ইসলামের ফরজ বিধান জাকাত
জাকাত আরবি শব্দটির অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। ইসলামে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় দান অর্থেই জাকাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কোনো মুসলমানের ধনসম্পদ থেকে তার নিজের ও পরিবারের সারা বছরের প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর পর নির্ধারিত পরিমাণে অবশিষ্ট থাকলে এবং ওই ধনসম্পদ তার মালিকানায় এক বছর মেয়াদে স্থায়ী থাকলে বছর পূর্ণ হওয়ার পর সেই সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ শরিয়া-নির্ধারিত খাতগুলোয় প্রদান করাকে জাকাত বলা হয়। যে পরিমাণ ধনসম্পদ থাকলে জাকাত দান ফরজ হয় ইসলামি পরিভাষায় তাকে নিসাব বলা হয়। সামর্থ্যবান মুসলমানের পক্ষে জাকাত দেওয়া ফরজ অর্থাৎ অবশ্যকর্তব্য।
ইসলামে ইমান এবং সালাত বা নামাজের পরই জাকাতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে সালাতের পাশাপাশি জাকাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে। বস্তুত, জাকাত প্রদান দাতার মনকে ধনসম্পদের প্রতি লোভ থেকে মুক্ত ও পবিত্র করে। ধনীদের ধনসম্পদে গরিব-মিসকিনদের অধিকার রয়েছে—এই সত্যকেও তা প্রতিষ্ঠিত করে। যেমন পবিত্র কোরআনের সুরা জারিয়াতের ১৯ আয়াতে বলা হয়েছে, আর তাদের (সম্পদশালীদের) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত বঞ্চিতদের হক রয়েছে। এভাবে জাকাতের মাধ্যমে সামর্থ্যবানদের ধনসম্পদের কিছু অংশ ব্যয়ের ফলে তাদের অবশিষ্ট ধনসম্পদ পবিত্র হয়।
সুরা তওবার ১০৩ আয়াতে বলা হয়েছে, তুমি ওদের ধনসম্পদ থেকে সদকা আদায় করো, এর দ্বারা তুমি তাদের পবিত্র করে দেবে। জাকাত শব্দের অপর অর্থ বৃদ্ধি। বস্তুত, জাকাত প্রদান করলে ধনসম্পদ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা রুমের ৩৯ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ধনসম্পদ বৃদ্ধির জন্য তোমরা যা সুদে উপরন্তু, দিয়ে থাকো তা আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য জাকাত দাও, তাদের ধনসম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।’
সূত্র: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ‘যার যা ধর্ম’, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা।
* মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান: প্রয়াত সাবেক প্রধান বিচারপতি, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা