এটি ঈদের দিন, কিন্তু হাজিদের জন্য কোনো ঈদ নেই। যাঁরা হজ করছেন না, আজ তাঁদের ঈদের দিন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে সূর্যোদয়ের আগেই মিনার উদ্দেশে এজেন্সির লোকদের সঙ্গে রওনা হন।
মুজদালিফায় সাতটি পাথর কুড়িয়ে নিজের কাছে রাখুন। কারণ, এগুলো আপনাকে জামারাতে নিক্ষেপ করতে হবে। মিনায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে নিন; কিছু খেয়েও নিতে পারেন।
এবার সবাই মিলে ‘বড় শয়তান’ বা ‘জামারাত আল আকাবা’কে পাথর মারার পালা—এটি ওয়াজিব। মিনা থেকে জামারাতের দূরত্ব খুব বেশি নয়। তবে আপনার তাঁবু নম্বর যত ছোট, আপনি জামারাতের তত কাছে, এটা বলা যায়। পাথর সাতটি নিয়ে ‘জামারাত আল আকাবা’র সামনে গিয়ে হাতের পাথর নিক্ষেপের আগে বলুন, ‘আল্লাহু আকবার’।
তারপর পাথর মারা শুরু করুন। প্রতিটি পাথর মারার আগে বলুন, ‘আল্লাহু আকবার’। দূর থেকে মারুন, কাছে যাওয়ার দরকার নেই। আর রেগে অনেক জোরে মারারও দরকার নেই। তবে আপনার পাথর বা নুড়ি জামারার ওয়ালে বা বাউন্ডারির ভেতরে পড়লেই চলবে।
আজ শুধু ‘বড় শয়তান’কে পাথর নিক্ষেপ করবেন, বাকিগুলোকে নয়।
পাথর নিক্ষেপের পর থেকে তালবিয়া পড়া বন্ধ করুন আর শুরু করুন তাকবির পড়া, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’
অর্থ: আল্লাহ সর্বশক্তিমান আল্লাহ সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ সর্বশক্তিমান, সব প্রশংসা তাঁরই জন্য।
এবার মিনার তাঁবুতে ফিরে যান।
হাদি বা পশু কোরবানি করুন, এটি ওয়াজিব। আপনার এজেন্সি অবশ্যই এ ব্যাপারে আপনাদের নিশ্চিত করবে। অনেক এজেন্সির প্যাকেজে এই হাদি অন্তর্ভুক্ত না-ও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে থেকে আপনাদের মক্কায় হাদি বুথে গিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের রিয়াল জমা দিয়ে স্লিপ নিতে হবে। ব্যস, এটা করলেই হলো; আপনার হাদি হয়ে যাবে।
এবার পুরুষেরা মাথা মুণ্ডন আর নারীরা আগের মতো একটু ছাঁটবেন; এটি ওয়াজিব। এই কাজ আপনি মিনায় করতে পারেন, অনেকে মক্কায় গিয়ে করে থাকেন। আপনাকে বাস বা ট্যাক্সিতে করে অথবা হেঁটে মক্কা যেতে হবে। রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড় থাকে।
চুল ছাঁটার পর আপনি ইহরাম ত্যাগ করতে পারেন। গোসল করুন, পরিষ্কার হয়ে স্বাভাবিক কাপড় পরুন। এখন ইহরামের নিষেধগুলো উঠে গেছে। শুধু স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা যাবে না।
এরপরের কাজ মক্কা গিয়ে তাওয়াফ করা।
তাওয়াফ করুন—তাওয়াফ আল ইফাদা বা জিয়ারাহ—এটি হজের তৃতীয় ফরজ।
তবে এবার ‘ইজতিবা’ করার প্রয়োজন নেই, বাকি নিয়ম সব একই থাকবে।
তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করুন আগের নিয়মে।
সাঈ করুন, এটি ওয়াজিব। সাঈ শেষে মিনায় ফিরে যান; আগামী দুই বা তিন রাত সেখানে থাকতে হবে। মিনায় ফিরে প্রতি ওয়াক্তে জামাতে কসর নামাজ আদায় করুন (২+২+২+৩+২)।
১১ জিলহজ
তাকবির পড়তে থাকুন।
২১টি পাথর বা নুড়ি সংগ্রহ করুন (অনেকে ছোট একটি পানির বোতলে মুজদালিফা থেকেই এই নুড়িগুলো নিয়ে আসুন)।
জোহরের নামাজ শেষে তিনটি জামারাতেই পাথর নিক্ষেপ করতে হবে আজ (৭টি+৭টি+৭টি)—এটি ওয়াজিব; আর এটি করতে হবে আজ সূর্যাস্তের আগে যেকোনো সময়ে।
মেজ ও ছোট জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে মন খুলে দোয়া করুন; রাসুল (সা.) তা-ই করেছিলেন। তবে বড় শয়তানকে মারার পর এটি করার দরকার নেই।
এরপর মিনায় ফিরে যান। মিনায় রাত যাপন করুন।
১২ জিলহজ
তাকবির পড়তে থাকুন।
গত দিন যা করেছেন (পাথর নিক্ষেপ), তা আবার করুন।
আজকের দিনে চাইলে আপনি মিনা ছেড়ে যেতে পারেন; তবে সেটি সূর্যাস্তের আগে হতে হবে। যদি সেটা না করতে পারেন, তাহলে আরও একটি রাত মিনায় থাকতে হবে।
এই কাজগুলো শেষ করে আপনি এখন মক্কায় আপনার হোটেলে ফিরে যেতে পারেন। তবে এখনো একটি ওয়াজিব বাকি রয়ে গেছে, যা মক্কা ছাড়ার আগে শেষ কাজ হবে আপনার জন্য:
তাওয়াফুল বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করুন—এটি ওয়াজিব; তবে এ ক্ষেত্রে সাঈ করতে হবে না। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এটি সম্পন্ন করলেই আপনার হজ সমাপ্ত হয়েছে।