আমার ছেলেকে বাঁচতে দিন
হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কথা হয়তো অনেকেই শুনেছি। তিনিই সেই শাসক, যিনি মোহাম্মদ বিন কাশিমের নেতৃত্বে সিন্ধু অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। তাঁর সময়ই প্রথমবারের মতো ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রবেশ করেছিল।
তবে শাসক হিসেবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের অনেক দুর্নাম রয়েছে। তিনি ছিলেন খুবই কঠিন প্রকৃতির লোক। ইসলামি সাম্রাজ্যের ভিত্তি মজবুত করার কৃতিত্ব তাঁর থাকলেও তিনি অসংখ্য মানুষকে নির্বিচার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। অনেক সাহাবি তাঁর বিরোধিতা করে শহীদ হয়েছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
তবে নির্দয় প্রকৃতির হলেও কোরআন ও হাদিসের প্রতি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের অগাধ ভালোবাসা ছিল। কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়, তিনি ছিলেন কোরআনে হাফেজ। অর্থাৎ কোরআন সম্পর্কে তাঁর ভালোই জানাশোনা ছিল। এমনও ঘটনা পাওয়া যায়, কেউ তাঁকে কোরআন ও হাদিসের তথ্য দিয়ে অবাক করতে পারলে তিনি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত মাফ করে দিতেন।
একদিনের ঘটনা। একবার হাজ্জাজ বিন ইউসুফ একজন যুবকের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করলেন। এমন সময় সেখানে যুবকের মা উপস্থিত হলেন। তিনি নানাভাবে হাজ্জান বিন ইউসুফকে অনুরোধ করতে লাগলেন যেন তাঁর ছেলেকে মাফ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে ঘোষণা হয়ে গেছে, এখন আর পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
হঠাৎ ছেলেটির মা হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে ডেকে বলল, ‘আমি তোমাকে সেই সত্তার শপথ করে বলছি যিনি প্রথম অর্ধেকে ‘কাল্লা’ ব্যবহার করেননি। তুমি আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও।’
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এই কথা শুনে অবাক হলেন। তিনি যুবকের সাজা স্থগিত করার নির্দেশ দিলেন। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন, তা পরিষ্কার করে বলুন।’
এবার যুবকের মা বললেন, ‘আমি আপনাকে সেই সত্তার দোহাই দিয়েছি, যিনি কোরআনের প্রথম অর্ধেকে ‘কাল্লা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি।’
‘কাল্লা’ শব্দটি হলো কোরআনের একটি না-বোধক শব্দ। ‘মোটেই নয়’, ‘কখনোই নয়’—এ ধরনের অর্থ বোঝাতে ‘কাল্লা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, এই শব্দটি কোরআনের প্রথম অর্ধেকে অর্থাৎ প্রথম ১৫ পারায় খুঁজে পাওয়া যায় না। ১৬তম পারায় গিয়ে সুরা মরিয়মে এই শব্দটি প্রথমবারের মতো খুঁজে পাওয়া যায়।
এই আশ্চর্যজনক তথ্যটি শুনে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ অবাক হয়ে গেলেন। তিনি এই মায়ের কোরআন সম্পর্কে জ্ঞান দেখে অবাক না হয়ে পারলেন না। তিনি সেই মায়ের কথা রাখলেন এবং ছেলের শাস্তি মওকুফ করে দিলেন।
এ ঘটনা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে আমাদের পূর্বপুরুষেরা ইসলাম ও কোরআন সম্পর্কে কত গভীর জ্ঞান রাখতেন। কোন শব্দটি আল্লাহ কুরআনে কোথায় এবং কতবার ব্যবহার করেছেন, সেটাও তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে স্মরণ রাখতেন।
ইসলামের শাসকেরা কোরআনের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তা এই ঘটনা থেকে জানা যায়। তাঁরা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত ক্ষমা করে দিতেন কোরআনের ওপর ভরসা করে। কোরআনের প্রতি এই ভালোবাসা ও কোরআন অনুযায়ী চলার কারণে মুসলিমরা বিশ্বের পরাশক্তি হতে পেরেছিল।
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ