শত্রুদের প্রতি আলী (রা.)-র সংযত প্রতিবাদ
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)। তিনি ছিলেন মহানবী (সা.)-এর চাচাতো ভাই এবং জামাতা। তাঁর ব্যাপারে আমাদের নবী মোহাম্মদ (সা.) নিজেই বলেছেন, ‘আমি যদি হই জ্ঞানের নগরী, তবে আলী হলো সেই নগরীর প্রবেশপথ।’
আলী (রা.) সেই সাহাবি, হিজরতের রাতে যখন মহানবী (সা.)-কে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়, তখন তিনি ঝুঁকি নিয়ে মহানবীর কামরায় শুয়েছিলেন। খায়বার যুদ্ধে বীরত্বের ফলে তাঁকে ‘আসাদুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর সিংহ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল।
হজরত ওসমান (রা.)-র হত্যার পর তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পান। মুসলিম জাহান তখন কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। দেশে ভেতরে ও বাইরে শত্রুর কোনো অভাব ছিল না। সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো, কে শত্রু আর কে মিত্র, তা বোঝা দুঃসাধ্য ছিল।
আলী (রা.) ক্ষমতায় এসে ঘোষণা করলেন, উসমান (রা.)-এর হত্যার বিচার করা হবে কিন্তু তার আগে দেশের পরিস্থিতি শান্ত হোক। কিন্তু অনেক সাহাবি চাইছিলেন, আগে হজরত উসমান (রা.)-র হত্যার বিচার করা হোক। তাঁদের একজন ছিলেন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)। তিনি ছিলেন উসমান (রা.)-এর চাচাতো ভাই।
এরই মধ্যে শত্রুরা চক্রান্ত করে আলী (রা.) আর মুয়াবিয়া (রা.)-এর মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিল।
শেষ পর্যন্ত আলী (রা.) আর মুয়াবিয়া (রা.) যখন শান্তি চুক্তি করতে বসলেন, তখন আলী (রা.)-র পক্ষের একদল লোক বিদ্রোহ ঘোষণা করল। তাঁদের বলা হতো ‘খারেজি সম্প্রদায়’। খারেজিদের হাতেই আলী (রা.) শাহাদাতবরণ করেছিলেন।
আলী (রা.)-এর শেষ সময়ে এই খারেজিরা তাঁকে নিয়ে খুবই বাজে মন্তব্য করত। তাঁর দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলত। আলী (রা.) পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা খারাপ ভাষায় কথা বলত। একজন খলিফা হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনো তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা প্রদর্শন করেননি।
একবার আলী (রা.) মসজিদে এসে ফজরের নামাজে দাঁড়ালেন। তিনি তকবির দিয়ে মাত্র নামাজ শুরু করেছেন আর পেছন থেকে এক লোক বলে উঠল, ‘তোমার আর তোমার পূর্ববর্তীদের ওপর আদেশ জারি করে হয়েছে, যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করো, তাদের সব ইবাদত বাতিল হয়ে যাবে।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৬৫)
অর্থাৎ লোক যেন আলী (রা.)-কে বলতে চাইল, তুমি তো শিরক করেছ। নামাজ পড়ে তোমার কোনো লাভ হবে না।
এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, খারিজিরা কোন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তারা কী পরিমাণ মানসিক অত্যাচারের ভেতর আলী (রা.)-কে ফেলছিল। কোরআনের আয়াত দিয়ে তারা আলী (রা.)-কে আক্রমণ করছিল।
এই কথা যখন বলা হলো, তখন আলী (রা.) মাত্র সুরা ফাতিহা পাঠ শেষ করেছেন। ফাতিহার পর তিনি সুরা রুম-এর শেষ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘অতঃপর আপনি ধৈর্য রাখুন। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। যারা বিশ্বাসী নয়, তারা আপনাকে বিচলিত করতে পারবে না।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৬০)
আলী (রা.) যেন নিজেকেই বললেন, তারা যতই কোরআন পড়ুক, তারা আসলে বিশ্বাসী নয়। তাদের কথায় বিচলিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ আলী (রা.) তাঁর নামাজের মধ্যেই এই লোককে সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন।
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ