পাপমুক্তির সুবর্ণ সুযোগ রমাদান
প্রথম মানুষই প্রথম ভুল করেছিলেন। ইনসান মানেই যে ভুলে যায়। আল্লাহ হলেন গফুর রহিম। যিনি ভুল–ত্রুটি, পাপ–তাপ, অন্যায়–অবিচার, জুলুম ও যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা ও মার্জনা করেন এবং দয়া ও করুণা করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে নানানভাবে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি ও প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের প্রতি মুসিবত আপতিত হলে বলে, “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।” তাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও রহমত এবং তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)। বান্দা যখন তাঁর দ্বারস্থ হয়, তখন তিনি ক্ষমা দয়ার কুদরতি হাত প্রসারিত করেন।
পবিত্র মাহে রমাদানের মধ্য দশকে অগণিত মানুষকে তিনি ক্ষমা করে দেন। এ মাসটি হচ্ছে রহমতের মাস, ক্ষমা ও মুক্তির মাস। রাসুলে আকরাম হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘দুর্ভাগা তারা, যারা রমাদান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।’ (বুখারি শরিফ)। মহান আল্লাহ তাআলার একটি গুণ হচ্ছে ক্ষমা করা। পবিত্র কোরআনে ক্ষমার ব্যাপারে তিনটি শব্দ বারংবার ব্যবহৃত হয়েছে। যথা ‘গাফফার’ এ শব্দটির অর্থ হচ্ছে অত্যন্ত ক্ষমাশীল, ‘গাফুর’ অর্থ পরম ক্ষমাশীল, ‘গাফির’ অর্থ ক্ষমাকারী। যেমন ‘তিনি গুনাহ ক্ষমাকারী’। (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৩)। ‘জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী পরম ক্ষমাশীল’। (সুরা-৩৯ যুমার, আয়াত: ৫)। ‘হে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা-১৫ হিজর, আয়াত: ৪৯)। হাদিসে কুদসীতে বলা হয়েছে, ‘বান্দা যদি দৈনিক সত্তরবার অপরাধ করে এবং সত্তরবার ক্ষমা চায়, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ তাই নবী করিম (সা.) দৈনিক সত্তরবারের অধিক বা এক শতবার ইস্তিগফার অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। অথচ তিনিসহ সকল নবী রাসুল (আ.) ছিলেন মাসুম বা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ।
সাহ্রির সময় আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন, কে আছ ক্ষমা চাওয়ার? ক্ষমা চাও, আমি মাফ করে দেব। (মুসলিম)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেউ যদি সকাল সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়েদুল ইস্তিগফার পড়ে, তাহলে সে যদি ওই দিন রাত্রে বা দিবসে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে। সাইয়েদুল ইস্তিগফার হলো, ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বী, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা; খলাকতানী ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাততু, আঊযু বিকা মিন শার্রি মা ছনাতু, আবূউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ লাকা বিযাম্বি; ফাগফির লী, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয-যুনুবা ইল্লা আন্তা।’ অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নাই; আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই বান্দা বা গোলাম, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো; আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ, অপকার ও ক্ষতি হতে, আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সকল নেয়ামতরাশি এবং আরও স্বীকার করছি আমি আপনার সমীপে আমার সকল অপরাধ; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন, যেহেতু আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই।’ (বুখারি)।
হাদিস শরিফে আরও বলা হয়েছে যে যদি কেহ গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে ইস্তিগফার করাকে নিজের ওপর লাজিম তথা আবশ্যক করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন: তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন, তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, তাকে অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (মুসলিম ও তিরমিজি)।
রমাদান মাসের একটি নফল ইবাদত একটি ফরজের সমান সওয়াব। একটি ফরজ সত্তরটি ফরজের সমান; প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব সত্তর গুণ বেশি। এ মাসে গুনাহ করাও কঠিন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। তাই সামর্থ্যমতো বেশি বেশি নেক আমল করার পাশাপাশি সকল প্রকার বদ আমল বা গুনাহ বর্জন করতে হবে। তবেই আমরা মহান আল্লাহর মহা ক্ষমা লাভ করব। নবীজি (সা.) বলেন, ‘সকল মানুষই অপরাধী, তাদের মাঝে উত্তম হলো তওবাকারী।’ (বুখারি)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
[email protected]