তাবলিগ জামাতের জনপ্রিয়তার পেছনে

দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতের সমাবেশ শেষে ফিরছেন দুজন মুসল্লি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

তাবলিগ জামাতের জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান। এর নিদর্শন আমরা নানাভাবে দেখছি। দুভাবে আমরা এর জনপ্রিয়তাকে দেখতে পারি। প্রথমত, আমরা দেখতে পাই যে বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অংশগ্রহণকারীরা কেবল যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই আসছে তা নয়। আমরা আরও দেখছি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছরই তাবলিগ জামাতের সমর্থক, সদস্য ও তাবলিগ জামাতকে পছন্দ করেন, এমন সব ব্যক্তি বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করার জন্য আসছেন। তাঁদের সংখ্যা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পশ্চিমা অনেক দেশেই, বিশেষ করে ইউরোপে তাবলিগ জামাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মুসলমানদের ধর্মচর্চার সহায়ক একটি পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে। বিভিন্ন ধরনের গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে পশ্চিমা দেশগুলোতে একসময় নামাজ পড়ার মতো মসজিদ ছিল না। তাবলিগ জামাত মসজিদ তৈরি করার মধ্য দিয়ে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করেছে।

ফলে বেশ কয়েক বছর ধরেই তাবলিগ জামাতের মুরব্বি, যাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার জাতীয় পর্যায়ের তাবলিগ জামাতকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে ঢাকার বিশ্ব ইজতেমাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দুই ধাপে এই আয়োজন সম্পন্ন করা হবে। এর নেপথ্যের কারণ হলো, ইজতেমায় মানুষের অংশগ্রহণ ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাওয়া এবং নির্দিষ্ট ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় দুই ধাপে ইজতেমা আয়োজন করার মধ্য দিয়ে অধিকসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করা।

যদি আমরা বৈশ্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর দিই, তাহলে দেখতে পাব যে বিশ্বজুড়েই তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই এর কার্যক্রম রয়েছে। মুসলমান অধ্যুষিত দেশে তাবলিগ জামাত যতটা সহজে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারে, অন্য দেশগুলোতে হয়তো সেভাবে পারে না। সে ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই যে তাবলিগ জামাত সেসব দেশে একটি ভিন্ন ধরনের আবেদন নিয়ে যায়।

যখন একটি ধর্মীয় আন্দোলন অরাজনৈতিক একটি মতাদর্শ কিংবা চর্চার কথা বলে, তখন স্বভাবতই তার জনপ্রিয়তা কিংবা আবেদন মানুষের মধ্যে বেশি থাকবে; যদিও এই আধুনিক বিশ্বে কোনো কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। তাবলিগ জামাতের ক্ষেত্রে ঠিক এ ঘটনাটি ঘটেছে।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বোঝা দরকার, আর সেটি হলো, পশ্চিমা অনেক দেশেই, বিশেষ করে ইউরোপে তাবলিগ জামাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মুসলমানদের ধর্মচর্চার সহায়ক একটি পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে। বিভিন্ন ধরনের গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে পশ্চিমা দেশগুলোতে একসময় নামাজ পড়ার মতো মসজিদ ছিল না। তাবলিগ জামাত মসজিদ তৈরি করার মধ্য দিয়ে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করেছে। ফলে পশ্চিমা দেশে তাবলিগ জামাত মুসলমান সমাজে অন্য রকম একটি ভূমিকা পালন করে, যা মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোতে দেখা যায় না। এখানে আমরা বাংলাদেশের কথা বলতে পারি, যেখানে তাবলিগ জামাতের ভূমিকা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে ভিন্ন রূপে উপস্থিত।

আরও পড়ুন

যেভাবেই আমরা দেখি না কেন, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে তাবলিগ জামাত প্রতিনিয়ত তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে চলেছে, যদিও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা তাবলিগ জামাতের মধ্যে একটি বিভক্তি নিয়ে আসছে। তারপরও তার জনপ্রিয়তা যে খুব কমে যাচ্ছে, সে কথা এখনই বলা খুব মুশকিল। তাবলিগ জামাত এত যে জনপ্রিয়, তখন সাধারণ মানুষের মনে এই প্রশ্ন জাগা খুবই স্বাভাবিক যে কেন এই জনপ্রিয়তা?
জনপ্রিয়তার পেছনে একটি বড় কারণ হলো, তাবলিগ জামাত তার সদস্যদের নিজ মতাদর্শে আত্তীকরণ করতে পারছে বা তাদের ধরে রাখতেও পারছে। এই ধরে রাখার পেছনে বেশ কিছু সচেতন বা অবচেতন প্রায়োগিক বিষয় কাজ করে। এই প্রায়োগিক বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য যেমন একরকম, আবার বিশ্বের অন্য কোনো দেশের জন্য অন্য রকম। যদি আমরা বাংলাদেশের কথা বিবেচনা করি, তাহলে দেখতে পাই যে তাবলিগ জামাতের অরাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার যে দাবি, সেটি সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি তাৎপর্যপূর্ণ আগ্রহ তৈরি করে। কেননা, অধিকাংশ মানুষ ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মেলাতে চান না; বরং এই দুটি বিষয়কে তাঁরা আলাদা রাখতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তাই যখন একটি ধর্মীয় আন্দোলন অরাজনৈতিক একটি মতাদর্শ কিংবা চর্চার কথা বলে, তখন স্বভাবতই তার জনপ্রিয়তা কিংবা আবেদন মানুষের মধ্যে বেশি থাকবে; যদিও এই আধুনিক বিশ্বে কোনো কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। তাবলিগ জামাতের ক্ষেত্রে ঠিক এই ঘটনাটি ঘটেছে।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় যে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো, তাবলিগ জামাতের ইহজাগতিক বিষয়গুলোর চেয়ে পরকালের বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করার প্রবণতাও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করে। এই দুটি বিষয় সেই শুরু থেকেই খুব সচেতনভাবে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত।

সূত্র: তাবলিগ জামাত: বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিসরে, বুলবুল সিদ্দিকী, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৯

আরও পড়ুন