হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর বন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন
ইবরাহিম (আ.) বিশিষ্ট নবীদের একজন, যিনি ‘আল খলিল’ বা ‘খলিলুল্লাহ’ (বন্ধু/আল্লাহর বন্ধু) উপাধিতে ভূষিত হন। পবিত্র কোরআনের ২৮টি সুরায় তাঁর উল্লেখ আছে। এতে তাঁর সম্বন্ধে তাঁর পিতা আজরের মূর্তিপূজার বিরোধিতা, এক আল্লাহর অস্তিত্বের কথা প্রচার এবং তাঁর নবী হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। ইরাকের মেসোপটেমিয়ায় বসবাসকারী যে উর সম্প্রদায়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, তারা মূর্তি ও গ্রহ-নক্ষত্রের পূজা করত। ‘আল্লাহই একমাত্র উপাস্য এবং তাঁর কোনো অংশীদার নেই’
আপন সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে এ কথা প্রচার করলে তিনি তাঁর পিতা ও আত্মীয়স্বজনের তরফ থেকে প্রবল বিরোধিতার মুখোমুখি হন। তাঁকে গৃহত্যাগ করতে হয় এবং একপর্যায়ে বাদশাহ নমরুদ তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন। কিন্তু আল্লাহর অসীম মহিমায় সেই অগ্নিকুণ্ড ফুলের বাগানে পরিণত হয়। স্ত্রী হাজেরার গর্ভে তাঁর প্রিয় পুত্র ছিলেন ইসমাইল। সে সময় পৌত্তলিকেরা তাদের ঈশ্বরকে তুষ্ট করার জন্য পশু এমনকি মানুষ বলি দিত। ইবরাহিম (আ.) মনে করলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁকেও তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটিকেই উৎসর্গ করতে হবে।
ইবরাহিম (আ.)-এর আনুগত্য পরীক্ষার জন্য আল্লাহর তরফ থেকেও এ মর্মে প্রত্যাদেশ করা হয়। হজরত ইবরাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইলকে সে কথা জানালে তিনি বিনা দ্বিধায় আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি হতে রাজি হয়ে যান। অতঃপর ইবরাহিম (আ.) পুত্রকে কোরবানি দিতে উদ্যত হলে আল্লাহ তাঁকে নিবৃত্ত করেন এবং বলেন, ‘তুমি তো ঠিকই আল্লাহর আদেশ পালন করেছ।’ ইসমাইলের পরিবর্তে তখন দুম্বা কোরবানি দেওয়া হয়। সেই ঘটনার স্মরণে এবং চরম উৎসর্গের মনোভাব ও আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে এখনো ঈদুল আজহার দিনে মুসলমানরা সারা পৃথিবীতে পশু কোরবানি করে। হজরত ইসমাইল (আ.) ও পরে ইবরাহিম (আ.)-এর অপর স্ত্রী সারার গর্ভে জন্ম নেওয়া আরেক পুত্র হজরত ইসহাক (আ.) দুজনই নবীর মর্যাদা লাভ করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.)-ই মক্কায় পবিত্র কাবা ঘর নির্মাণ করেন।
সূত্র: `ইবরাহিম (আ.)'যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪