নিয়তের কারণে মানুষ আমলের নেকি পাবে
ইসলামের চমৎকার একটি দিক হলো নিয়ত। নিয়তের কারণে মানুষ আমলের নেকি পাবে, যদিও সেই আমলটি কোনো কারণে না করতে পারে।
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বরাতে একটি হাদিস আছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ–তাআলা ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দা কোনো গুনাহের কাজ করার নিয়ত করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোনো গুনাহ লিপিবদ্ধ কোরো না। তবে সে যদি গুনাহের কাজটি করে ফেলে, তাহলে কাজটির অনুপাতে তার গুনাহ লেখো। আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য একটি নেকি লিপিবদ্ধ করো। সে যদি কোনো নেকির কাজ করার জন্য ইচ্ছা বা নিয়ত করে, কিন্তু এখনো তা করেনি, তাহলে তার জন্য একটি নেকি লিপিবদ্ধ করো। আর যদি কাজটি সে করে, তাহলে তার জন্য ১০ গুণ থেকে (আন্তরিকতা অনুপাতে) ৭০০ গুণ পর্যন্ত নেকি লিপিবদ্ধ করো।’ (সহিহ বুখারি)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি নিয়ত করল, ‘আমি রাতে অবশ্যই সদাকা (দান) করব।’ তারপর সে তার সদকা নিয়ে বের হলো এবং (অজান্তেই) এক অসতী নারীর হাতে সেই সদকা দিয়ে দিল। সকাল হলে লোকজন বলাবলি শুরু করল, ‘গত রাতে অসতীকে সদকা দেওয়া হয়েছে।’ এ কথা শুনে দানকারী বলল, ‘হে আল্লাহ! অসতীকে সদকা দেওয়ার ব্যাপারেও আপনারই প্রশংসা। আমি (রাতে আবার) সদকা করব।’ তারপর সে তার সদকা নিয়ে বের হলো এবং একজন ধনী ব্যক্তির হাতে দিয়ে দিল। যখন সকাল হলো, তখন লোকজন বলাবলি শুরু করল, ‘গত রাতে ধনী এক লোককে সদকা দেওয়া হয়েছে!’ এ কথা শুনে দানকারী বলল, ‘হে আল্লাহ! ধনীকে সদকা দেওয়ার ব্যাপারেও আপনারই প্রশংসা। আমি অবশ্যই (রাতে আবার) সদকা করব।’ এরপর সে (পরের রাতে) সদকা নিয়ে বের হলো এবং তা একজন চোরের হাতে দিয়ে দিল। যখন সকাল হলো, তখন লোকজন বলতে শুরু করল, ‘গত রাতে চোরকে সদকা দেওয়া হয়েছে!’ এ কথা শুনে দানকারী বলল, ‘হে আল্লাহ! অসতী, ধনী ও চোরকে সদকা দেওয়ার ব্যাপারে আপনারই প্রশংসা।’ এরপর তাকে বলা হলো, ‘তুমি যা সদকা করেছ, তা কবুল করা হয়েছে। সম্ভবত তোমার সদকার কারণে অসতী নারী তার অন্যায় থেকে ফিরে আসবে, ধনী ব্যক্তি উপলব্ধি করতে পারবে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে এবং চোর হয়তো তোমার সদকা পেয়ে চুরির কাজ থেকে বিরত থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২,২৫২)
নিয়ত থাকলে আল্লাহ সেটি কবুল করবেন। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে উঠে (তাহাজ্জুদের) নামাজ আদায় করার নিয়তে বিছানায় গেল, কিন্তু ঘুম তাকে কাবু করে ফেলল, এমনকি সকাল (ফজর) হয়ে গেল (উঠতে); তার জন্য তাই লেখা হবে, যা সে নিয়ত করেছিল এবং এই ঘুম তার মহামহিম রবের পক্ষ থেকে সদাকাহ (উপহার) হিসেবে ধরা হবে।’ (ইমাম নাসায়ি আস-সুনান, হাদিস: ১,৭৮৭)
নবী (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি সততার সঙ্গে (আল্লাহর পথে) শহীদ হওয়ার কামনা করবে, আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দেবেন, যদিও সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪,৮২৪)
যেকোনো উত্তম ও কল্যাণমূলক কাজের জন্য নিয়ত করা দরকার। আবার ভ্রান্ত লক্ষ্য পোষণ করা থেকে বেঁচে থাকত হবে।