বদর যুদ্ধের ইতিহাস: বদর যুদ্ধক্ষেত্রে একটি দিন

এই সেই ঐতিহাসিক বদর প্রান্তর

আজ ১৭ রমজান। এ দিন সংঘটিত হয়েছিল বদরের যুদ্ধ। ইসলামের ইতিহাসে দিনটির গুরুত্ব বিশেষ। ২ হিজরির ১৭ রমজান মদিনার মুসলমান এবং মক্কার অমুসলমানদের মধ্যে এ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের আগে চলে বেশ কিছু খণ্ডযুদ্ধ। তবে বদরের যুদ্ধ ছিল দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম বড় আকারের যুদ্ধ।

ইসলামের এই প্রথম সামরিক যুদ্ধে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলমান বাহিনী বিজয়ী হয়। এই বিজয় অন্যদের কাছে এই বার্তা পৌঁছায় যে মুসলমানরা আরবে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর ফলে নেতা হিসেবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবস্থান দৃঢ় হয়।

মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পুরোনো রাস্তায় যাওয়ার পথে বদরের প্রান্তর পড়ে। আধুনিকভাবে নির্মিত রাস্তায় অনেক কম সময়ে মদিনা পৌঁছানো যায়।

হজের পরে এক শুক্রবার মদিনার যাওয়ার পথে পড়ল বদরের প্রান্তর। সেখানে বেশ কয়েকটি পুরোনো বাড়ি। কোনোটির দরজা আছে, ছাদ নেই। কোনোটির আবার ছাদ আছে, কিন্তু দরজা নেই। বালুময় দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে ছুটে চলছে গাড়ি।

গাড়িচালক এক সময় জানালেন, আমরা আবুজার গাফফার উপত্যকা অতিক্রম করছি।

এর কিছুক্ষণ পরে বদর উপত্যকার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে একজন বললেন, ‘এটা মালাইকা পাহাড়।’ সড়কের দুই পাশে উঠেছে আধুনিক দালান। আরও একটু এগিয়ে যেতেই সামনে হাতের বাঁ পাশে একটি বড় শ্বেত পাথর।

লেখকের পেছনের এই নাম ফলকে বদরযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সাহাবীদের নাম লেখা রয়েছে।

বদরযুদ্ধে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা সেখানে খোদাই করে রাখা হয়েছে। দেখা গেল, তালিকায় ১৪ জনের নাম রয়েছে। অনেকেই ছবি তুললেন। শহীদদের নামফলকের পাথরটির উল্টো দিকেই বদরের যুদ্ধক্ষেত্র। দেয়াল দিয়ে জায়গাটা ঘিরে রাখা। গাড়ি এগিয়ে ডান দিকে ঘুরে সামান্য সামনে নিয়ে গেল। সেখানে মসজিদে আরিস।

মহাসড়কের দুই পাশে ধু ধু বালি। মাঝেমধ্যে বালুর টিলা ও পাহাড়। ধু ধু বালুতে চোখ অবসন্ন হয়ে আসে। গাড়ি ছুটে সাঁই সাঁই করে। থামার কোনো নামগন্ধ নেই।

আরও প্রায় ৩০-৪০ মিনিট পরে গাড়িচালক বললেন, সামনে একটা মিষ্টি পানির কুয়া আছে। নাম ‘বিরে শিফা’। এটি ছিল দূষিত ও বিষাক্ত পানির কুয়া। পরে রাসুল (সা.) এখানে থুতু নিক্ষেপ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে এটি সুপেয় পানির কুয়ায় পরিণত হয়। আমরা সবাই নেমে পড়লাম। অনেকেই বোতল নিয়ে পানি পান করছে। আমরাও পানি পান করলাম।

বদরের যুদ্ধ হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে পরিচালনা করেন। আল আরিশ পাহাড়ের পাদদেশে মুসলিম বাহিনীর শিবির স্থাপিত হলো। তাই পানির কুয়াগুলো তাদের আয়ত্তে ছিল। আর নবী করিম (সা.) সৈন্য সমাবেশের জন্য এমন একটি জায়গা বেছে নেন, যেখানে সূর্যোদয়ের পর যুদ্ধ হলে কোনো মুসলমান সৈন্যের চোখে সূর্যকিরণ পড়বে না।

প্রাচীন আরব রেওয়াজ অনুযায়ী প্রথমে মল্লযুদ্ধ হয়। অমুসলিমদের সেনাসংখ্যা ছিল এক হাজার। আর ছিল একশটি ঘোড়া, ছয়শ লৌহবর্ম এবং অসংখ্য উট। অমুসলিমদের সেনাপতি ছিলেন ওতবা বিন রবিআ। যুদ্ধে সত্তর জন অমুসলিম নিহত হন এবং বন্দীও হন সত্তর জন।

মুসলমানদের বাহিনীর সেনাসংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। মুহাজির ছিলেন ৮২ জন, বাকি সবাই আনসার। আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন। মুসলিমদের উট ও ঘোড়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭০টি ও ২টি। যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শহীদ হন।

এই যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল নবীজি (সা.)-এর প্রধান শত্রু আবু জাহেলের নিহত হওয়া। এ প্রসঙ্গে দুই কিশোরের অসম সাহসিকতা নিয়ে একটি বীরত্বের কাহিনি প্রচলিত আছে।

আরও পড়ুন