মানুষ দুনিয়ায় মুসাফির বা পথিক। জান্নাতই মানুষের আসল ঠিকানা বা স্থায়ী নিবাস। ক্ষণস্থায়ী জীবন সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ায় থাকো তুমি পথিক বা মুসাফিরের মতো।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা: ১৩১)
ইতিহাস ও পূর্ববর্তীদের কীর্তি ও পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা মুমিন মুসলমানের কর্তব্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল, তা কি দেখে না? যারা মুত্তাকি, তাদের জন্য পরলোকই শ্রেয়; তোমরা কি বোঝো না?’(সুরা-১২ ইউসুফ, আয়াত: ১০৯)
‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? তাহলে দেখত যে তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছিল। শক্তিতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা প্রবল, তারা ভূমি চাষ করত, তারা তা আবাদ করত, এদের আবাদ করা অপেক্ষা অধিক।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৯)
‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? তাহলে তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল, তা দেখতে পেত। তারা তো এদের অপেক্ষা অধিকতর শক্তিশালী ছিল।’ (সুরা-৩৫ ফাতির, আয়াত: ৪৪)
‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত, এদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে ও কীর্তিতে প্রবলতর। অতঃপর আল্লাহ তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্য এবং আল্লাহর শাস্তি হতে তাদের রক্ষা করার কেউ ছিল না।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ২১)
‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং দেখে না তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল? পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে অধিক প্রবল। তারা যা করত, তা তাদের কোনো কাজে আসেনি।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৮২)
‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং দেখে না তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল? আল্লাহ তাদের ধ্বংস করেছেন এবং অকৃতজ্ঞ কাফিরদের জন্য রয়েছে অনুরূপ পরিণাম।’ (সুরা-৪৭ মুহাম্মদ, আয়াত: ১০)
ইসলামি বিশেষজ্ঞদের মতে, মিথ্যাবাদীদের পরিণতি সম্পর্কে জানতে সব মুসলমানের জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে সামর্থ্য অনুযায়ী সফর করা এবং ভ্রমণ করা কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের পূর্বে বহু বিধান–ব্যবস্থা গত হয়েছে, সুতরাং তোমরা পৃথিবী ভ্রমণ করো এবং দেখো মিথ্যাশ্রয়ীদের কী পরিণাম!’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৭)
‘বলো, “তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো, অতঃপর দেখো, যারা সত্যকে অস্বীকার করেছে, তাদের পরিণাম কী হয়েছিল!”’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১১) ‘সুতরাং পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে, তাদের পরিণাম কী হয়েছে?’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৩৬) ‘বলো, “পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, অপরাধীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছে।”’ (সুরা-২৭ নামল, আয়াত: ৬৯) ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত, এদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে ও কীর্তিতে প্রবলতর। অতঃপর আল্লাহ তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্য এবং আল্লাহর শাস্তি হতে তাদের রক্ষা করার কেউ ছিল না।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ২১) ‘বলো, “তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে!” তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪২)
যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে না, তাদের পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, ‘তাদের যে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা যখন তা বিস্মৃত হলো, তখন আমি তাদের জন্য সবকিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম। অবশেষে তাদের যা দেওয়া হলো, যখন তাতে তারা উল্লসিত হলো, তখন হঠাৎ তাদের পাকড়াও করলাম। ফলে তখনই তারা নিরাশ হলো। অতঃপর জালিম সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হলো এবং সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ৪৪-৪৫)
যারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিরহস্য অবলোকন করে না, তাঁর কুদরত ও শক্তির প্রতি অনুগত হয় না এবং তাঁর বিধান মানে না, তাদের বিষয়ে কোরআন মজিদে রয়েছে, ‘তারা দেশ ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে অবস্থিত হৃদয়।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৪৬) ‘বলো, “তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো, কীভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন? অতঃপর আল্লাহ সৃজন করবেন পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।”’ (সুরা-২৯ আনকাবুত, আয়াত: ২০)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম