জাকাতের হিসাব যেভাবে করতে হয়
যে পরিমাণ ধনসম্পদ থাকলে জাকাত ফরজ হয়, ইসলামি পরিভাষায় তাকে বলা হয় নিসাব। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অন্তত নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকতে হবে। সম্পদের নিসাব হলো সোনা সাড়ে সাত ভরি, রুপা সাড়ে বায়ান্ন ভরি অথবা এর কোনো একটির সমমূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসার পণ্য।
বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার, মানি অর্ডার, শেয়ার সার্টিফিকেট, কোম্পানি শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি মানি, জামানত, প্রাইজবন্ড, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদি বিমার মতোই কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা আমানত, চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, মেয়াদি সঞ্চয়, কিস্তিতে জমা, এফডিআর, ফিক্সড ডিপোজিট, পোস্টাল সঞ্চয়ী, বিশেষ সঞ্চয়, পেনশন স্কিম ও প্রভিডেন্ট ফান্ড, স্বেচ্ছা প্রভিডেন্ট ফান্ড, ডিভিডেন্ড (জাকাতের হিসাব তারিখে এসব নগদায়ন করলে যা পাওয়া যাবে); ফেরত পাওয়ার যোগ্য প্রদত্ত ঋণ, ব্যবসার পণ্য ও মূল্যবান শোপিস বা মূল্যবান পাথর হীরা-জহরত, মণি-মাণিক্য, মুক্তা ইত্যাদি সম্পদের আওতায় পড়বে।
ব্যবসায়িক নার্সারি, হর্টিকালচার, বীজ উৎপাদন খামার, কৃষি খামার, বনজ বৃক্ষ খামার, ফলদ বৃক্ষ খামার, ঔষধি গাছের খামার, চা-বাগান, রাবার বাগান, তুলাবাগান, রেশম বাগান, আগরগাছের বাগান, অর্কিড নার্সারি ও ফুল বাগান, মুরগির খামার, মাছের খামার ইত্যাদি এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সামগ্রী ইত্যাদিকে বর্তমান বাজারের বিক্রয়মূল্যের হিসাবে ধরতে হবে।
অর্থসম্পদ যেদিন নিসাব পর্যায়ে পৌঁছাবে, সেদিন থেকেই জাকাতের বর্ষগণনা শুরু হবে। নিসাব পরিমাণ এবং এর বেশি সম্পদের মালিককে তার জাকাতযোগ্য সব সম্পদের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর আড়াই শতাংশ (৪০ ভাগের ১ ভাগ) হারে দিতে হয়। সামর্থ্যবান মুসলমানের পক্ষে জাকাত দেওয়া ফরজ।
সোনা, রুপা, নগদ টাকা ও ব্যবসায়িক পণ্য—এই তিন খাতে জাকাতের বর্ষপূর্তি বা জাকাতের হিসাব সমাপনী দিনে যত সম্পদ থাকবে, তার পুরোটারই জাকাত দিতে হবে। বছরের মধ্যে যেকোনো সময় সম্পদপ্রাপ্তি ঘটলে, বছর শেষে জাকাত দিতে হবে। প্রতি বছর একই তারিখে জাকাতের হিসাব করতে হয়।
বিক্রির জন্য না রাখা স্থাবর সম্পদ, জায়গাজমি, বাড়ি ও গাড়ি জাকাত হিসাবে পড়বে না। বিক্রির জন্য রাখা গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি বর্তমান বাজারদরে জাকাতের হিসাবে আসবে। সে দাম হিসাব করে প্রতিবছর জাকাত দিতে হবে।
যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসা–প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির মালিকদের সম্পদ আলাদা আলাদা হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। কেউ এর নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে বা তার অন্য সম্পদসহ নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাকে জাকাত দিতে হবে, না হলে নয়। যৌথ মালিকানায় কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান সম্মিলিত সম্পদ থেকে জাকাত দিলে আবার সে সম্পদের জাকাত দিতে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে মালিকদের বা অংশীদারদের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে। কোম্পানির কোনো অংশীদারের সম্পদ যদি নিসাব পরিমাণে না হয় অথবা তার অন্যান্য সম্পদের সঙ্গে এ সম্পদ মিলেও নিসাব পরিমাণ না হয়, তাহলে তার জন্য জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। কারণ তিনি নিজেই জাকাত গ্রহণের যোগ্য।
মালিক নিসাব হলেও সব অংশীদারের জাকাত বর্ষের শুরু ও শেষ এক নাও হতে পারে।
জাকাতের হিসাব থেকে তাৎক্ষণিক এবং কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ঋণের চলমান কিস্তির পরিমাণ অর্থ বাদ যাবে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া কোনো উদ্যোক্তার সম্পদের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি হলেও তাঁকে ওই তিন খাতের সমুদয় সম্পদেরই জাকাত দিতে হবে। কারণ তাঁর ব্যবসায়িক ঋণকে প্রকৃত ঋণ হিসেবে গণ্য করে তার সম্পদ থেকে বাদ দেওয়া হলে তিনি দেউলিয়া হিসেবে নিজেই জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বলে পরিগণিত হবেন