কোরআন পাঠের আগে প্রস্তুতি
কোরআন তিলাওয়াত শুরু করার আগেই কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে তিলাওয়াত করা হচ্ছে, মনে এটা স্থির করতে হবে।
তিরমিজির একটি হাদিসে আছে, জাহান্নামকে উদ্বোধন করা হবে তিন ব্যক্তির মাধ্যমে। যাদের একজন সেই কোরআন পাঠকারী, যে মানুষের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরআন পাঠ করত। এ জন্য মনের লক্ষ্যস্থির করা এবং সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
মুখের পরিচ্ছন্নতা
মুখ অপরিচ্ছন্ন থাকলে তিলাওয়াতের আগে ভালোমতো পরিষ্কার করে নেওয়া উত্তম। হজরত আলী (রা.) বলেন, আমাদের মিসওয়াক করতে (দাঁত পরিষ্কার করতে) আদেশ করা হয়েছে।
নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মুখকে কোরআনের জন্য পরিষ্কার-পবিত্র করো।
শরীরের পবিত্রতা
কোরআনের কপি স্পর্শ না করে মুখস্থ তিলাওয়াত করার জন্য ওজুর প্রয়োজন নেই। তবে কোরআন স্পর্শ করে পড়তে চাইলে অবশ্যই ওজু করতে হবে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্র না হয়ে কেউ কোরআন স্পর্শ করবে না।’ (ইমাম মালিক, আল-মুয়াত্তা: ৪৬৮; ইমাম ইবনু হিব্বান)
অবশ্য গোসল ফরজ থাকা অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করে বা না করে কোনোভাবেই তিলাওয়াত করা যাবে না।
গোসল ফরজ অবস্থায় কেবল নিজেকে হেফাজত ও নিরাপদ রাখার জন্য কোরআন স্পর্শ না করে সুরা ফালাক, সুরা নাস, আয়াতুল কুরসি, সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ইত্যাদি পড়া যাবে।
আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করা
তিলাওয়াতের শুরুতে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়া আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং, যখন তুমি কোরআন পড়ো, তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৯৮)
কোরআন পড়ার উদ্দেশ্য ঠিক করা
কোরআন পড়লে প্রতি হরফে ১০ নেকি, এমনকি না বুঝে পড়লেও (সুনান তিরমিজি: ২৯১০)। আল্লাহ বলেছেন, ‘কোরআন অবতীর্ণ করি যা বিশ্বাসীদের জন্য উপশম ও দয়া’ (সুরা বনী ইসরায়েল, আয়াত: ৮২)
আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘আমি এ কল্যাণকর কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো বোঝার চেষ্টা করে আর বোধশক্তি–সম্পন্নরা এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ২৯)
বলা হয়েছে, ‘এ কল্যাণময় কিতাব আমি অবতীর্ণ করেছি, সুতরাং তোমরা ওর অনুসরণ করো ও সাবধান হও, হয়তো তোমাদেরকে দয়া করা হবে।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৫৫)
আল্লাহ বলেন, ‘যদি আমি এই কোরআনকে পর্বতের ওপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে আল্লাহর ভয়ে নুয়ে পড়েছে ভেঙে পড়েছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য উপস্থিত করেছি। যাতে তারা চিন্তা করে।’ (সুরা হাশর, আয়াত: ২১) কোরআন পড়ার সময় কোরআনের এই মহত্ত্ব মনে জাগিয়ে রাখতে হবে।
তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে তিলাওয়াত নয়
নবী (সা) বলেন, যখন তোমাদের কেউ রাতে নামাজ পড়ার কারণে জিহ্বায় কোরআন এমনভাবে জড়িয়ে আসে যে সে কী পড়ছে তা টের পায় না, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে। (ইমাম মুসলিম)