ইসলাম হিংসাকে নিষিদ্ধ করেছে

অন্যের সুখ, শান্তি ও ধন–সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে নিজে এর মালিক হওয়ার বাসনাকে আরবিতে হাসাদ বা হিংসা বলা হয়। ইসলাম অন্যের প্রতি হিংসা করাকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে।

মানুষের চরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ অন্যতম। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে বিষময় করে তোলে। যে হিংসা করে, তার অন্তর কালিমায় পূর্ণ হয়ে যায়।

মানুষের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের স্থলে সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সতর্ক করে বলেছেন, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সে জন্য কি তারা তাদের ঈর্ষা করে?’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৪)

আরও পড়ুন

হিংসা-বিদ্বেষ এক ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি। সম্পদের মোহ ও পদমর্যাদার লোভ-লালসা থেকে হিংসা-বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়। হিংসা-বিদ্বেষ মুমিনের ভালো কাজকে নষ্ট করে ফেলে। তাই নবী করিম (সা.) সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। কেননা, হিংসা মানুষের নেক আমল বা পুণ্যগুলো এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ (আবু দাউদ)

হিংসা মানুষকে অধঃপতনে নিয়ে যায়। ঈর্ষাকাতরতা হিংসার পর্যায়ে চলে গেলে আক্রোশবশত মানুষ হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলতে পারে। হিংসুক ব্যক্তি অন্যের ভালো কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। কাউকে কোনো উন্নতি বা ক্ষমতায় অভিষিক্ত দেখলে অন্তরে জ্বালা অনুভব করে।

নানা কারণে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির প্রতি হিংসা প্রকাশ করে থাকে। দৈনন্দিন জীবনে হিংসার বহুবিধ কারণের মধ্যে আছে পারস্পরিক ঈর্ষা, শত্রুতা, দাম্ভিকতা, নিজের অসৎ উদ্দেশ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা, ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বেঁচে থাকবে, কেননা এরূপ ধারণা জঘন্যতম মিথ্যা। আর কারও দোষ অনুসন্ধান করবে না, কারও গোপনীয় বিষয় অন্বেষণ করবে না, একে অন্যকে ধোঁকা দেবে না, পরস্পর হিংসা করবে না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করবে না, পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করবে না, বরং তোমরা সবাই এক আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

আরও পড়ুন

কোনো কারণে কারও প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ধরে রাখার নাম বিদ্বেষ। ইসলামে পারস্পরিক বিদ্বেষ পোষণ করাও নিষেধ।

 হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তিন ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় না, তার মধ্যে একজন হচ্ছে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ–পোষণকারী ব্যক্তি।’ হিংসা-বিদ্বেষের কঠিন পরিণতি সম্বন্ধে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমলগুলো পেশ করা হয় এবং সব মুমিন বান্দার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়; কিন্তু যাদের পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ও দুশমনি আছে, তাদের ক্ষমা করা হয় না।’ (মুসলিম শরিফ)

পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করা। বিশ্বের সব সৃষ্টির সেবা ও জনকল্যাণ কামনাই হলো ইসলামের অনুশীলন। নিজের যা কিছু আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অন্যের দিকে তাকিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করে হিংসার আগুনে জ্বলেপুড়ে ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই।

আরও পড়ুন

হিংসা থেকে বাঁচার দোয়া

পরম করুণাময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে।

১. বলো, ‘আমি শরণ নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধীশ্বরের, মানুষের উপাস্যের, তার কুমন্ত্রণার অমঙ্গল হতে, যে সুযোগমতো আসে ও সুযোগমতো সরে পড়ে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য থেকে বা মানুষের মধ্য থেকে।’ (সুরা নাস,কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)।

২. বলো, ‘আমি শরণ নিচ্ছি উষার স্রষ্টার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অমঙ্গল হতে; অমঙ্গল হতে রাত্রির, যখন তা গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়। অমঙ্গল হতে সেসব নারীর যারা গিটে ফুঁ দিয়ে জাদু করে। এবং অমঙ্গল হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।’ (সুরা ফালাক, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)।

আরও পড়ুন