কোরআন কীভাবে পড়া উচিত
কীভাবে কোরআন পড়তে হয়, তার একটি ভালো উদাহরণ দেখা যাক।
কোরআনের একটি আয়াত রাসুল (সা.)–এর সাহাবি হজরত আবু দারদা (রা.)-কে উজ্জীবিত করেছিল! সুরা বাকারার ২৪৫ আয়াতে আছে, ‘কে সে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে? আল্লাহ তার জন্য এ বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন আর আল্লাহ জীবিকা কমান ও বাড়ান এবং তোমাদের তাঁর কাছেই ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’
হজরত আবু দারদা (রা.) এই আয়াত শুনে বিস্ময়ের সঙ্গে নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আল্লাহ আমাদের কাছে ধার চাচ্ছেন?’
নবীজি (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ।’
আবু দারদা (রা.) বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার হাতটি দিন, আমি কথা দিচ্ছি আমার খেজুরবাগানটি ধার দেব।’
আবু দারদা (রা.) নবীজি (সা.)-কে ৬০০টি খেজুরগাছে ভরভরন্ত সবচেয়ে ভালো খেজুরবাগানটি দিয়ে দিলেন।
আবু দারদা (রা.)-র অনেকগুলো বাগান ছিল, তিনি ধনী ছিলেন। তিনি তাঁর সবচেয়ে উত্তম বাগানটিতে গেলেন, যেখানে তাঁর পরিবার নিয়ে থাকতেন। তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘সবকিছু গুছিয়ে নাও, আমরা এই বাগান ছেড়ে চলে যাচ্ছি। এই বাগান এখন আর আমাদের নয়। কারণ, বাগানটি আমি উত্তম ঋণ হিসেবে আল্লাহকে দিয়েছি।’ কথা শুনে স্ত্রী বুঝলেন, বাগানটি উত্তম ঋণ হিসেবে আল্লাহকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে যা আছে, সেসব আর তাঁদের নয়। তাই তিনি শিশুসন্তানদের হাতে যে খেজুরগুলো ছিল, সেগুলো নিয়ে নিলেন। তাদের মুখে যে খেজুরগুলো ছিল, সেসবও বের করে রেখে দিলেন। একেবারে শূন্য হাতে শিশুসন্তানদের নিয়ে তিনি বাগান থেকে বের হয়ে গেলেন।
এই হচ্ছে আল্লাহকে পেতে চাওয়ার তীব্র আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রকৃত মানে, অর্থাৎ কোরআনের মর্মবাণী বুঝতে পারা। কোরআনে যে আদেশ–নিষেধ আছে, তা মেনে নেওয়া এবং বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কোনো বাধাকে অগ্রাহ্য করা।
নবীজি (সা.) আবু দারদা (রা.)-র প্রতিশ্রুতির কথা শোনার পরে বলেন, ‘আবু দারদা (রা.)-র জন্য জান্নাতে এমন অনেকগুলো বাগান আছে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)
কোরআনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। শুধু কোরআন খতম করাই অনেকের উদ্দেশ্য থাকে। তাদের চিন্তা একটাই—কোনো রকমে দ্রুত কোরআন খতম করা। কিন্তু কোরআন কেবল এ কারণেই অবতীর্ণ হয়নি। একে জানা ও বোঝা কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কল্যাণকর কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো বোঝার চেষ্টা করে আর বোধশক্তিসম্পন্নরা এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ২৯)