে। শহর ও গ্রামের জনসাধারণ যেন সমানভাবে এ সেবা পায়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়াও জরুরি। বিশেষত, গ্রামাঞ্চলে কাজ করা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তারা অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া শিশুর উপযুক্ত সেবা দিতে সক্ষম, এ বিষয়টি আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সংক্রমণ ও শ্বাসযন্ত্র–সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
তৃতীয়ত, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিদ্যা জরুরি। এ ক্ষেত্রে মানুষকে গর্ভকালীন মায়ের স্বাস্থ্য ও অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন করতে হবে। প্রসূতিদের এ–সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন করা জরুরি। বাংলাদেশে শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্র–সংক্রান্ত জটিলতা বেশি দেখা যায়। তাই এই ধরনের জটিলতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত ও উচ্চতর জ্ঞান প্রদান জরুরি।
ফরিদ উদ্দিন আহমদ
উপপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
আমাদের মূল লক্ষ্য হলো স্ক্রিনিং ও সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করা। জন্মপূর্ব সেবার বিষয়ে আমাদের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কাছে উপযুক্ত যন্ত্রপাতি নেই। যেমন গ্রামাঞ্চলে আলট্রাসনোগ্রাফি সেবা নেই বললেই চলে।
আমরা বাল্যবিবাহ, গর্ভকালীন মায়ের স্বাস্থ্য, প্রসবকালীন সংক্রমণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করি। পাশাপাশি ধূমপানের মতো ক্ষতিকর অভ্যাস ত্যাগের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। সবাই ধূমপানের বিষয়ে কথা বললেও জর্দা কিংবা সাদাপাতা খাওয়া নিয়ে কম আলোচনা হয়। অথচ এটিও ক্ষতিকর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জর্দা কিংবা সাদাপাতা খাওয়ার প্রবণতাও আমাদের দেশে বেশ লক্ষণীয়।
আমরা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও করি। আমরা বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছি।
পলাশ কুমার সাহা
সহকারী পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে প্রতিবছর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য মাথাপিছু প্রায় ১৩ হাজার ৪ শ ৯৪ মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়। সে হিসাবে আমাদের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিবেচনায় ৮৮ ডলার ব্যয় করার কথা, সেখানে আমরা ব্যয় করছি মাত্র ৫৪ ডলার। সবকিছুতে লাভের চিন্তা করতে হয় না। আমরা যতটুকু জানি, তা বিশ্বাস করি কিনা, আর যতটুকু বিশ্বাস করি, তা চর্চায় নিয়ে আসি কিনা, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি তখনই সম্ভব, যখন স্বাস্থ্য খাতকে আমরা ব্যয় মনে করব না, সেবা মনে করব।
নুরুল ইসলাম খান
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্বব্যাপী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অগ্রাধিকার হচ্ছে গবেষণাভিত্তিক উপাত্ত তৈরি করা। এসব উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বর্তমান পরিস্থিতি সদস্য দেশগুলোর সামনে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনায় থাকা গাইডলাইনগুলো সংশোধন করা ও সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বিনিময় করা হয়। প্রয়োজন অনুসারে কিছু কিছু সদস্য রাষ্ট্রকে কারিগরি সহায়তা এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়, যেন গাইডলাইনের সুপারিশগুলো জাতীয় সেবায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
দেশের নারীরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বায়ুদূষণ ও ধোঁয়া৷ আমাদের অ্যালকোহল সেবনের মাত্রাও বেড়েছে। এ বিষয়গুলো অপরিণত নবজাতক জন্মদানে ভূমিকা রাখছে। আমাদের ‘নিউবর্ন স্ট্যাবিলাইজেশন ইউনিট’ ও শিশুর বিশেষ সেবা ইউনিটগুলোকে সচল করতে হবে।
হাসান রাসেখ মাহমুদ
সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর, আইসিডিডিআরবি
আইসিডিডিআরবি মূলত গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও ল্যাবরেটরি সেবা নিয়ে কাজ করে থাকে। অপরিণত ও কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুদের শনাক্ত করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমাদের কিছু সরঞ্জাম প্রয়োজন। বিডিএইচএস অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নবজাতকের ওজন মাপার যন্ত্রের প্রাপ্যতা ছিল ৩৭ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ শতাংশ। এটি আমাদের জন্য বড় একটি সাফল্য। আইসিডিডিআরবি গবেষণায় আমরা কোন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, তা বিশ্লেষণ করা হয়।
আইসিডিডিআরবি কিছু উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করে থাকে। আমরা একটা থারমাল জ্যাকেট উদ্ভাবন করেছি, যা নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এ গবেষণাগুলোর ফলাফল আমাদের সামনের পথ দেখাবে।
ডা. গৌতম বণিক
উপদেষ্টা, শিশুস্বাস্থ্য, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ
আমরা মানসম্পন্ন প্রসবপূর্ব সেবা (এএনসি) নিশ্চিত করতে পারছি না। তাহলে আমরা কীভাবে চিন্তা করি যে অপরিণত নবজাতক কম জন্ম নেবে কিংবা তারা ভালো চিকিৎসা পাবে। এ জায়গায় আমাদের নজর দেওয়া উচিত। এ জন্য সেভ দ্য চিলড্রেন স্যাটেলাইট ক্লিনিক ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ফ্যাসিলিটিগুলোকে লক্ষ্য রেখে কাজ করছে। এখানে মানসম্পন্ন প্রসবপূর্ব সেবার উপাদান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস পরিমাপ, রক্তচাপ, উচ্চতা, ওজন, নিউট্রিশন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং করার চেষ্টা করা হয়। অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া নবজাতকদের ইনকিউবেটর ঠিকমতো না হওয়া প্রথম সমস্যা। এ জায়গায়ও আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া কমিউনিটি এডুকেশনের মাধ্যমে কৈশোরকালে গর্ভধারণ কমাতে কাজ করছি। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে শক্তিশালী করতেও সেভ দ্য চিলড্রেন কাজ করছে।
ডা. সাব্বীর আহমেদ
উপপরিচালক, প্রজন্ম রিসার্চ ফাউন্ডেশন
প্রজন্ম রিসার্চ ফাউন্ডেশন মূলত গবেষণা নিয়ে কাজ করে। ইমিডিয়েট ক্যাঙারু মাদার কেয়ার (আইকেএমসি) নিয়ে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মানিকগঞ্জে কাজ করছি। অ্যান্টিনেটাল কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন দিলে প্রিটার্ম প্রতিরোধ করা যায়। এটি বাস্তবায়ন নিয়েও একটি গবেষণা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী কিছু শর্ত মেনে এটি দেওয়া যাবে। আরেকটা হচ্ছে লেট প্রিটার্মের ক্ষেত্রে দেওয়া যাবে কি না বা দিলে কী হবে, তা পরীক্ষামূলকভাবে দেখা হচ্ছে। লেভেল-২ স্ক্যানু আছে, এমন জায়গায় এটি হতে হবে। আবার এর ডোজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ মায়েদের একটা আলট্রাস্নোগ্রাম পাওয়া যায়। কিন্ত এটি ঠিক সময়ে করা হয় না। ফলে গর্ভকালীন বয়স নিরূপণে একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
সুপারিশ
< প্রসব–পরবর্তী মা ও নবজাতকের চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্যা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
< অকালে জন্ম নেওয়া শিশুকে কাপড়ে পেঁচিয়ে মায়ের বুকের ত্বকের সঙ্গে রাখা ক্যাঙারু মাদার কেয়ার (কেএমসি) জরুরি।
< শিশুর স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে দক্ষ জনবল, অবকাঠামো ও প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।
< সারা দেশে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার ছড়িয়ে দিতে হবে, সব সেবাকেন্দ্র ও বাড়িতে কেএমসি সেবা চালু করতে হবে।
< শিশুর যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ধাত্রী, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।
< এ সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সব উদ্যোগের মধ্য কার্যকর সমন্বয় দরকার।
< শিশুর অকাল জন্মের হার কমাতে বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
আলোচক: ডা. মো. জহুরুল ইসলাম, প্রকল্প ব্যবস্থাপক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার, শিশুস্বাস্থ্য–বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা, সভাপতি, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস)। অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা, অধ্যাপক, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, বারডেম। মায়া ভেনডেনেন্ট, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান, ইউনিসেফ বাংলাদেশ। অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান, সভাপতি, ওজিএসবি। ডা. এ এম শামীম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ল্যাবএইড। ডা. আরিফ মাহমুদ, গ্রুপ মেডিকেল ডিরেক্টর, এভারকেয়ার হসপিটাল। অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান, চেয়ারম্যান, নিওনেটোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ; মহাসচিব, বিপিএস। অধ্যাপক ডা. মো. মনির হোসেন, সভাপতি, বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরাম (বিএনএফ)। ফরিদ উদ্দিন আহমদ, উপপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। পলাশ কুমার সাহা, সহকারী পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নুরুল ইসলাম খান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হাসান রাসেখ মাহমুদ, সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর, আইসিডিডিআরবি। ডা. গৌতম বণিক, উপদেষ্টা, শিশুস্বাস্থ্য, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ। ডা. সাব্বীর আহমেদ, উপপরিচালক, প্রজন্ম রিসার্চ ফাউন্ডেশন। সঞ্চালনায়: ফিরোজ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো