আল্লাহ যেভাবে বান্দার পাপকে ক্ষমা করেন
একবার মহানবী (সা.)-এর কাছে আয়াত নাজিল হলো। সুরা নিসার ১২৩ নম্বর আয়াত, ‘না তোমাদের আশা, না আহলে কিতাব, অর্থাৎ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের আশা কোনো কাজে আসবে। যে মন্দ কাজ করবে, তাকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে। আর সে আল্লাহ ছাড়া কোনো সাহায্যকারী পাবে না।’
আয়াতটির মধ্য দিয়ে যেন আল্লাহ বোঝাতে চাইছেন, খারাপ কাজ করে বাঁচার কোনো উপায় নেই, শাস্তি পেতেই হবে।
আয়াতটি যখন নাজিল হলো, তখন আবু বকর (রা.) কাছেই ছিলেন। তিনি আয়াতটি শুনে ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল যেন আমার মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। আমি আর কখনো দাঁড়াতে পারব না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা সবাই তো কিছু না কিছু পাপ করেছি। আমাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গুনাহের জন্যও কি শাস্তি দেওয়া হবে? আমাদের কি বাঁচার কোনো পথ নেই?’
মহানবী (সা.) তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, পাপ করলে শাস্তি পেতেই হবে। তবে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের ক্ষমার ব্যবস্থাও করে রেখেছেন। যখনই দুনিয়ায় কেউ কোনো দুঃখকষ্টের শিকার হয়, তার বিনিময়ে তার পাপগুলো ক্ষমা হয়ে যায়। আর আল্লাহ যখন তার বান্দার কল্যাণ চান, তখন তাকে বেশি বেশি কষ্টে ফেলেন, যাতে সে পবিত্র হয়ে আল্লাহর কাছে আসতে পারে। এটাও আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় নিয়ামত।
এই হাদিস থেকে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জানা যায়। দুনিয়ায় অনেক মানুষ সামান্য কষ্টের শিকার হলেই ভেঙে পড়ে। সামান্য কিছু হলেই সে হতাশ হয়ে যায়, অনেকে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। অথচ হাদিস থেকে জানা যায়, বিশ্বাসীদের ওপর আরোপিত যেকোনো কষ্ট—হোক তা ক্ষুদ্র একটি কাঁটার আঁচড় অথবা মনের কষ্ট—এর জন্য তার গুনাহগুলো ঝরে যায়। সে আগে করা পাপগুলো থেকে পবিত্র হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত কষ্টের দিনগুলোয় হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর ওপর এই ভরসা রাখা যে এর বিনিময়ে আমাদের পাপগুলো তিনি ক্ষমা করে দেবেন।
আরেকটি বিষয় এই হাদিস থেকে শেখা যায়, আল্লাহর শাস্তির কথা শুনলে ভীত হওয়া উচিত। আল্লাহর নবীদের পর সাহাবিরাই ছিলেন সবচেয়ে নিষ্পাপ। তাঁরা সরাসরি নবীদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। তাঁরাও আল্লাহর শাস্তির কথা শুনতে ভীত হয়ে যেতেন।
আবু বকর (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। মহানবী (সা.) নিজেই এক হাদিসে বলেছেন, ‘আবু বকরের ঋণ আমি দুনিয়ায় পরিশোধ করতে পারব না।’ অথচ তিনিও আল্লাহর শাস্তির কথা শুনে ভীত হয়েছিলেন। আসলে আল্লাহ তাআলা কোরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি তাঁদের পছন্দ করেন, যাঁরা আল্লাহকে ভয় করে চলেন, যাঁরা মুত্তাকি।
এই ভয়ের ফলে তাঁরা গুরুতর পাপ থেকে দূরে থাকতে পারেন। শেষ পর্যন্ত যাঁদের পাপ দুনিয়ায় ক্ষমা করা না হয়, তাঁকে কবরে শাস্তি ভোগ করতে হবে। বান্দা একদম পাপমুক্ত হয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হন। এভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করে থাকেন।
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ