জীবনে একবার হলেও যে নামাজ পড়তে বলেছেন নবীজি (সা.)

নফল নামাজগুলোর মধ্যে ‘সালাতুত তাসবিহ’ একটি অনন্য ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত, যা গুনাহ মাফ ও আত্মশুদ্ধির জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। সালাতুত তাসবিহ অর্থ তসবি পাঠের নামাজ। আমরা আল্লাহর প্রশংসাবাচক যে-শব্দগুলো জপমালায় সকাল-সন্ধ্যা জপি, তাকেই তাসবিহ বা প্রচলিত শব্দে তসবি বলে। এই নামাজে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ তসবি বারবার পড়া হয়।

 সালাতুত তসবির নিয়মিত আমল একজন মুমিনকে গুনাহ থেকে পবিত্র করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথ সুগম করে।

 জীবনে অন্তত একবার হলেও সালাতুত তসবি পড়তে হয়। এ নামাজের সুসংবাদ নবীজি (সা.) তাঁর চাচাকে দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বরাতে হাদিসে আছে, একদিন নবীজি (সা.) আমার পিতা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.)-কে বললেন, চাচাজান, আমি কি আপনাকে উত্তম তসবি শিক্ষা দেব না, যখন আপনি তা সম্পাদন করবেন, আল্লাহ আপনার পূর্বাপর, নতুন-পুরাতন, ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ছোট-বড় সকল প্রকার পাপ ক্ষমা করবেন। তা হলো, চার রাকাত নামাজ। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা এবং পরে একটি সুরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে কিরাত পড়া হলে দাঁড়ানো অবস্থায় পনেরো বার বলবেন, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’। তারপর রুকু করবেন এবং রুকু অবস্থায় পড়বেন দশবার। রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়াবেন এবং এ-অবস্থায় তসবি পড়বেন দশবার। তারপর সেজদায় নত হবেন এবং দশবার তসবি পড়বেন। তারপর সেজদা থেকে মাথা তুলে (দুই সেজদার মধ্যবর্তী সময়ে) তসবি দশবার পড়বেন। তারপর আবার সেজদায় যাবেন এবং সে-অবস্থায় দশবার তসবি পড়বেন। তারপর (দ্বিতীয়) সেজদা থেকে মাথা তুলে আরও দশবার তসবি পড়বেন। এভাবে প্রতি রাকাতে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ তাসবিহটি ৭৫ বার পড়া হবে।

চার রাকাত নামাজের প্রতি রাকাতে এভাবে করবেন। যদি প্রতিদিন একবার এই নামাজ পড়তে পারেন, পড়বেন। না হলে প্রতি জুমার দিন একবার পড়বেন। তা-ও না পারলে প্রতি মাসে একবার। তা-ও না হলে বছরে একবার। এবং তা-ও যদি না পারেন তবে জীবনে অন্তত একবার পড়বেন। (আবু দাউদ: ১২৯৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৭)

আরও পড়ুন

সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

এই নামাজ ৪ রাকাত। ৪ রাকাত একত্রে বা দুই রাকাত করেও পড়া যায়। ৪ রাকাতে মোট ৩০০ বার পড়তে হয় ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ তাসবিহটি। তাসবিহ পাঠের বিস্তারিত পদ্ধতি হলো:

 ১.নামাজে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতেহা পড়ার আগে তসবি পড়ুন ১৫ বার।

২.সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা মেলানোর পর রুকুর আগে তাসবি পড়ুন ১০ বার।৩.রুকুতে গিয়ে রুকুর তসবি পড়ার পর এ তসবি পড়ুন ১০ বার।

৪.রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় এ তসবি ১০ বার।

৫.সেজদায় গিয়ে সেজদার তসবি পড়ার পর সেজদাবস্থায় এ তসবি পড়ুন১০ বার।

৬.দুই সেজদার মাঝে বসা অবস্থায় এ তসবি পড়ুন ১০ বার।

৭. দ্বিতীয় সেজদায় গিয়ে সেজদার তসবি পড়ার পর আবার সেজদা অবস্থায় এ তসবি পড়ুন ১০ বার।

 এভাবে প্রতি রাকাতে মোট ৭৫ বার এবং ৪ রাকাতে মোট ৩০০ বার সালাতুত তসবি নামাজের নির্ধারিত তসবি পড়া হবে।

 কোথাও তসবি পড়তে ভুলে গেলে বা ভুলক্রমে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে-রোকনে স্মরণ আসুক, তার সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে ভুলে যাওয়া সংখ্যা আদায় করে নিতে হবে। কোনো কারণে ‘সাহু সেজদা’ ওয়াজিব হলে সেই সেজদা এবং তার মধ্যবর্তী বৈঠকে তসবি পাঠ করতে হবে না। তসবির সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙুলের কর গণনা করা যাবে না।

আরও পড়ুন

সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফজিলত

রাসুল (সা.) বলেছেন, এই নামাজে গুনাহ মাফ হয়, এমনকি গুনাহ সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হলেও। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১,২৯৭)।

এই নামাজ যেকোনো সময় পড়া যায়, তবে অন্য নামাজ পড়ার নিষিদ্ধ সময়গুলোতে, অর্থাৎ সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও ঠিক দুপুরের সময়ে পড়া যাবে না। বিশেষত রাতের বেলা বা তাহাজ্জুদ নামাজের সময় পড়া উত্তম।

নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। ‘সালাতুত তাসবিহর ৪ রাকাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি’ এটা ভেবে নামাজ শুরু করলেই হবে।

আরও পড়ুন