জবান ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ইমানের আমল
আগের পর্বে আমরা ইমানের শাখা–প্রশাখা কত রকম এবং বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত বা সম্পর্কিত ইমানের শাখা-প্রশাখাগুলো কী, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা ইমানের তিন ধারার শাখা–প্রশাখার মধ্যে বাকি দুটি ধারা নিয়ে আলোচনা করব।
খ. জবান বা স্বীকৃতির সঙ্গে জড়িত শাখা-প্রশাখাগুলো হলো:
১. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা তাওহিদের স্বীকৃতি প্রদান করা। (সুরা ফাতির, আয়াত: ৩; বুখারি, হাদিস: ৯; মুসলিম, হাদিস: ৩৫)
২. পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা। (সুরা আনফাল, আয়াত: ২)
৩. দ্বীনি ইলম বা জ্ঞানার্জন করা। (সুরা জুমার, আয়াত: ৯; বুখারি, হাদিস: ৭১; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৪)
৪. দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া ও দ্বীনের প্রচার করা। (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১১০; বুখারি, হাদিস: ৫০২৭-২৮)
৫. দোয়া-প্রার্থনা করা। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬; তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৭১)
৬. আল্লাহর জিকির করা। (সুরা রাদ, আয়াত: ২৮; বুখারি, হাদিস: ৬৪০৭)
৭. অনর্থক কথা বলা ও শোনা থেকে বিরত থাকা। (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৩, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৯৭৬)
গ. শরীর, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা আমলের সঙ্গে জড়িত শাখা-প্রশাখাগুলো হলো:
১. পবিত্রতা অর্জন করা। (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬; মুসলিম, হাদিস: ৪৪১)
২. নিয়মিত নামাজ আদায় করা। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৩; সুরা নিসা, আয়াত: ৭৭; মুসলিম, হাদিস: ৮২)
৩. জাকাত আদায় করা ও দান-সদকা করা (সুরা বাইয়িনাহ, আয়াত: ৫; বুখারি, হাদিস: ২৯)
৪. রমজানের রোজা রাখা। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩; বুখারি, হাদিস: ২১)
৫. হজ পালন করা। (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ৯৭; সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৬; মুসলিম, হাদিস: ১)
৬. রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৫; বুখারি, হাদিস: ২০২৬)
৭. হিজরত করা। (সুরা নাহল, আয়াত: ৪১)
৮. আল্লাহর নামে মান্নত করলে, তা পূর্ণ করা। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭০; বুখারি, হাদিস: ৬৬৯৬)
৯. আল্লাহর নামে বৈধ কসম করলে, তা আদায় করা। (বুখারি, হাদিস: ৬১০৮)
১০. কসম ভাঙলে, তার কাফফারা আদায় করা। (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৮৯)
১১. শরীর আবৃত রাখা। (সুরা আরাফ, আয়াত: ২৬; মুসলিম, হাদিস: ৩৩৮)
১২. কোরবানি দেওয়া। (সুরা কাউসার, আয়াত: ২; তিরমিজি, হাদিস: ১৫০৭)
১৩. মৃত ব্যক্তির জানাজা আদায় ও দাফন-কাফন করা। (বুখারি, হাদিস: ১২৪০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫৪১)
১৪. ঋণ পরিশোধ করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করা। (বুখারি, হাদিস: ২৩৮৯)
১৫. ধোঁকা পরিহার করা। (মুসলিম, হাদিস: ১০২)
১৬. সত্য সাক্ষ্য গোপন না করা। (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭২; বুখারি, হাদিস: ২৬৫৪)
১৭. সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করা। (বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬; মুসলিম, হাদিস: ১৪০০)
১৮. হক বা অধিকার আদায় করা। (মুসলিম, হাদিস: ২৫৮১)
১৯. পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩; মুসলিম, হাদিস: ৮৫)
২০. সন্তানদের সঠিকভাবে লালন ও পালন করা। (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬; মুসলিম, হাদিস: ২৬৩১)
২১. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত: ২২; বুখারি, হাদিস: ২০৬৭)
২২. মনিবের আনুগত্য করা। (মুসলিম, হাদিস: ১৩৩)
২৩. ন্যায়বিচার করা। (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৮; সুরা হুজরাত, আয়াত: ৯)
২৪. মুসলিম জামাতে শামিল থাকা এবং উম্মতের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি না করা (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১০৩; মুসলিম, হাদিস: ১৮৪৮)
২৫. মুসলিম খলিফা বা নেতার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৭১০৩)
২৬. ঝগড়াবিবাদের মীমাংসা করা। (সুরা হুজরাত, আয়াত: ৯; তিরমিজি, হাদিস: ২৫০৯)
২৭. ভালো কাজে সহায়তা করা। (সুরা মায়িদা, আয়াত: ২; বুখারি, হাদিস: ২৪৪৪)
২৮. সৎ কাজে আদেশ করা ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা। (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১০৮-১১০; মুসলিম, হাদিস: ৪৯)
২৯. শরিয়ত প্রবর্তিত শাস্তির বিধান বাস্তবায়ন করা। (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৩৩-৩৪; সুরা নুর, আয়াত: ২)
৩০. প্রয়োজন অনুযায়ী জিহাদ করা। (সুরা হজ, আয়াত: ৭৮; বুখারি, হাদিস: ১৫১৯)
৩১. আমানত রক্ষা করা এবং তা সঠিকভাবে আদায় করা। (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৮; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৫৩৪)
৩২. অভাবী ও ঋণগ্রস্তদের ঋণ দেওয়া। (বায়হাকি, শুআবুল ইমান, হাদিস: ৩২৮৫)
৩৩. প্রতিবেশীর হক আদায় করা। (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬; তিরমিজি, হাদিস: ১৯৪৩)
৩৪. হালালভাবে রুজি উপার্জন করা এবং ভক্ষণ করা। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৭২; সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৫১; বায়হাকি, শুআবুল ইমান, হাদিস: ৯২০৩)
৩৫. শরিয়তের বিধান মেনে আয়-ব্যয় সমন্বয় করা। (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৬৭)
৩৬. সালাম দেওয়া এবং সালামের উত্তর দেওয়া। (সুরা নিসা, আয়াত: ৮৬; আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮১৫)
৩৭. কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা। (মুসলিম, হাদিস: ২৯৯২ ও ৫৭৭৬; বুখারি, হাদিস: ১২৪০)
৩৮. অনর্থক কাউকে কষ্ট না দেওয়া এবং কারও কোনো ক্ষতি না করা। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৮; সুরা হুজরাত, আয়াত: ১১)
৩৯. অবৈধ খেলাধুলা ও রং-তামাশা থেকে বেঁচে থাকা। (সুরা জুমা, আয়াত: ১১, মুসলিম, হাদিস: ৫৬৯৯)
৪০. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৫৭)
মিরাজ রহমান: লেখক ও গবেষক