যে সাহাবি দ্বিতীয়বার ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন

মহানবী (সা.) এর হিজরতের কিছুদিন আগের ঘটনা। মক্কাবাসীদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মুসলিমরা হিজরতের সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল। একমাত্র ইয়াসরিবই (বর্তমান মদিনা) হিজরতের আদর্শ জায়গা। ইয়াসরিববাসী মহানবী (সা.)-কে আগে থেকেই অনুরোধ করছিলেন চলে আসার জন্য।

মহানবী (সা.) নিজের কথা না ভেবে আগে বাকিদের বললেন হিজরতের প্রস্তুতি নিতে। তিনি যাবেন সবার শেষে।

হিজরত করা মানে অনেকের ভিটেমাটি, সহায়-সম্পত্তি, স্ত্রী-পুত্র, এমনকি মা-বাবাকেও ফেলে যেতে হবে। কেবল আল্লাহর দ্বীনকে পালন করার জন্য এত বড় ত্যাগ।

এমনই একটি ঘটনা হাদিস থেকে পাওয়া যায়। হজরত ওমর (রা.) কিছু সাহাবিকে নিয়ে হিজরতের সিদ্ধান্ত নিলেন। মক্কায় থাকাটা এখন অনেক বড় ঝুঁকি হয়ে যাচ্ছে। অনেক সাহাবিকে অত্যাচার করে বাধ্য করা হচ্ছিল ইসলাম ত্যাগ করার জন্য। হজরত বেলাল (রা.)-কে মরুভূমির গরম বালুতে ফেলে রাখা হয়েছিল। কিছু সাহাবিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন

হজরত ওমর (রা.) তাঁর কাছের দুই সাহাবি আয়াজ ইবনে আবু রাবিয়া (রা.) এবং হিশাম ইবনুল আসের (রা.)-কে বললেন, ‘আগামীকাল আমরা বের হচ্ছি। সবাই এই স্থানে আসবে। যে বেশি দেরি করবে, তাঁকে ছেড়েই আমাদের রওনা দিতে হবে।’

পরদিন হজরত ওমর (রা.) এসে দেখলেন, শুধু আয়াজ (রা.) যথাসময়ে এসেছেন। জানা গেল, হিশাম ইবনুল আসের (রা.)-কে তাঁর পরিবার বাধ্য করেছে ইসলাম ছেড়ে দিতে। তিনি আর আসতে পারবেন না।

শেষ পর্যন্ত দুই বন্ধু রওনা দিলেন মদিনার উদ্দেশে। কিছুদিনের মধ্যে তাঁরা মদিনার কাছাকাছি কুবা নামক জায়গায় পৌঁছে গেলেন। সেখানে তাঁদের পরিচিত একটি গোত্র বসবাস করত। সেখানেই তাঁরা রাত কাটালেন।

এদিকে আবু জাহেলের কানে সংবাদ পৌঁছাল। আয়াজ (রা.) ছিলেন আবু জাহেলের সৎভাই। তার ভাই ইসলাম গ্রহণ করে পালিয়ে যাবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আবু জাহেল ও তাঁর সহচর হারিস ইবনে হিশাম দ্রুত কুবায় পৌঁছালেন।

আরও পড়ুন

আবু জাহেল হজরত আয়াজ (রা.) বলতে লাগলেন, ‘তোমার মা শপথ নিয়েছে, সে তোমাকে না দেখা পর্যন্ত চিরুনিতে হাত দেবে না। সে রোদের মধ্যে নিজেকে রেখে শাস্তি দিচ্ছে আর তোমার কথা বলছে। অন্তত তার কথা ভেবে ফিরে চল আমাদের সঙ্গে।’

আয়াজ (রা.)-এর মায়ের কথা মনে পড়ল। হজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘তাদের কথার ফাঁদে পা দিয়ো না। তারা তোমাকে ইসলাম থেকে বের করতে চাচ্ছে।’

হজরত আয়াজ (রা.) বললেন, ‘আমি শুধু যাব আর চলে আসব। তা ছাড়া, আমার কাছে কিছু টাকাও অবশিষ্ট ছিল, যেগুলো আমি ফেলে এসেছি। সেগুলো আনা গেলে মদিনায় গিয়ে কষ্ট করতে হবে না।’

হজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘সূর্যের উত্তাপ একটু বাড়লেই তোমার মা ঘরে ঢুকে যাবে। আর আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমার সঙ্গে চললে আমার অর্ধেক সম্পদ তোমার নামে করে দেব। তুমি তো জানো মক্কায় আমার ভালোই সম্পদ আছে।’

হজরত আয়াজ (রা.) বললেন, ‘তুমি চিন্তা করো না। আমি আমার ভাইদের সঙ্গেই যাচ্ছি। আমি মায়ের সঙ্গে দেখা করেই চলে আসব।’

আরও পড়ুন

এরপর ওমর (রা.) হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে, তবে আমার এই উট নিয়ে যাও। এটি অনেক দ্রুত দৌড়াতে পারে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে চলে আসবে। আর ভুলেও উটের পিঠ থেকে নামবে না।’

হজরত আয়াজ (রা.) ওমর (রা.)-এর উট নিয়ে রওনা হলেন। পথে আবু জাহেল তাঁর সঙ্গে খুবই ভালো আচরণ করলেন। হঠাৎ আবু জাহেল বলে উঠলেন, ‘আরে, তোমার উট দেখছি আমাদের আগে চলে যাচ্ছে। তুমি একটু নিচে নেমে আসো। আমাদের উটগুলি তোমার উটের সঙ্গে বেঁধে রাখি, তাহলে দ্রুত যাওয়া যাবে।’

হজরত আয়াজ (রা.) ওমর (রা.)-এর উপদেশ ভুলে গেলেন। নিচে নামতেই তাঁকে আবু জাহেল ও তাঁর সঙ্গীরা মিলে বেঁধে ফেলল। তাঁকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য করা হলো।

ওমর (রা.) বলেন, ‘আমরা যখন মদিনা থেকে এই খবর জানতে পারলাম, তখন আমাদের মনে আর কোনো আশা নেই। যাঁরা একবার জেনে-বুঝে ইসলাম ত্যাগ করবে, তাঁদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত।’

আরও পড়ুন

এরপর একদিন সুরা জুমার ৫৩ আয়াত নাজিল হলো, ‘হে আমার বান্দারা, যাঁরা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তাই শাস্তি আসার পূর্বেই তোমরা তোমাদের রবের দিকে ফিরে আসো, তার অনুগত হয়ে যাও।’

ওমর (রা.) বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে এই আয়াত লিখে হিশাম ও আয়াজকে পাঠালাম।’

হিশাম (রা.) বললেন, ‘আমি পত্র খুলে দেখলাম, শুধু এই বাক্যটি ছাড়া আর কিছুই লেখা নেই। আমি বুঝে ফেললাম আল্লাহ-তাআলা আমাদের জন্য এই আয়াত নাজিল করেছেন। আমি আর আয়াজ সেদিনই একটি উট নিয়ে মদিনায় চলে এসেছিলাম এবং ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম।’

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

আরও পড়ুন