সুরা নাবার সারকথা
সুরা নাবা পবিত্র কোরআনের ৭৮তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ২ রুকু ও ৪০ আয়াত। মক্কাবাসী পুনরুত্থান সম্পর্কে তর্কবিতর্ক করতে থাকলে এ সুরা অবতীর্ণ হয়। এ সুরায় মহাসংবাদ বা কিয়ামতের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
বিচারের দিনটি অবশ্যই আসবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা পরস্পরকে কী জিজ্ঞাসা করছে? সেই মহাসংবাদ সম্বন্ধে, যে বিষয়ে তারা একমত হতে পারে না? তারা তা শিগগিরই জানতে পারবে; অবশ্যই তারা জানতে পারবে। আমি কি পৃথিবীকে বিস্তৃত করিনি আর পর্বতকে করিনি কীলকস্বরূপ? আমি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আমি বিশ্রামের জন্য তোমাদেরকে নিদ্রা দিয়েছি, রাতকে করেছি আবরণস্বরূপ এবং
দিবসকে করেছি জীবিকা আহরণের সময়। আমি তোমাদের ওপরে সুস্থিত সপ্ত (আকাশ) নির্মাণ করেছি এবং প্রোজ্জ্বল দীপ সৃষ্টি করেছি। আমি মেঘমালা হতে মুষলধারে বৃষ্টিপাত করি, তা দিয়ে উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ ও ঘনসন্নিবিষ্ট উদ্যান। বিচারের দিন নির্ধারিত আছে। সেদিন শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে ও তোমরা দলে দলে জমায়েত হবে। আকাশ ফেটে গিয়ে সেখানে বহু ফাটল দেখা দেবে। আর পাহাড়-পর্বত উন্মূলিত হয়ে মরীচিকার মতো দেখাবে।’ (আয়াত: ১-২০)
অবিশ্বাসীদের পরকালীন দুর্দশার উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন, ‘(সেদিন) জাহান্নাম প্রতীক্ষায় থাকবে। তা হবে সীমালঙ্ঘনকারীদের আশ্রয়স্থল, যেখানে তারা যুগ যুগ ধরে থাকবে। সেখানে তারা কোনো ঠান্ডা জিনিস ভোগ করবে না, পানীয়ও নয়, স্বাদ নেবে কেবল ফুটন্ত পানি ও পুঁজের। এটাই উপযুক্ত প্রতিফল। কারণ, তারা হিসাবের ভয় পেত না আর তারা জোরের সঙ্গে আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছিল। সবকিছু আমি লিখে রেখেছি। সুতরাং স্বাদ নাও; তোমাদের শাস্তিই শুধু বৃদ্ধি করা হবে।’ (আয়াত: ২১-৩০)
বিশ্বাসীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘সাবধানীদের জন্য আছে সাফল্য, বাগান, দ্রাক্ষা, সমবয়স্কা নারী ও পূর্ণ পানপাত্র। সেখানে তারা অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না। এ পুরস্কার, যথার্থ দান তোমার প্রতিপালকের।’ (আয়াত: ৩১-৩৬)
এই সুরাকে মোটাদাগে ৭টি অংশে ভাগ করা যায়। সুরার প্রথম অংশে অদেখা আখিরাত সম্পর্কে অবিশ্বাসীদের বিদ্রূপের জবাব দিয়েছেন আল্লাহ। দ্বিতীয় অংশে মানুষের চোখের সামনে দেখা আল্লাহর সৃষ্টির যোগ্যতা, বড়ত্ব বর্ণনা করে মানুষের সৃষ্টির সঙ্গে আল্লাহর সৃষ্টির তুলনা করেছেন। তৃতীয় অংশে আল্লাহ আখিরাত সম্পর্কে আবার বলেছেন। চতুর্থ অংশে আজাবের ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পঞ্চম অংশে মূলত আখিরাতে অবিশ্বাসী মানুষের পরিণতির কারণ বর্ণিত হয়েছে। ষষ্ঠ অংশে আখিরাতে বিশ্বাসী, বিশ্বাসীদের পরিণতি বর্ণিত হয়েছে। সপ্তম অংশে আখিরাতের পরম সত্যতা বর্ণনা করা হয়েছে।