রোহিঙ্গাদের দেশে না ফেরার ৩০ বছর ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও বাংলাদেশের বাস্তবতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৪ ডিসেম্বর ২০২২। আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

অংশগ্রহণকারী

এম এ মান্নান, এমপি

মাননীয় মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

তৌহিদ হোসেন

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এমপি

আইন মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য; চেয়ারপারসন, অভিবাসনবিষয়ক সংসদীয় ককাস

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, কক্সবাজার

মিজানুর রহমান

সাবেক চেয়ারপারসন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ; অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

তানিয়া হক

সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন; অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সু-জেন হ্রি

উপপ্রতিনিধি, ইউএনএইচসিআর, বাংলাদেশ

এমা ব্রিগহাম

ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি, ইউনিসেফ বাংলাদেশ

ফারাহ কবির

কান্ট্রি ডিরেক্টর, একশনএইড বাংলাদেশ

কবিতা বোস

কান্ট্রি ডিরেক্টর, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ

আশীষ দামলে

কান্ট্রি ডিরেক্টর, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ

টনি মাইকেল গোমেজ

উপদেষ্টা, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

সুপারিশ

■ রোহিঙ্গা সমস্যা ৫ বছরের নয়, এটি ৩০ বছরের সমস্যা। এর সমাধান জরুরি।

■ মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে হবে, যেন রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়।

■ রোহিঙ্গাদের নিজের রাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে তাদের অধিকারের কথা চিন্তা করতে হবে।

■ রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয় মানুষের তীব্র সংকটের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে

■ যেকোনো মূল্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

■ রোহিঙ্গাদের নজরদারিতে রাখতে হবে, যেন স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে একীভূত না হয়।

■ রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।

■ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভিন্ন ব্যাখ্যা না দিয়ে সবাইকে এক ভাষায় বলতে হবে যে তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে।

■ রোহিঙ্গা শরণার্থী একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এর সমাধানও আন্তর্জাতিকভাবে করতে হবে

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্মমভাবে অত্যাচারিত হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমার সরকার তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব এ বিষয়ে কথা বলছে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে সাহসের কাজ করেছে। কিন্তু অনেক বছর ধরে আশ্রয় দিতে পারবে না। অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। এ চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা যেন নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাই। এসব বিষয় আজ আলোচনায় আসবে।

টনি মাইকেল গোমেজ

১০ ডিসেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। এবার এ দিবসের মূল বিষয়—মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার। বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক বিরাট দৃষ্টান্ত হলো, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্যাতন করে বাংলাদেশে পাঠানো।

বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করেছে। নজির স্থাপন করেছে। মানবাধিকার রক্ষার ইতিহাসে পৃথিবীতে এটা অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।

অধিকাংশ সময় আমরা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের আলোচনা শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে। আরও অবাক করার কথা হলো, বিশ্বের এমন একটা মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো শিক্ষার্থী ও গবেষক গুগল করলে তিনি ২০১৭ সাল থেকে বর্ণনা পাবেন।

কিন্তু আমরা জানি, বাংলাদেশে ৩০ বছর আগে রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিন দশক ধরে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করছে। বাংলাদেশের মতো এমন উদাহরণ সৃষ্টিকারী দেশ বিশ্বে অনেক কম আছে।

প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু আজ সে সংখ্যা ১২–১৩ লাখ। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটানের জনসংখ্যা হলো আট লাখ। আমরা প্রায় দুটো ভুটানের সমান জনসংখ্যাকে রক্ষা করছি।

মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এখন আমি একটি তথ্যচিত্র দেখাব। এখান থেকে আপনারা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

তৌহিদ হোসেন

রোহিঙ্গা সমস্যা ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের। এ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছি। কারণ, আমরা কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। কিন্তু আমাদের করার কী ছিল, সেটা ভাবতে হবে। মিয়ানমার সমস্যা সৃষ্টি করেছে, সমাধানও তাদের করতে হবে।

সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের কোনো ইচ্ছে নেই। তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছে এবং সেটা তারা করেছে। তাদের বাধ্য করা না হলে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না। আবার বাংলাদেশ একা তাদের বাধ্য করতে পারছে না। যারা এটা পারে, তারা করতে চায় না।

পৃথিবীর নিয়ম হচ্ছে, একটা সমস্যা নিয়ে কিছুদিন আলোচনা হয়, তারপর অন্য একটা সমস্যায় সেটা ঢাকা পড়ে। ফিলিস্তিন সমস্যা যেমন পৃথিবীর আড়ালে চলে গেছে, তেমনি রোহিঙ্গা সমস্যাও যদি আড়ালে চলে যায়, তাহলে আমাদের আর কিছু করার থাকবে না।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বললে তারা অনেক সমস্যার কথা বলে। কেউ আবার দুঃখ করে আত্মহত্যার কথা বলে। এ পৃথিবীতে কেউ কাউকে অধিকার দেয় না। এটা আদায় করে নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের এই মানবাধিকার ধ্বংসের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আন্দোলন–সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারেনি। তারা তাদের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য এ কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে—তারা সমস্যার কথা বলার আগে তাদের যে ভূমিছাড়া করছে, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আন্দোলন–সংগ্রাম করতে হবে।

অক্সফাম আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও দেশ পুনর্গঠনে সহযোগিতা করেছে। তাদের প্রশংসা করতেই হবে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার জন্য যা করা দরকার, সেটা করতে হবে। সেখানে তারা তাদের জীবন সুন্দরভাবে গড়ার চেষ্টা করবে। মনে রাখতে হবে, তারা আশ্রয় নিয়েছে, এটা তাদের স্থায়ী ঠিকানা নয়।

তানিয়া হক

রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ থেকে প্রতারিত ও বিতাড়িত হয়েছে। তারা রাষ্ট্রহীন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী। সাধারণত তাদের জন্য মানবাধিকারের প্রশ্ন থাকে, যাদের একটি রাষ্ট্র, নাগরিকত্ব ও সংবিধান আছে। নাগরিক হিসেবে তারা তাদের অধিকার দাবি করতে পারে। বঞ্চনার শিকার হলে প্রতিকার চাইতে পারে। রোহিঙ্গাদের এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, তারা রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী।

বাংলাদেশ সরকার তাদের গ্রহণ করে মৃত্যু থেকে বাঁচিয়েছে, এটা বিশাল ব্যাপার। এটা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। যে সময় আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নতির দিকে যাচ্ছি। ঠিক সে সময় এত বড় একটা চাপ নেওয়া আমাদের পক্ষে কতটুকু সম্ভব, সেটা বিবেচনা করতে হবে।

সরকারের জন্য এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ সরকারের একার পক্ষে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে প্রচণ্ড চাপ দিতে হবে। এই চাপ বাংলাদেশ সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প আছে বলে মনে করি না।

কবিতা বোস

সিরিয়া, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন—এসব দেশের সমস্যা সমাধানে এখন আর সেভাবে আলোচনা হয় না। যত দিন যায়, ততই সমস্যা থেকে সবাই দূরে সরে যায়।

রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসেছে। ১৯৯১–৯২ সালে অনেকে এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি এসেছে ২০১৭ সালে, যেটা আলোচনায় উঠে এসেছে। মিয়ানমার যত অত্যাচার করেছে, তত বেশি রোহিঙ্গা এ দেশে এসেছে। নব্বইয়ের দশকে এ সংখ্যা ছিল লাখের ঘরে, আর এখন মিলিয়ন ছাড়িয়ে।

এটা যদি মিলিয়নের পর মিলিয়ন বাড়তে থাকে, তাহলে ক্যাম্পে কী অবস্থা হবে। রোহিঙ্গা নারীদের সন্তান জন্মদানের হার অনেক বেশি। এখন এটা একটা বেলুনের মতো। এই বেলুন যদি কখনো ফেটে যায়, তাহলে আমাদের জন্য এটা বিশাল বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।

মানুষের যে রাষ্ট্র থাকে, স্বাস্থ্য, শিক্ষার অধিকার থাকে—তারা এ ধারণার বাইরে অবস্থান করছে। নারীদের যে লেখাপড়া করতে হয়, এটা তারা মনে করে না। আমাদের চোখ দিয়ে তাদের দেখে মনে হচ্ছে, তারা অনেক কিছু পাচ্ছে না। কিন্তু এসব তারা কোনো দিন পায়নি। বাংলাদেশে আমরা কতটুকু পারব, সেভাবে আমাদের চিন্তা করতে হবে। তারা তাদের নিজের রাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে তাদের সব অধিকারের কথা চিন্তা করতে পারে।

রোহিঙ্গারা যেখানে বাস করে, সেসব এলাকার স্থানীয় মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানে সংকট রয়েছে। রোহিঙ্গারা তাদের এই সংকট আরও তীব্র করে তুলেছে। মানুষ এটা ভুলে যেতে শুরু করেছে।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে আমি লাইবেরিয়ায় ছিলাম। ইউক্রেনকে সহায়তার কথা বলা হলো। সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ হলো। আমরা তখন বলেছি যে আফ্রিকা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে সমস্যা চলছে। এ ক্ষেত্রে এক মিলিয়ন ডলারও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ হলো, কোনো না কোনোভাবে এই সমস্যা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আবার এটা ভুলে না যাওয়ার জন্য যতটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার, সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হয়েছি কি না, সেটাও বিবেচনা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিভিন্ন দেশ নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছে। একটা ব্যাখ্যায় আসতে হবে যে তাদের ফিরে যেতে হবে।

মিজানুর রহমান

এবার ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য হলো—‘মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার’। পশ্চিমা বিশ্ব সব ক্ষেত্রে এসব নিয়ে সঠিক আচরণ করছে না বলেই আমি মনে করি। একজন মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করাই হলো স্বাধীনতা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট বলেছিলেন যে স্বাধীনতা কখনো এমনি পাওয়া যায় না, এর জন্য মূল্য দিতে হয়।

মানুষ যদি তার অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে, এটাই তার মর্যাদা। কিন্তু একজন মানুষের মর্যাদাসম্পন্ন জীবনের জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশ সরকার অনেক কিছু করছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্যের অধিকার সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়নি।

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। ইউরোপ–আমেরিকার সমস্যা হলে সেটা হয় বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা বৈশ্বিক সমস্যা নয়। এ জন্য এর সমাধান হয় না। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ দিচ্ছে। কিন্তু বলছে না যে আমরা কাদের কাছ থেকে তেল, খাদ্য, যন্ত্রপাতি কিনব। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের মতো দেশ। তাহলে কি বলব, তারা আমাদের নিয়ে খেলছে?

রোহিঙ্গারা আমাদের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করেছে। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই হচ্ছে একমাত্র সমাধান। পশ্চিমা বিশ্ব শরণার্থী সমস্যাকে অবজ্ঞা করেছে। বিপরীতে বাংলাদেশ শরণার্থীদের সাহায্য করে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

ফারাহ কবির

আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারি। তাতে কী হবে। তাদের মৃত্যু হবে। এই মৃত্যু থেকে বাঁচানোর জন্যই বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। সেদিন আশ্রয় না দিলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃতদেহ দেখতে হতো। কত দিন আশ্রয় দিতে হবে, জানি না। বাংলাদেশ সরকার এবং এ দেশের মানুষ তাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল নামে। তারা তখন জানত না যে আজ বাঁচলেও কাল বাঁচবে কি না। কিন্তু বাংলাদেশে যে রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে, সে মিয়ানমারের নির্যাতনের কথা জানে না।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অভিজ্ঞতা হলো, সেখানে প্রায় কোনো স্বাস্থ্যসেবা নেই, শিক্ষার সুযোগ নেই, স্বাধীনতা নেই। ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বের দাবি তুলেছিল। তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলেছে, এটা মিয়ানমারের নিজস্ব বিষয়। চীনের ভূমিকা সব সময়ই নেতিবাচক। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানের ওখানে বিনিয়োগ আছে। তাদের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। ভারত এই সমস্যার সমাধান নিয়ে মাথা ঘামায় না। আসিয়ান কোনো ভূমিকা রাখছে না। ভারত মাত্র ৪০ হাজার রোহিঙ্গা গ্রহণ করেনি।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিলের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। জাম্বিয়া এ ইস্যু আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে এসেছে। গণহত্যার বিষয়টিও এসেছে। রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও দেশে ফেরার জন্য তাদের লড়াই করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সহযোগিতা দিয়েছিল। কিন্তু তারা কি পাঁচ বছর ধরে আমাদের এই সহযোগিতা দিত?

মাদক ব্যবসাই হলো মিয়ানমারের আয়ের উৎস। তারা এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে। এটা বাংলাদেশের জন্য বিশাল সমস্যা। পৃথিবীতে যত শরণার্থী ক্যাম্প আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্প সবচেয়ে উন্নত।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান পাঁচ বছর হয়ে গেল। এখন তাদের নিজেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে যে কীভাবে তারা তাদের দেশে ফিরে যাবে। আমরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছি। তাদেরও চিন্তা করতে হবে, তারা কীভাবে ফিরে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্র এটাকে গণহত্যা বলেছে। এখন জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে চাপ দিতে হবে যেন রোহিঙ্গারা দ্রুত ফিরে যায়।

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান

টনি মাইকেলের উপস্থাপনায় যে রোহিঙ্গা যুবক কথা বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর বয়স ২৮ বছর। তিনি প্রায় প্রমিত বাংলায় কথা বলেছেন। মানুষটার ভাষা রোহিঙ্গা হলে ভালো হতো। কারণ, মিয়ানমার এদের বাঙালি বলতে চায়। বাংলা ভাষায় একটা বর্ণনা দিয়ে মিয়ানমারের বক্তব্যকেই কি সমর্থন করা হয়েছে? কয়েক দিন আগে কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী ভিয়েতনামে গিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছেন, আমরা বাংলাদেশি শরণার্থী। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এটাই এসেছে।

রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের বিষয়টি বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। সরকার তাদের আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা এসেছে ৩০ থেকে ৩২ বছর ধরে। কিন্তু শতাব্দী ধরে তাদের মানবাধিকার নেই। মিয়ানমার তাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাদের পুরোপুরি মানবাধিকারশূন্য করা হয়েছে।

সমস্যাটি তৈরি করেছে মিয়ানমার। মিয়ানমারে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী আছে। তাদের একের অন্যের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে। এসব আলোচনা বাদ দিয়ে শুধু রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা করা ঠিক হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে, সবকিছু বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার একটা চক্রান্ত।

তারা মিয়ানমারের কারিকুলামে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমান রোহিঙ্গারাসহ তাদের পূর্বপ্রজন্ম যে গণহত্যার শিকার হয়েছে, এটা তাদের জানানো দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলেছি, আপনারা যেহেতু গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছেন, এসব বিষয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এই প্রজন্মকে জানাতে হবে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের বিষাক্ত সাপের মতো মনে করে। মিয়ানমার সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানি না। এটা একটা অন্ধকার দেশের মতো পড়ে আছে।

সু-জেন হ্রি

আমি শুরুতেই বাংলাদেশ সরকারের উদারতা ও মানবিকতার প্রশংসা করি। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জনগণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তাদের মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা করেছে। বিশ্বে এটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।

ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন) ম্যান্ডেট হলো, শরণার্থীদের সুরক্ষা ও সহযোগিতা দেওয়া। বাংলাদেশে আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সেটা করে যাচ্ছি। সবার মতো আমরাও চাই, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের দেশে ফিরে যাক। এ সমস্যার সমাধান রয়েছে মিয়ানমারের হাতে। তাদেরই এর সমাধান করতে হবে।

১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া, তাদের জন্য খাদ্য সরবরাহ বিশাল চ্যালেঞ্জ। এখন সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে দেশে ফেরার উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার পাঁচ বছর হতে চলল। রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের পরিমাণ কমে আসছে। অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। এসব কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাহায্যের পরিমাণ কমে যেতে পারে। ইউএনএইচসিআর, মানবাধিকার সংস্থা এবং এনজিওগুলো চেষ্টা করে যাচ্ছে সাহায্যের জন্য।

এখন রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ভাবতে হবে। সবাই একসঙ্গে সমন্বিতভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাদের কাজ করা ও মুক্তভাবে চলার অধিকার নেই। সম্পূর্ণ মানবিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়।

আন্তর্জাতিক সাহায্য যদি কমে যায়, তাহলে তাদের কী হবে, সে সমস্যাটি নিয়েও ভাবার সময় এসেছে। এ জন্য তাদের শিক্ষাসহ কিছু ন্যূনতম দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিতে হবে যেন ক্যাম্পেই তারা কাজ করে খেতে পারে। এটা তাদের দেশে ফিরে যেতেও সহযোগিতা করবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ আমরা সমর্থন করি না।

শরণার্থী রোহিঙ্গার ৫২ শতাংশ শিশু। ইউএনএইচসিআর এবং অন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে কীভাবে তারা দ্রুত দেশে ফিরে যেতে পারে। কিন্তু যত দিন ফিরে যেতে না পারে, তত দিন তারা যেন অন্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হয়ে নিজেরা কিছুটা উৎপাদনশীল হতে পারে, সে চেষ্টাও করে যেতে হবে।

এমা ব্রিগহাম

খুব সমৃদ্ধ একটি আলোচনা শুনলাম। রোহিঙ্গা শরণার্থী রক্ষায় অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় না দিলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মৃত্যুর মুখে পড়তে হতো। এই ভূমিকার স্বীকৃতি তাদের পাওয়া উচিত।

বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করছে।

গত পাঁচ বছর বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য যা করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে, এটা যথেষ্ট। ইউনিসেফ চেষ্টা করে যাচ্ছে, রোহিঙ্গারা যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে ফিরে না যায়, ততক্ষণ যেন মৌলিক শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়।

বাংলাদেশ সরকার তাদের মিয়ানমারের কারিকুলামে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি মনে করি, সরকারের দিক থেকে এটা একটা বিশাল মানবিক উদ্যোগ। কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া চ্যালেঞ্জ হবে।

আমিও সবার মতো আশা করি, তারা যেন সম্মানজনকভাবে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও খাওয়া–পরার জন্য যথেষ্ট আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের রক্ষায় তহবিল কমে যাচ্ছে। এটা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের একার পক্ষে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন।

এ জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আরও বেশি করে তহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণ করে না; কিন্তু আমরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ি। এ জন্য ৫০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে। তাদের সঙ্গে আমাদের সীমান্তসহ কোনো ধরনের বিরোধ নেই; কিন্তু তারা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে অত্যাচার করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

তাদের জন্য আমাদের অপূর্ব দ্বীপ ছেড়ে দিতে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োজিত রাখতে হচ্ছে। অর্থ সহযোগিতা দিতে হচ্ছে। আমি মনে করি, শুধু এই মহানুভবতার জন্য শান্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত।

ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে পশ্চিমা বিশ্বকে এর ব্যাখ্যা দিতে পারে। আমরা হয়তো ওই অবস্থানে নেই। একটা বিশাল চাপ ছাড়া আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারব বলে মনে হয় না। সেই চাপটা কি আমরা দিতে পারব? পারলে তো যখন তারা আসছিল, তখনই দেওয়া দরকার ছিল। মানুষ অনুরোধে ঢেঁকি গেলে। আমরা মানবতার জন্য ‘রাইস মিল’ গিলে ফেলেছি। এই বাস্তবতা মেনেই আমাদের সামনে কৌশল ঠিক করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে আরও তহবিল প্রয়োজন, যেন রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষম করা যায়। তাহলে যত দিন না তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারছে, তত দিন কাজ করতে পারে। নিজ দেশে গেলেও তারা তখনো কাজ করতে পারবে।

এ সমস্যা সম্পর্কে বিশ্বকে যতটা জানানো দরকার, সেটা হয়তো আমরা পারিনি। আমাদের রাষ্ট্রদূত, নাগরিক সমাজ, অভিনয়শিল্পীসহ সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। মিয়ানমার যে জঘন্য কাজ করেছে, এটা সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে পারলে আমরা তহবিল পাব। সবশেষে বলতে চাই, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার ও বাংলাদেশের মানুষ অসাধারণ দায়িত্ব পালন করেছে।

আশীষ দামলে

আমি ৯ মাস আগে অক্সফাম বাংলাদেশে যোগ দিয়েছি। রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুটি পরিপূর্ণভাবে জেনেছি।

এই সমস্যা যে ৩০ বছর আগে শুরু হয়েছে; সেটা কিন্তু সবাই জানে না। সমস্যাটি যে ৩০ বছরের এটা আরও বেশি সামনে আনা দরকার। সবাইকে জানানো দরকার। এমনকি অক্সফামের ডকুমেন্টসেও বিষয়টি নেই।

প্রায় ৫২ বছর ধরে অক্সফাম বাংলাদেশে কাজ করছে। তাদের কাজই শরণার্থীদের নিয়ে। এই ইস্যুতে অক্সফামের চেয়ে আর কেউ বেশি জানার কথা নয়। কিন্তু অক্সফামের নথিপত্রে নেই যে বাংলাদেশে ৩০ বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আছে।

বাংলাদেশ ৩০ বছর এ সমস্যার কীভাবে ব্যবস্থাপনা করেছে, এর দলিলপত্র থাকা প্রয়োজন। আট মাস ধরে এ বিষয়ে বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়েছি। এসব সভায় বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হচ্ছে। একেক রকম ব্যাখ্যা আসছে। বিভিন্ন জন্য বিভিন্ন মত দিচ্ছেন। সবাই মিলে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

রোহিঙ্গাদের যদি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হয়, তাহলে সবাইকে এই একই কথা বলতে হবে। আবার সবাইকে একই ভাষায় বলতে হবে যে এটা বাংলাদেশের একার ইস্যু নয়, এটা আন্তর্জাতিক ইস্যু।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব এই সমস্যার সমাধান করা। বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যু অনেক বড় সমস্যা। এটা প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশের ইতিমধ্যে দুটি সুযোগ চলে গেছে। ইউএনজিএ এবং কপ-এ (জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও কনফারেন্স অব পার্টিজ) বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়নি। এটা জলবায়ু ইস্যু থেকে মোটেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সামনে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুটি উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করছি।

এসব ফোরামে একই ন্যারেটিভ হবে যে রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের একার কোনো ইস্যু নয়। এটা আন্তর্জাতিক ইস্যু। এ সমস্যা সমাধানে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়টি আনতে হবে।

এম এ মান্নান

অক্সফাম ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাই এমন একটি সময়োপযোগী গোলটেবিল অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। আলোচনা থেকে অনেক দিকনির্দেশনা এসেছে। রোহিঙ্গারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক বছর ধরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আছে। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। কেউ কেউ বলেছেন তারা স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। প্রত্যাবাসন না হওয়ায় তাদের স্থানীয়ভাবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিচ্ছিন্নভাবে বিয়েশাদির মাধ্যমে ঘটছে। এ নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কিছু সাহায্য আসছে। এটা না এলেও তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। নানা সংকটের মধ্যেও আমরা সেটা করে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্রয় দিয়ে বিশাল মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা পাচ্ছেন, দেশ হিসেবে আমরা পাচ্ছি। সংকটে থাকলেও আমরা তাদের বিষয়ে দায়িত্ব পালন করছি। এখন কীভাবে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়, সেটা খুবই গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে।

ফিরোজ চৌধুরী

এতক্ষণ একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হলো। আলোচকেরা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিষয়টি প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরতে হবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে আশা করি।